সমুদ্রের অন্যতম শীর্ষ শিকারি ওরকা বা কিলার হোয়েলকে বিশ্বের বৃহত্তম হাঙর প্রজাতি তিমি হাঙরকে শিকার করতে দেখা গেছে। মেক্সিকোর উপকূলের প্রশান্ত মহাসাগরে এই ঘটনাটি ঘটেছে। এই ঘটনা বিজ্ঞানীদের অবাক করেছে। যদিও আগে থেকেই ধারণা ছিল, ওরকা তিমি হাঙর শিকার করতে পারে, এবারই প্রথমবার তাদের এই কার্যকলাপ প্রমাণিতভাবে নথিভুক্ত হয়েছে।
গবেষণা অনুযায়ী, ওরকারা সাধারণত ক্যালিফোর্নিয়ার উপসাগরের মতো খাদ্যসমৃদ্ধ এলাকায় তিমি হাঙরের শিকার করে। এখানে দেখা গেছে, ওরকারা তরুণ ও আংশিকভাবে পূর্ণবয়স্ক তিমি হাঙরকে টার্গেট করছে, যেগুলোর দৈর্ঘ্য তিন থেকে সাত মিটার। এই আকারের হাঙর তুলনামূলক দুর্বল হওয়ায় ওরকারা সহজেই তাদের শিকার করতে পারে।
তিমি হাঙরের ছোট দাঁত থাকার কারণে এগুলো আত্মরক্ষায় তেমন কার্যকর নয়। শিকার থেকে বাঁচতে তারা সাধারণত পাখনা ঝাঁকায় বা গভীর পানিতে ডুবে যায়। কিন্তু ওরকারা দলবদ্ধ আক্রমণ করে এবং অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে শিকারকে কাবু করে।
২০১৮ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ওরকারা প্রথমে তিমি হাঙরের পেলভিক অংশে আঘাত করে। এরপর শিকারকে রক্তক্ষরণে দুর্বল করে তার ভাসমান অবস্থায় রেখে দেয়, যাতে সে পানির গভীরে ডুব দিতে না পারে। একবার শিকার সম্পূর্ণ দুর্বল হয়ে গেলে, ওরকারা তার অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিশেষ করে লিভার খেয়ে ফেলে, যা চর্বি-সমৃদ্ধ এবং তাদের জন্য অত্যন্ত পুষ্টিকর।
ওরকা আসলে ডলফিনের বৃহত্তম প্রজাতি। কালো-সাদা রঙের জন্য সহজেই চেনা যায় এই প্রাণীকে। তারা খাদ্য শৃঙ্খলের শীর্ষে অবস্থান করে এবং মাছ, পেঙ্গুইন, সি-লায়নসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী শিকার করে।
ওরকার শিকার করার পদ্ধতি অনেকটা নেকড়ের দলের মতো। একেকটি দলে ৪০টি পর্যন্ত ওরকা থাকতে পারে। তাদের দলবদ্ধ, সমন্বিত এবং কার্যকর শিকার কৌশল তাদের সমুদ্রজগতের অন্যতম ভয়ঙ্কর শিকারি করে তুলেছে।
গবেষক ভলকার ডেকি বলেন, এই প্রাণীগুলো বারবার দেখিয়েছে, তারা শিকারের জন্য অত্যন্ত বিশেষায়িত এবং কৌশলী পদ্ধতি উদ্ভাবনে পারদর্শী।
সমুদ্রের এই ভয়ঙ্কর শিকারিরা তাদের কার্যক্রম দিয়ে বারবার প্রমাণ করেছে, তারা শুধু শীর্ষ শিকারিই নয় বরং প্রকৃতির এক অসাধারণ পরিকল্পক। সূত্র : এনডিটিভি
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল