৩৪ মিনিট আগে
ছবির ক্যাপশান,
সায়রা বেগম মোবাইল ফোনে তার নিহত সন্তানের ছবি দেখাচ্ছেন। তিনি বলেছেন, প্রশাসন ও আল্লাহর কাছে তিনি এর বিচার চান।
বাংলাদেশে কোরআন অবমাননার কথিত অভিযোগে চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জে বিক্ষোভ থেকে সহিংসতার সময় পুলিশের গুলিতে নিহতদের পরিবারগুলো এসব হত্যার বিচার চাইছে।
তবে তারা নিজেরা কোন মামলা করেনি।
তারা বলছেন, পরিবারের সদস্য হারিয়ে তারা অসহায় হয়ে পড়েছেন।
গত ১৩ই অক্টোবর কুমিল্লায় একটি পূজামণ্ডপে কোরআন পাওয়া যায়। সেদিনই রাতে এর প্রতিবাদে হাজীগঞ্জে বিক্ষোভ ও সহিংসতা হয় এবং পুলিশ তাতে গুলি চালায়।
সেদিনের বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে পাঁচজন নিহত হয়। আহত হয় বেশ কয়েকজন।
নিহতদের মধ্যে দশম শ্রেণির ছাত্র আল আমিনের বাড়ি হাজীগঞ্জের রায়চোঁ নামের গ্রামে।
উপজেলা শহর হাজীগঞ্জের প্রধান সড়ক থেকে তিন কিলোমিটার দূরে সেই গ্রামে তার বাড়িতে আমি যাই। কথা হয় নিহত আল আমিনের মা সায়রা বেগমের সাথে।
তিনি বলেছেন, তার ছেলে স্কুলের পরীক্ষার কিছু কাগজপত্র ফটোকপি করার জন্য উপজেলা শহরে গেলে সেখানে সে পুলিশের গুলিতে মারা যায়।
সায়রা বেগমের বক্তব্য হচ্ছে, তার ছেলে সেই বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেয়নি।
সায়রা বেগম তার ছোট ছেলে আল আমিনকে হারিয়ে মুষড়ে পড়েছেন। তিনি বলেছেন, পুরো পরিবারটিই অসহায় হয়ে পড়েছে।
তিনি দাবি করেছেন, তার ছেলে কোন রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত ছিল না।
সায়রা বেগম বলেছেন, ছেলের মৃত্যুর ঘটনার ব্যাপারে তারা কোন মামলা করবেন না। তবে তারা এর বিচার চান।
"আমরা অসহায় অবস্থায় আছি। আমরা মামলা করবো না। আমরা প্রশাসনের কাছে বিচার চাই এবং আমরা আল্লাহর কাছে এর বিচার চাই," বলেন সায়রা বেগম।
ছবির ক্যাপশান,
হাজীগঞ্জের একটি মন্দিরে ভাঙচুরের চিহ্ন এখনও রয়ে গেছে।
হাজীগঞ্জে সেদিনের ঘটনায় গুলিতে নিহত আরেকজন নবম শ্রেণির ছাত্র ইয়াসিন হোসেন হৃদয়।
তার বাবা ফজলুল হক কুয়েত থেকে তিন মাস আগে দেশে ফিরেছেন।
দুই সন্তানের মধ্যে বড় ছেলের নিহত হওয়ার পর তিনি এখন বিদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত বাদ দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, "আমার ছেলে ঘরেই ছিল। তার সমবয়সী একজন এসে তাকে ডেকে নিয়ে যায়। সে যাওয়ার সময় আমাকে বলেছে, কুমিল্লায় কোরআন অবমাননার বিরুদ্ধে সে মিছিলে যাচ্ছে।"
"সে যাওয়ার ঘণ্টা দেড়েক পড়েই আমি ছেলের মৃত্যুর খবর পাই। আমি এ ব্যাপারে মামলা করবো না। আমি কী আর বলবো-আর কাকেই বা দোষ দেবো!"
আরো পড়তে পারেন:
হাজীগঞ্জের প্রধান রাস্তা বিশ্বরোডে বিক্ষোভকারীরা গত ১৩ই অক্টোবর সন্ধ্যার পর প্রথম জড়ো হয়ে মিছিল বের করে।
এই মিছিল থেকে অল্প দূরত্বেই প্রথম যে মন্দিরে ইট পাথর ছুঁড়ে আক্রমণ করা হয়েছিল, সেখানেই হামলাকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষের একপর্যায়ে পুলিশ গুলি চালালে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
সেই মন্দিরের একজন পুরোহিত অয়ন চক্রবর্তী আক্রমণের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, আকস্মিকভাবে হামলাটি চালানো হয়েছিল।
তিনি বলেন, "মন্দিরে পূজা চলছিল। তাতে নারী শিশুসহ অনেক মানুষ ছিল। এর মধ্যেই একটা মিছিল এসে ইট পাথর ছুঁড়ে আক্রমণ করে।"
সেদিনের বিক্ষোভ এবং সহিংসতার সময় পুলিশের গুলিতে পাঁচজন নিহত হয়। আহতও হয়েছে বেশ কয়েকজন।
পুলিশ কেন সরাসরি গুলি চালিয়েছিল- এই প্রশ্ন তুলেছে নিহতদের পরিবারগুলো।
এই প্রশ্ন নিয়ে কথা হয় চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মিলন মাহমুদের সাথে।
তিনি বলেছেন, পরিস্থিতির ভয়াবহতায় পুলিশ বাধ্য হয়ে গুলি চালিয়েছিল।
"দুই হাজারেরও বেশি লোকের একটা মিছিল এসে মন্দিরে আক্রমণ করেছিল। সেই মন্দিরের ভেতরের মানুষকে রক্ষার জন্য সেদিন পুলিশ বাধ্য হয়ে গুলি চালিয়েছে।
''তা নাহলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতো," বলেন পুলিশ সুপার মি. মাহমুদ।
ছবির ক্যাপশান,
হাজীগঞ্জে বেশ কয়েকটি মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটে।
হাজীগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিলের আগে তার পক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকের পোস্ট দেয়ার বিষয় নিয়ে স্থানীয় লোকজনের মাঝে আলোচনা চলছে।
সেই মিছিলের উদ্যোগের সাথে ছাত্রলীগের কারও কারও জড়িত থাকার অভিযোগও উঠেছে।
তবে এমন অভিযোগ মানতে রাজি নন এলাকার সংসদ সদস্য অবসরপ্রাপ্ত মেজর রফিকুল ইসলাম।
হাজীগঞ্জ আওয়ামী লীগের একজন নেতা আহসান হাবীব বলেছেন, বিক্ষোভ এবং সহিংসতার কৌশল দেখে সেটা পরিকল্পিত বলেই তাদের মনে হয়েছে।
"হামলাকারীরা ১৪/১৫ বছরের ছেলেদের দিয়ে মন্দিরে হামলা করিয়েছিল।
''তারা পুলিশকে একদিকে ব্যস্ত রেখে বিভিন্ন জায়গা দিয়ে হামলা করেছে। ফলে সরকারবিরোধী কোন একটি রাজনৈতিক দল পরিকল্পিতভাবে এটা করেছে," তিনি বলেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগ মিলে হামলাকারীদের প্রতিহত করার চেষ্টা করেছিল।
বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে হতাহতের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে দু'টি মামলা করেছে।
এছাড়া বিক্ষোভ এবং সহিংসতার ঘটনার ব্যাপারে আরও ছয়টি মামলায় পুলিশ তদন্ত চালাচ্ছে।