দেড় দশকে প্রায় চার কোটি নতুন ভোটার যুক্ত হলেও ‘ফ্যাসিবাদ চক্র’ তাদের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছিল অভিযোগ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তাদের সমর্থন চেয়েছেন।
নতুন ভোটারের কাছে ধানের শীষের জন্য ভোট চাইতে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি।
রোববার বিকালে রাজধানীর শাহবাগে জুলাই-আগস্ট গণ অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ছাত্রদল আয়োজিত ছাত্র সমাবেশে ভার্চুয়ালি লন্ডন থেকে যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
বিকাল ৩টা ২০ মিনিটে কুরআন তেলোয়াতের পরপর জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে সমাবেশের কার্য্ক্রম শুরু হয়।
দুপুর থেকেই সমাবেশ স্থল শাহবাগ চত্বর এবং এর দুই পাশের সড়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সড়কে আসতে থাকেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। বিকাল হওয়ার আগেই সমাবেশ এলাকা উপচে পড়ে নেতাকর্মীদের ভিড়ে।
ছাত্র-তরুণদের বিশাল এ সমাবেশে তারেক রহমান ছাত্রদলের নেতাকর্মী এবং শিক্ষার্থীসহ তরুণ প্রজন্মের কাছে একটি আহ্বান জানিয়ে তা ছড়িয়ে দিতে অনুরোধ করেন। বলেন, ‘‘মন দিয়ে শোনো, প্রথমবার আমি তোমাদেরকে সেই আহ্বানের কথা বলবো তারপরে তোমরাও বলবে। কী সেই আহ্বান? তারুণ্যের প্রথম ভোট ধানের শীষের জন্য হোক।”
তিনি শহীদদের কাঙ্খিত বাংলাদেশ গড়তে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের যোগ্য হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলার প্রতিজ্ঞা করারও আহ্বান জানান।
‘৪ কোটি নতুন ভোটারের নতুন সুযোগ’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, ‘‘দেশের প্রায় ১৩ কোটি ভোটারের মধ্যে গত দেড় দশকে ভোটার তালিকায় এ পর্যন্ত প্রায় চার কোটি নতুন ভোটার যুক্ত হয়েছে। তোমরা ভোটার হলেও ফ্যাসিবাদ চক্র তোমাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল।

‘‘আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে তোমাদের হারানো ভোটের অধিকার পুন:প্রতিষ্ঠার এক বিরাট সুযোগ তৈরি হয়েছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্বাবলম্বী বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বিএনপির গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্য পলাতক স্বৈরাচারের শাসন আমলে গত দেড় দশকে ভোট প্রয়োগের অধিকার বঞ্চিত সাড়ে তিন কোটি ভোটারসহ আমি সবার সমর্থন এবং সহযোগিতা চাই।”
‘নবীন-প্রবীন মিলে দেশ গড়তে হবে’
শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন, কর্মসংস্থানভিত্তিক শিক্ষা ও বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগসহ বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনার কথা তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, এ সমাবেশের মাধ্যমে সারাদেশের শিক্ষার্থী এবং তরুণ প্রজন্মের সামনে বিএনপির নেওয়া পরিকল্পনা তুলে ধরার একটি উদ্দেশ্য রয়েছে।
”কী সেই উদ্দেশ্য, কী সেই লক্ষ্য? সেটি হল আমাদের প্রত্যেকেরই মা রয়েছে। একজন মায়ের চোখে বাংলাদেশ যেমন অর্থাৎ আগামী দিনে আমরা নবীন ও প্রবীণ সবাই মিলে তেমন একটি বাংলাদেশ করতে চাই।”
উগ্রপন্থা ঠেকানোর আহ্বান জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘এই বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ-চরমপন্থার উত্থান কিংবা পুনর্বাসন ঠেকাতে শিক্ষার্থীদেরকে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে।”
তিনি বলেন, ‘‘তথ্য প্রযুক্তির এ সময়ে বিশ্ববাজারের সঙ্গে দক্ষতা এবং যোগ্যতার প্রতিযোগিতায় যদি টিকে থাকতে হয় তাহলে অবশ্যই তোমাদের সকলকে তথ্যপ্রযুক্তি এবং কারিগরি শিক্ষায় দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
”ইনশাআল্লাহ আগামী দিনে জনগণের রায় বিএনপি আবারো রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে এইবার আমরা স্কুল পর্যায় থেকে শিক্ষাক্রমের ভেতরে তথ্যপ্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থাটিকে আমরা প্রবর্তন করব।”

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, “ঐতিহাসিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ইতিহাস জড়িয়ে আছে। জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের গৌরবোজ্জল ইতিহাস, ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধ, ফ্যাসিবাদ শাসন আমলের ভিন্ন দল ভিন্ন মতের শিক্ষার্থীদের জন্য এই ঢাকা বিশ্বদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোকে সেই সময় কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পরিণত করা হয়েছিল। বর্তমানে যারা এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাদের সামনে এই ক্যাম্পাসকে জ্ঞান চর্চা এবং গবেষণার একটি নিরাপদ ভূমি হিসেবে প্রতিষ্ঠার সুযোগ এসেছে। প্রাচ্যে অক্সফোর্ড খ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবজনক ইতিহাস আবারো ছড়িয়ে দিতে হবে।
‘‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সংকট নিরসনে আবাসিক হলগুলোতে বসবাস এবং খাবারের মান বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। এ ব্যাপারে আমি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে হলগুলোতে বিদ্যমান সমস্যা এবং সমাধানের একটি লিখিত প্রস্তাব বিএনপির কাছে উপস্থাপনার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের নেতাকর্মীদেরকে আমি আহ্বান জানাচ্ছি।”
একইভাবে দেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে সেইসব বিশ্ববিদ্যালয় সমস্যা এবং সম্ভাবনা নিয়ে সুপারিশসহ প্রতিবেদন তৈরির জন্য ইতিমধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে ছাত্রদলের সংশ্লিষ্ট নেতৃত্বকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও তুলে ধরেন তিনি।
ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবু্ল ইসলাম রাকিবের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাক নাছির উদ্দীন নাছিরের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, আসাদুজ্জামান রিপন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি আবু আফসার মো. ইয়াহিয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদব শ্যামল মালুম ও সাংগঠনিক সম্পাদক আমানউল্লাহ আমান বক্তব্য রাখেন।
এতে ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের মধ্যে নাজিম উদ্দিন আলম, কামরুজ্জামান রতন, এবিএম মোশাররফ হোসেন, আজিজুল বারী হেলাল, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, হাবিবুর রশীদ হাবিব, আকরামুল হাসান, ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল, কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাইফ মাহমুদ জুয়েল ও রাশেদ ইকবাল খান উপস্থিত ছিলেন।