চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ২৫-৩০ জনকে চিহ্নিত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আর হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল ১০-১২ জন ঘাতক। পুলিশ এখন এই ঘাতকদের খুঁজছে। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী সংঘর্ষের ঘটনায় করা মামলায় আরও ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে মোট ৩৯ জনকে গ্রেফতার করা হলো।
এ দিকে ইসকনকে ‘আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন’ আখ্যায়িত করে একে নিষিদ্ধ এবং অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম হত্যার বিচার দাবিতে চট্টগ্রাম নগরী ও হাটহাজারীতে হেফাজতে ইসলাম শুক্রবার প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে। ময়মনসিংহে ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে ইত্তেফাকুল উলামা।
চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন জায়গায় ঘাতকদের গ্রেফতারে অভিযান চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কিন্তু চিহ্নিত ঘাতকদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। ঘাতকরা বারবার স্থান পরিবর্তন করায় তাদের গ্রেফতার করতে বেগ পেতে হচ্ছে। এসব চিহ্নিত ঘাতকরা যোগাযোগের সব ধরনের ডিভাইস থেকে দূরে রয়েছে। এ কারণে তাদের গ্রেফতার করতে সময় লাগছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার চার দিন পেরিয়ে গেলেও এই ঘটনায় শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত হত্যা মামলা হয়নি।
পুলিশ বলছে, মামলা দায়ের করতে তারা আলিফের পরিবারের জন্য অপেক্ষা করছেন। শুক্রবার সকালে আইনজীবী সাইফুল ইসলামের লোহাগাড়ার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। অন্যদিকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে ডিভিশন দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ইকবাল হোসেন। তিনি জানান, ডিভিশন দেওয়ার বিষয়টি ‘প্রক্রিয়াধীন’ রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে কারা কুপিয়েছে পুরো বিষয়টি এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিশ্চিত হতে পেরেছে। শুধু পুলিশ নয়, একাধিক গোয়েন্দা সংস্থাও হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছে। পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ঘটনার একাধিক ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করেছেন।
হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, সিলভার রঙের হেলমেট, কমলা রঙের টি-শার্ট ও কালো প্যান্ট পরা রামদা হাতে এক যুবক এবং লাল হেলমেট, ব্লু টি-শার্ট ও জিন্স পরা বঁটি হাতে আরেক যুবক আইনজীবী সাইফুলকে কোপাচ্ছেন। পুলিশ প্রথমদিন এদের একজনকে বিকাশ দাশ হিসাবে সন্দেহ করলেও আসলে তিনি চন্দন বলে নিশ্চিত হয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। অন্যজন বুঞ্জা মেথর বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
৩০ জনকে খুঁজছে পুলিশ : আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে হত্যার ঘটনায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ২৫-৩০ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের তালিকা এখন পুলিশের হাতে। স্থির চিত্র ও ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যাদের খুঁজছে তাদের মধ্যে রয়েছে-শুভ কান্তি দাশ, রুবেল সাহা, বিধান ধর, রনব, বিশাল, বিকাশ, রাজ কাপুর, লালা ধর, সামির, সোহেল দাশ, শিব কুমার, সমীরণ লাল, পরাশ, গণেশ, ওম দাশ, অজয়, দেবী চরণ, বিজয় দাশ, দেব, চন্দন, জয়, রমিত, বুঞ্জা, লালা, ও ওমকার দাশ। এছাড়া আরও কয়েকজন রয়েছে। তাদের গ্রেফতার করতে নগরীর একাধিক জায়গায় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে সিএমপির এডিসি (গণমাধ্যম) কাজী তারেক আজিজ যুগান্তরকে বলেন, হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেফতার করতে থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিম মাঠে রয়েছে। নানা কৌশলে তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
গ্রেফতার আরও ১১ জন : মঙ্গলবার আদালতপাড়ায় পুলিশ ও আইনজীবীদের সঙ্গে চিন্ময় অনুসারীদের সংঘর্ষের ঘটনায় করা মামলায় আরও ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে ৯ জনকে বৃহস্পতিবার রাতে এবং অপর দুজনকে শুক্রবার সকালে গ্রেফতার করে পুলিশ। শুক্রবার রাতে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তারা হচ্ছে-জুয়েল দাশ, আবদুল কাইয়ুম, জাহিদ হোসেন, রবি দাশ, কৌশিক চৌধুরী, রকি মুজামদার, আবির দে, রবিন দে, রুবেল দাশ।
শুক্রবার সকালে বাকলিয়া থানা এলাকা থেকে দুজনকে গ্রেফতার করে থানা পুলিশ। গ্রেফতাররা হচ্ছে-নগরীর বাকলিয়া থানার কালমিয়া বাজার এলাকার মৃত সুনীল ধরের ছেলে বাবলা ধর (৪২) এবং আশিয়া হিন্দুপাড়া এলাকার বর্তমানে কালামিয়া বাজার এলাকায় বসবাসরত দুলাল শীলের ছেলে সজল শীল (৪০)। বাকলিয়া থানার ওসি মো. ইখতিয়ার উদ্দিন বলেন, মঙ্গলবার ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে আদালতে তোলার সময় পুলিশের কাজে বাধা সৃষ্টির অভিযোগে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
হত্যা মামলার এজাহার প্রস্তুত : শুক্রবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে মামলা হয়নি। তবে চট্টগ্রাম আদালতে আইনজীবীদের একটি টিম এজাহার প্রস্তুত করেছে। দুই উপদেষ্টা সাইফুলের গ্রামের বাড়িতে যাওয়ায় স্বজনরা সবাই গ্রামের বাড়িতে রয়েছেন। এ কারণে শুক্রবার সকালে মামলার এজাহার থানায় দায়ের করতে পারেননি। একজন আইনজীবী নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে বলেন, ‘হত্যা মামলার এজাহার প্রস্তুত করা হয়েছে। মামলায় ১০০-১২০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আসামি থাকতে পারে। শুক্রবার রাতের মধ্যে মামলা দায়েরের সম্ভাবনা রয়েছে।
কারাগারে চিন্ময়কে ডিভিশন দেওয়া হয়নি : চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে ডিভিশন দেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ইকবাল হোসেন।
তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘ইসকন নেতা চিন্ময় ভালো আছেন, সুস্থ আছেন। তাকে ডিভিশন দেওয়া হয়নি। ডিভিশন দেওয়ার বিষয়টি এখনও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
নগরীতে দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা : নগরীর কোতোয়ালি থানার পাথরঘাটা এলাকায় দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে ব্রিকফিল্ড রোডের কালীবাড়ি মন্দির সংলগ্ন জেলেপাড়া এলাকায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জুমার নামাজের পরপর একদল লোক কালীবাড়ি মন্দিরের সামনে জড়ো হয়। খবর পেয়ে আরেকটি পক্ষের লোকজনও সেখানে জড়ো হয়। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনী এসে উভয়পক্ষকে শান্ত করে। ফলে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি দেখা গেছে।
কোতোয়ালি থানার ওসি মো. আব্দুল করিম জানান, দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের বুঝিয়ে শান্ত করেছি। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।
সোমবার চট্টগ্রামে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার অভিমুখে লংমার্চের ঘোষণা : ইসকনকে নিষিদ্ধ ও অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।
শুক্রবার জুমার নামাজের পর নগরীর জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ থেকে মিছিলটি বের হয়। সেখান থেকে ষোলশহর দুই নম্বর গেট বিপ্লব উদ্যানে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে সমাবেশ করে সংগঠনটি। সংগঠনের শীর্ষ নেতারা অভিযোগ করেন ভারতের মদদে ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের প্রত্যক্ষ ইশারায় দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চায় ইসকন। এরই অংশ হিসাবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানোর দাবি জানান হেফাজতের নেতারা।
সমাবেশে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি হারুন ইজহার বলেন, ‘হিন্দুত্ববাদী বিভিন্ন সংগঠন দাবি করেছে হত্যার সঙ্গে ইসকনের কোনো যোগাযোগ নেই। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশসহ ইসলামপন্থি বিভিন্ন দল ও সংগঠন এবং তাদের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে তারা বসতে চায়। আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই, এটা নতুন এক চক্রান্ত। শেখ হাসিনাকে বাংলার মাটি থেকে বিদায় করার পর এ দেশের বেশিরভাগ হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ভারতের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে। ইতোমধ্যে তারা তাদের বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে যখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শাস্তির আওতায় এলো তখন তারা নতুন একটি দল তৈরি করে সরকার এবং আলেম-ওলামাদের সঙ্গে সমঝোতা করতে বলতে লাগল।’
মুফতি হারুন ইজহার বলেন, ‘আমি আজকের এই সমাবেশ থেকে ইসকন এবং হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদসহ সব হিন্দু সংগঠনকে বলে দিতে চাই, তিনটি শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা আগামীতে কোনো হিন্দু সংগঠনের সঙ্গে আলাপে বসতে রাজি নই। ২০২০ সালে আমি চট্টগ্রামের একটি হোটেলে ইসকন নেতাদের সঙ্গে বসেছিলাম। বিগত হাসিনা সরকার পতনের পর আমাদের দেশের ইসলামপন্থিরা হিন্দুদের মন্দির পাহারা থেকে শুরু করে তাদের আত্মরক্ষা ও সুরক্ষার সব ব্যবস্থাপনা করেছিল। এমনকি অতি উদারতা দেখাতে গিয়ে আমাদের কিছু ভাই তাদের পূজামণ্ডপে গিয়েছিল, যা আমরা সমর্থন করি না। এত উদারতা দেখানোর পরেও তারা আমাদের ভাইকে জবাই করে তার উত্তর দিল।’
হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোকে তিনটি শর্ত দিয়ে বলেন, ‘এখন কোনো হিন্দু সংগঠন যদি আমাদের সঙ্গে ডায়ালগে বসতে চায়, এক নম্বর শর্ত হলো-এসব হিন্দু সংগঠনকে ভারতের সঙ্গে সম্পূর্ণ এবং সব প্রকাশ্য সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। দুই নম্বর হলো-বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর আক্রমণের যত ভুয়া প্রপাগান্ডা হয়েছে সেসব ব্যাপারে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। তাদেরকে বলতে হবে বাংলাদেশে হিন্দুরা মুসলমানদের পাশাপাশি অবস্থান করে নিরাপদে রয়েছে এবং যেসব ভারতীয় মিডিয়া অপপ্রচার চালিয়েছে হিন্দুদের ওপর নির্যাতন হয়েছে তা মিথ্যা-ভুয়া। তিন নম্বর শর্ত হলো-আপনাদের বিভিন্ন সংগঠনে ঘাপটি মেরে থাকা যেসব জঙ্গিবাদী, সন্ত্রাসী এবং গুন্ডারা রয়েছে সবাইকে আত্মসমর্পণ করতে হবে। আপনাদের তথ্যের ভিত্তিতে আপনাদের সহযোগিতায় সবাইকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে হস্তান্তর করতে হবে।’
হিন্দুস্তানের সামনে দুটি পথ আছে উল্লেখ করে হারুন ইজহার বলেন, ‘হিন্দুস্তানকে তার অতীতের অবস্থান পরিবর্তন করে আমাদের সঙ্গে ডায়ালগে বসতে হবে এবং আগামী দিনের সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। হিন্দুস্তান যদি তার ষড়যন্ত্র অব্যাহত রাখে, বাংলাদেশে অরাজক পরিস্থিতি করতে চায়, তাহলে আমরাও হিন্দুস্তানের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আগ্রাসন অব্যাহত রাখব। বাংলাদেশে যে ষড়যন্ত্র হছে তার মাথা চিহ্নিত করতে হবে আপনাদের। ইতোমধ্যে হিন্দুস্তানের সঙ্গে ইসরাইল যুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করতে ইসরাইল ও ভারত যৌথ চক্রান্ত করে যাচ্ছে। আমাদের লড়াই সুদূরপ্রসারী। বাংলাদেশের কোনো হিন্দুর গায়ে আমাদের টোকাও পড়বে না।’
আগামী সোমবার (২ ডিসেম্বর) কর্মসূচি ঘোষণা করে তিনি বলেন, সোমবার সকাল ১১টায় চট্টগ্রামে অবস্থিত সহকারী ভারতীয় হাইকমিশনার অফিস অভিমুখে আমাদের লংমার্চ হবে। আমাদের সমাবেশ শান্তিপূর্ণ হবে। ওই সমাবেশে আপনারা কোনো বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করবেন না।
হাটহাজারীতে হেফাজতের বিক্ষোভ মিছিল : হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, ইসকন নিষিদ্ধ এবং অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম হত্যার বিচার দাবিতে শুক্রবার জুমার নামাজের পর চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে হেফাজতে ইসলামের প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে।
মিছিল-পূর্ব সমাবেশে হেফাজত নেতারা বলেন, রাষ্ট্রদ্রোহীর পক্ষে কথা বলে ভারত এ দেশে ঔপনিবেশবাদ কায়েম করতে চায়। হাটহাজারী ডাকবাংলো চত্বরে ওই প্রতিবাদ সমাবেশ হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ হাটহাজারী উপজেলা শাখার উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন উক্ত শাখার সভাপতি মুফতি মুহাম্মদ আলী কাসেমী।
বিক্ষোভ মিছিল-পূর্ব প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা দাবি করেন, ইসকন একটি আন্তর্জাতিক উগ্রপন্থি জঙ্গি সংগঠন। সর্বশেষ আদালতের কাজে বাধা প্রদান এবং রাষ্ট্রপক্ষের একজন স্বনামধন্য আইনজীবীকে আদালত প্রাঙ্গণে নির্মমভাবে হত্যা করে তার প্রমাণ দিয়েছে সংগঠনটি। সুতরাং সরকারের প্রতি আমাদের দাবি, এ মুহূর্তে সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করা এবং আইনজীবী হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা। দাবি আদায়ে প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন বক্তারা।
তারা আরও বলেন, ভিনদেশি এজেন্ডা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে ইসকন। বাংলাদেশে কাকে গ্রেফতার করবে, কাকে ছাড়বে-এটা সরকারের সিদ্ধান্ত। এখানে ভিন্ন কোনো রাষ্ট্র মাথা ঘামানোর অধিকার রাখে না।
ময়মনসিংহে ইত্তেফাকুল ওলামার বিক্ষোভ : ময়মনসিংহ ব্যুরো জানায়, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের অপচেষ্টা ও আইনজীবী হত্যার প্রতিবাদ এবং ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে।
শুক্রবার বাদ জুমা ময়মনসিংহ নগরীর বড় মসজিদ থেকে ইত্তেফাকুল ওলামা বৃহত্তর মোমেনশাহীর ব্যানারে মিছিলটি বের হয়। এরপর রেলওয়ে কৃষ্ণচূড়া চত্বরে গণসমাবেশ করে।
ইসকনকে সন্ত্রাসী সংগঠন উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, ইসকন ফ্যাসিবাদের দোসর। সন্ত্রাসী এ সংগঠনটির লক্ষ্যই হলো দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করা। বিগত ১৬ বছর তারা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারে ভ্যানগার্ড হিসাবে কাজ করেছে। বক্তব্য রাখেন ইত্তেফাকুল ওলামা বৃহত্তর মোমেনশাহীর মজলিশে শূরার সভাপতি খালেদ সাইফুল্লাহ সাদী, সহ-সভাপতি আব্দুর রহমান হাফেজ্জি প্রমুখ।