আরও সাড়ে ৪ কোটি ডলার কিনল বাংলাদেশ ব্যাংক
বাজার ‘স্থিতিশীল রাখতে’ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে আরেক দফা ডলার কিনল বাংলাদেশ ব্যাংক।
বৃহস্পতিবার চতুর্থ দফায় কেনা হয় চার কোটি ৫০ লাখ ডলার। প্রতি ডলারের দাম পড়ে ১২১ টাকা ৩৫ পয়সা থেকে শুরু করে ৫০ পয়সা পর্যন্ত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "ডলারের বাজার স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার কিনছে।
“এভাবে ডলার কেনার ফলে বাজারে তারল্য বাড়ছে; আর কেনা ডলার যোগ হচ্ছে রিজার্ভে।"
এর আগে তিন ধাপে বিভিন্ন দামে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে প্রায় ৫০ কোটি ডলার কেনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এভাবে বিদেশি মুদ্রা কেনার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলছেন, "কেন্দ্রীয় ব্যাংক এটা চায় না যে, টাকার মান অনেক বেড়ে যাক কিংবা মান অনেক কমে যাক। একটা স্থিতিশীল অবস্থায় রাখার চেষ্টা করছে।"
তিনি বলেন, "যে দরে কেনা হয়, সেটা দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটা ইন্ডিকেশন দেওয়ার চেষ্টা করে। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৫০ কোটির একটা তহবিল তৈরি করে রেখেছে। বাজার যাচাই বাছাই করে হয় তারা ডলার বিক্রি করবে, নয়ত কিনবে।"
গত ১৩ জুলাই প্রথম দফায় ১৮টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছ থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে ১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার কেনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
আর ১৫ জুলাই দ্বিতীয় দফায় ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে তারা কেনে ৩১ কোটি ৩০ লাখ ডলার।
আর তৃতীয় দফায় ২৩ জুলাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১ কোটি ডলার কেনে ১২১ টাকা ৯৫ পয়সা দরে।
প্রথম দফায় কেনার পর থেকে ব্যাংকের পাশাপাশি খোলা বাজারে ডলারের দর বাড়ার তথ্য আসে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, আইএমএফের বিপিএম৬ পদ্ধতিতে বুধবার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার।
ব্যাংকারা বলছেন, রেমিটেন্স ও রপ্তানির প্রবাহ বাড়ার পাশাপাশি নিলামে ডলার কেনার বিষয়টিও রিজার্ভ বাড়াতে ভূমিকা রাখছে।
ডলার কেনার প্রভাব রিজার্ভে পড়ার তথ্য দিয়ে সপ্তাহ খানেক আগে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছিলেন, আগামীতে প্রয়োজন পড়লে আরও ডলার কেনা হবে।
চলতি বছর মে মাসে ডলার বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনার মাধ্যমে তা বাজারভিত্তিক করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। পরবর্তীতে এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর অবশ্য বলেছিলেন, আইএমএফের চাপে নয়, বরং বাজার বিবেচনায় নিয়ে তা বাজারভিত্তিক করা হয়েছে।
তবে বাংলাদেশের চতুর্থ ও পঞ্চম ঋণ ছাড়ের আগে আইএমএফের প্রতিনিধি ও বাংলাদেশের পক্ষে আলোচনার মধ্যে দরকে বাজার ভিত্তিক করে দেওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছিল সংস্থাটি।
বিশ্ব ব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, “বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ডলার কেনার মাধ্যমে এর দর একটা নির্দিষ্ট দরের মধ্যে রাখার চেষ্টা দেখা যাচ্ছে।”
জুলাইতে ডলার দর হঠাৎ কমতে থাকলে বাংলাদেশ ব্যাংক নিলামের মাধ্যমে ডলার কেনা শুরু করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার দর অস্থিতিশীল হতে দিবে না। দাম অনেক বেড়ে যাওয়া যেমন ভালো নয়, আবার দাম কমে যাওয়াও অর্থনীতির জন্য নেতিবাচক।
ডলার দর কমে যাওয়ার কারণে হিসেবে বিশ্লেষক, ব্যাংকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধতন কর্মকর্তারা বলছেন, মাঝে কয়েক মাস রেমিটেন্সে উল্লম্ফনের পাশাপাশি রপ্তানি আয়ের প্রবাহও ভালো ছিল। এর সঙ্গে জুনে আইএমএফ, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ও এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) থেকে অর্থ ছাড় হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বড় অঙ্কের ডলার এসেছে।
একটি বেসরকারি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধান বলেন, দুই ঈদে অনেক ভালো রেমিটেন্সের প্রবাহের বিপরীতে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি আগের চেয়ে কমেছে। যোগান ও চাহিদার এ সূত্রেই দাম কমেছে ডলারের। বিপরীতে মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানি কমেছে।
তিনি বলেন, “বিনিয়োগ যে হচ্ছে না তার প্রধান সূচক বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া। সরকার পতনের পর থেকেই বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি কমছে।”
টানা সাত মাস ধরে বেসরকারি খাতে ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের নিচে। মে মাসে এ খাতে ঋণ ছাড়ে প্রবৃদ্ধি হয় ৭ দশমিক ১৭ শতাংশ। আগের মাস এপ্রিলে যা ছিল ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ।