হকিতে দর্শক কম থাকার কথাই। কেননা, খেলাটি অনেক বেশি টেকনিক্যাল; সেই সঙ্গে এখন চারটি কোয়ার্টার করাতে খেলাটির প্রতি অনেকেই আগ্রহ হারাচ্ছেন। দুটি কোয়ার্টার দেখার পর অনেকেই মাঠ ছেড়ে চলে যান। তবে পাকিস্তান-ভারতের খেলা ১৯৮৫ সালের দ্বিতীয় এশিয়া কাপে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দর্শক দেখেছিল। যারা দেখেছিল তারা এই বাংলাদেশেরই। এখনও মানুষ মতিঝিলের দিকে এলে একবার হলেও স্টেডিয়ামে ঢুঁ মারে। কোনো কিছুতে আনন্দ পাওয়ার সুযোগ থাকলে মানুষ তাতে আগ্রহী হবেই। মাঠে দর্শক ধরে রাখতে হলে মাঠকে জীবন্ত রাখতে হবে। ফুটবলে এক সময় আগা খান গোল্ড কাপ হতো। এশিয়ার ফুটবল পাওয়ার দেশগুলো আসত। উপচে পড়া ভিড়ে প্রমাণিত হতো, অবসর সময়কে মানুষ কীভাবে ব্যবহার করছে। এখনও ফুটবল হচ্ছে। মানসম্পন্নও, তবে দর্শক মুষ্টিমেয়। মানতে হবে, অনলাইনের সঙ্গে কভিড এ খেলায় দর্শক হারানোয় বড় ভূমিকা রাখছে। দেশে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অন্তর্ভুক্ত ৫০টির ওপরে ফেডারেশন। এর মধ্যে অনেক খেলা কোনো প্রতিযোগিতার আয়োজন না করায় জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ক্রীড়া পরিষদও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে ফেডারেশন পরিণত হয়েছে সান্ধ্য আড্ডার এক সল্ফ্ভ্রান্ত স্থান হিসেবে।
হকিতে অল্প ক'দিন আগে সাজেদ আদেল পাঁচজনের দল করে আরমানিটোলাতে খেলার আয়োজন করে। এতে হকি খেলোয়াড়রা যেমন তাঁদের বসে থাকতে থাকতে জমে যাওয়া হাড্ডিতে খেলার বাতাস লাগাতে পারলেন, তেমনি হকি কোনো না কোনোভাবে উপকৃত হলো। সাজেদ আদেল এ জন্য ধন্যবাদ পেতেই পারে। ক্রীড়া পরিষদ আরও বেশি সজাগ না হলে ক্রীড়াঙ্গন থেকে সফলতা যা কাম্য, তা আসবে না।
ফেসবুকে প্রায়ই বক্সার হালিমের বহু বিজয় দেখি। জাতীয় পরিষদ একটি 'ওয়ালপেপার' করুক, যেখানে এই দেশ-শ্রেষ্ঠদের কীর্তি লাগানো থাকবে। আগ্রহী আর উঠতি তরুণরা তাদের কাছ থেকে ভবিষ্যতের পথ বেছে নিতে পারবে। সেনা, বিমান, নৌ, পুলিশ, আনসার- এসব দল সারাবছর অনুশীলনে থাকে। বাইরের দলগুলোর প্রথম সমস্যা উপযুক্ত খাদ্য। এদের প্রতিদ্বন্দ্বী করে তুলতে হলে সুষম খাদ্য তালিকা আর সাশ্রয়ী মূল্যে তা পাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। আমাদের ক্রিকেট আর ফুটবল বাদে সব ফেডারেশন টাকার অভাবে পছন্দমতো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ। ক্রীড়া এমন এক অবস্থাতে পড়েছে, স্পন্সররা আগাতে চান না। ক্রীড়াঙ্গন এখন হলো 'প্রতিভার দন্তহীন হাসি'। এ থেকে উঠে আসা যাবেই।
যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর প্রতি দাবি থাকবে প্রতি ফেডারেশনে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দে সর্বাত্মক চেষ্টা নেওয়ার। অর্থই যে কোনো কাজ সম্পন্নের শ্রেষ্ঠ অক্সিজেন। ক্রীড়াক্ষেত্রে আমাদের গৌরবোজ্জ্বল অতীত আছে। বর্তমানকে সেই গৌরব ধরে রাখার জন্য সব রকম সহযোগিতা যাতে পাওয়া যায়, সে আশ্বাস থাকতেই হবে। 'তোরা সব জয়ধ্বনি কর/ ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কালবোশেখীর ঝড়'। নতুন সব সময় ইংরেজি তিনটি 'ডি' -ডিসিপ্লিন, ডায়েট ও ড্রাগ মেনে চললে সফলতা ধরা দেবেই।
খেলাধুলার দিকে তরুণ সমাজকে আকৃষ্ট করা গেলে মাদক ও জঙ্গিবাদের ঝুঁকি কমবে। সবাইকে খেলতে হবে; এমনটা নয়। দর্শক হিসেবেও যদি তরুণদের মধ্যে খেলা দেখার আগ্রহ তৈরি করা যায়, তাহলেও এটা ফলদায়ক হবে। একটা সময় ছিল, স্টেডিয়ামের গ্যালারি দর্শকে পরিপূর্ণ থাকত। এখন কেন দর্শক কম হচ্ছে, সে কারণ খুঁজে বের করতে হবে। একই সঙ্গে আবারও দর্শকদের খেলার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।
মেজর (অব.) সাহাবুদ্দিন চাকলাদার: জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত সাবেক অধিনায়ক, জাতীয় হকি দল