ছবির উৎস, Getty Images
Author,
কাদির কল্লোল
Role,
বিবিসি নিউজ বাংলা, ঢাকা
২ মিনিট আগে
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ ঢাকায় তাদের দলের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য লোক খুঁজছে। কারণ দলটি এখন দেশের ভেতরে রাজনীতিতে সক্রিয় অবস্থান তৈরির বিষয়কে অগ্রাধিকার দিচ্ছে বলে এর নেতারা বলছেন।
কিন্তু বিপর্যস্ত দলটি এখন আকস্মিক ঝটিকা মিছিল এবং সামাজিক মাধ্যমের ওপর ভর করে এগোচ্ছে; এর বাইরে বড় কোনো কর্মসূচি নিয়ে রাজনীতির মাঠে টিকে থাকার মতো তাদের সাংগঠনিক অবস্থা এখনো হয়নি।
অন্যদিকে, জুলাই গণ অভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ ও ফ্যাসিবাদের তকমা এড়িয়ে দেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের সহসাই ফেরত আসা সম্ভব কি না, এই প্রশ্নও রয়েছে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগ প্রায় ৭৬ বছর বয়সে আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় এবার বেশি সংকটে পড়েছে।
গত বছরের পাঁচই অগাস্ট গণ অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনের পতনে শেখ হাসিনাসহ সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য বা দলটির নেতৃত্বের একটা বড় অংশ দেশ ছেড়ে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেন।
আর দেশের ভেতরে নেতৃত্ব শূন্য হয়ে পড়েন বিপর্যস্ত দলটির তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।
তাদের কাছে কোনো দিকনির্দেশনা ছিল না। তাদের অনেকেই বলেছেন, সে সময় প্রথমে তাদের কাছে জীবন বাঁচানোই প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাদের অনেকে দেশের ভেতরেই পালিয়ে বেরাচ্ছেন। অনেকে গ্রেফতার হয়েছেন।
এখন দলটির সরকারের পতনের আট মাস পার হলেও দেশে থাকা তাদের কোনো নেতা হাল ধরতে বা ঘুরে দাঁড়াতে পারেন নি।
ভারত এবং পশ্চিমের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন, আওয়ামী লীগের এমন কয়েকজন নেতা বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, তাদের শীর্ষ নেতা শেখ হাসিনাসহ তারা এখন মনে করছেন, দেশের ভেতরে দলের মুখপাত্র বা নেতা প্রয়োজন, যিনি আত্মগোপনে না থেকে প্রকাশ্যে এসে বিপর্যস্ত নেতা-কর্মীদের সংগঠিত করবেন।
তাদের এমন চিন্তায় সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর নাম রয়েছে।
কিন্তু গ্রেফতার, মামলার ভয়ে এবং প্রতিকুল পরিস্থিতিতে তাদের কেউ এখনো সাহস করে এগিয়ে আসেননি। সেভাবে বিতর্কিত নন, দলটির এমন অন্য কোনো নেতা এগিয়ে আসবেন, সে ধরনের ইঙ্গিতও নেই।
যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপে রয়েছেন, এমন একাধিক নেতার বক্তব্য হচ্ছে, তাদের দল ঢাকায় মুখপাত্র বা কোনো পদ দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো নেতার নাম ঘোষণা করতে চাইছে না। কারণ কারও নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হলেই তাকে মামলা, গ্রেফতারের মুখে পড়তে হতে পারে। এটি তাদের বিবেচনায় নিতে হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা অভিযোগ করছেন, ঢাকা থেকে শুরু করে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার বাড়ানো হয়েছে।
সেজন্য পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে তাদের দলের সভাপতি শেখ হাসিনাও সম্প্রতি বলেছেন, দেশের ভেতরে যারা সাহস নিয়ে এগিয়ে এসে দলকে সংগঠিত করার কাজে নেতৃত্ব দেবেন, তারাই নেতা।
তবে কেউ এখনো সেই সাহস দেখাননি।

ছবির ক্যাপশান,
আওয়ামী লীগ নেতারা সরকারের পতনের পেছনে 'ষড়যন্ত্র' তত্ত্বকেই হাজির করছেন।
রাজনীতিতে 'রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ' বিষয়ে একটা আলোচনা রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের কেউ কেউ বিভিন্ন সময় এমন ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্যও দিয়েছেন।
তবে আওয়ামী লীগের ভেতরে এ ধরনের কোনো চিন্তা নেই বলে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে মনে হয়েছে। বরং দলটি এ ধরনের আলোচনাকে তাদের দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে।
দলটির শীর্ষ নেতা সহ বিদেশে অবস্থান করা কয়েকজন নেতা বিষয়টি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বক্তব্য তুলে ধরেছেন। তারা এমনও বলেছেন যে, রিফাইন্ড আওয়ামী লীগের কথা বলে তাদের দল ভাঙার 'ষড়যন্ত্র' করা হচ্ছে।
যদিও রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ নিয়ে যে আলোচনা রয়েছে, তাতে সাবের হোসেন চৌধুরী এবং সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর নাম এসেছে। এখন আওয়ামী লীগ যে নেতা খুঁজছে, তাতেও সাবের হোসেন চৌধুরীর নাম বলছেন বর্তমানে বিদেশে থাকা দলটির নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ।
তবে অন্তর্বর্তী সরকার বা তাদের ঘনিষ্ঠ কোনো পক্ষ থেকে যখন কারও নাম বলা হচ্ছে বা দলটির রাজনীতি নিয়ে কোনো বক্তব্য মাঠে ছাড়া হচ্ছে, তখন সেটাকে ভিন্নভাবে দখছে আওয়ামী লীগ।

দেশের রাজনীতিতে সক্রিয় অবস্থানে ফিরতে আওয়ামী লীগ তাদের নেতৃত্ব তৈরির চেষ্টা করছে, কিন্তু তা বিকল্প নেতৃত্ব নয়।
দলটি তাদের নেতা শেখ হাসিনার বিকল্প অন্য কাউকে চিন্তা করছে না, এটা নি:সন্দেহে বলা যায়। বিদেশে অবস্থান করা অন্তত পাঁচজন এবং দেশে আত্মগোপনে থাকা চারটি জেলার নেতার সঙ্গে কথা বললে তারা ওই অবস্থান তুলে ধরেন।
সেখানে দেশের ভেতরে নেতা খোঁজার বিষয়টি এসেছে প্রয়োজনের তাগিদে। কারণ আওয়ামী লীগ দাবি করছে, বিদেশে অবস্থান করা নেতাদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ তৈরি হয়েছে। তারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরছেন।
এমনকি দেশের ভেতরে আত্মগোপনে বা পালিয়ে থাকা তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গেও এখন যোগাযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে তারা দাবি করছেন। আর এই যোগাযোগের ভিত্তিতে দিবস ভিত্তিক ঝটিকা মিছিলের কর্মসূচি পালন করা সম্ভব হচ্ছে।
এছাড়া সামাজিক মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা বেশ সক্রিয় হয়েছেন।
তবে শেখ হাসিনাসহ বিদেশ অবস্থান করা দলটির অনেক নেতার বক্তব্য বিভিন্ন সময় বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। দলের তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের জন্যও অনেক ক্ষেত্রে বিপদ বাড়িয়েছে। এমন আলোচনা রয়েছে রাজনীতিতে।
এছাড়া বিদেশে থেকে দলের নেতৃত্ব হয়তো তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সংগঠিত করে মাঝেমধ্যে ঢাকায় বা ঢাকার বাইরে কোনো কোনো জেলায় ঝটিকা মিছিল করাতে সক্ষম হচ্ছেন।
দলটির নেতারা দাবি করছেন, তাদের এসব মিছিল ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। কিন্তু সেটা রাজনীতিতে কতটা প্রভাব তৈরি করছে, সেই প্রশ্ন রয়েছে।
এই বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে দেশের ভেতরে দলকে সংগঠিত করার নেতৃত্ব তৈরির তাগিদ অনুভব করছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু তা শীর্ষ নেতৃত্বের বিকল্প নয়।
দেশে দলের কর্মকাণ্ডে কোনো নেতা এগিয়ে এলে তিনি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বা নির্দেশনা মেনে চলবেন; এটাই দলটির অবস্থান।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাসিম বিবিসি বাংলাকে বলেন, বিপর্যস্ত দলের ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে শেখ হাসিনাই নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এ ব্যাপারে তাদের দলের কোনো পর্যায়ে ভিন্ন কোনো চিন্তা নেই।

ছবির উৎস, Getty Images
ছবির ক্যাপশান,
অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনের পতনে শেখ হাসিনাসহ সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য বা দলটির নেতৃত্বের একটা বড় অংশ দেশ ছেড়ে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেন।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দমননীতি ও হত্যাকাণ্ডের জন্য আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমা চায় বা অনুশোচনা করে, তাহলে আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে ফিরতে পারে, এমন একটা আলোচনা রয়েছে রাজনীতিতে।
সরকারেরও কেউ কেউ এ ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন।
তবে ক্ষমা চাওয়ার কোনো চিন্তা দলটিতে এখনো নেই। তাদের মধ্যে কোনো অনুশোচনা আছে, এমন ইঙ্গিতও পাওয়া যায় না। বরং তারা এখনো 'ষড়যন্ত্র তত্ত্ব' নিয়েই আছেন।
বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ও সামাজিক মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে। সেটা আমলে নিচ্ছে না আওয়ামী লীগ।
দলটির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত এখন বিদেশে অবস্থান করছেন। তিনি বিবিসিকে বলেন, তাদের সরকারের পতনের আগে এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে সব হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার তারা চান।
কিন্তু অনুশোচনার প্রশ্নে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ জনগণের কাছে জবাবদিহি করবে। এজন্য অন্য কোনো পক্ষের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার বিষয় নেই বলে উল্লেখ করেন মি. আরাফাত।
বিদেশে অবস্থান করা দলটির আরেকজন নেতা জানান, পরিস্থিতি সামলাতে তাদের কিছু ভুল ছিল, এমন আলোচনাও তাদের মধ্যে আছে। দলগতভাবে অবশ্য তারা এখনো কিছু বলেননি।
এই নেতা উল্লেখ করেন, তাদের দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ এখনো হয়নি। তারা এখন পরিকল্পনার মাধ্যমে এগোতে চাইছেন এবং অল্প সময়ের মধ্যে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য তুলে ধরার বিষয় নিয়েও তারা আলোচনা করছেন।
বিশ্লেষকেরা বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন ভিন্নভাবে। তারা বলছেন, বাংলাদেশে ভুলের জন্য দলীয়ভাবে ক্ষমা চাওয়া বা অনুশোচনা করার সংস্কৃতি নেই। এর আগে কোনো দল তা করেনি।
আমেরিকান পাবলিক ইউনিভার্সিটি সিস্টেম- এর শিক্ষক সাঈদ ইফতেখার আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, 'এখন আওয়ামী লীগও সে পথে হাঁটবে না।'
দলটি তাদের ন্যারেটিভ এবং অবস্থান নিয়েই রাজনীতিতে ফেরার চেষ্টা অব্যাহত রাখবে বলে মনে করেন তিনি।

ছবির উৎস, Getty Images
ছবির ক্যাপশান,
শেখ হাসিনাসহ বিদেশ অবস্থান করা দলটির অনেক নেতার বক্তব্য বিভিন্ন সময় বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।
এখন বিএনপিসহ সক্রিয় বেশিরভাগ দল নির্বাচনকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে কি না?
কারণ গণ অভ্যুত্থানের ছাত্র নেতৃত্বের নতুন দল এনসিপিসহ কয়েকটি দল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি করছে।
আর নির্বাচনে আংশ নেওয়ার সুযোগ পেলে দলটির অবস্থান কী হবে, এ নিয়েও আলোচনা রয়েছে।
তবে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ভেতরে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা রয়েছে।
দলটির একাধিক নেতা বলছেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়া তাদের দলের জন্য আত্মঘাতী হবে, এই আলোচনা তাদের মধ্যে রয়েছে।
তারা অবশ্য রাজনীতিতে ফিরতে নির্বাচনের সময়কে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাতে চান। তারা মনে করেন, অন্তর্ভূক্তিমূলক নির্বাচন করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে।
আন্তর্জাতিক চাপ আরও বাড়লে সরকারকে সব দলের জন্য রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর পরিবেশ তৈরি করতে হবে। আর তা হলে আওয়ামী লীগের জন্য সুযোগ আসতে পারে।
কিন্তু দল নিষিদ্ধ করার বিষয় এলে আওয়ামী লীগ তখন ঝুঁকি নিয়েই কর্মসূচিতে মাঠে থাকার চেষ্টা করবে।

ছবির উৎস, Getty Images
ছবির ক্যাপশান,
এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ভেতরে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা রয়েছে।
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত দলটির নেতা-কর্মীরা এলাকা ছাড়া হয়েছেন।
নির্বাচনের সময় যদি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর সুযোগ তৈরি হয়, হয়তো ঢাকায় দলের কর্মসূচি পালন করা যেতে পারে।
কিন্তু দলের নেতা-কর্মীরা এলাকায় ফিরতে পারবেন, সেই নিশ্চয়তা নেই বলে আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেন।
তারা বলছেন, যে সব দল এখন রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছে, এগুলোর মধ্যে বিএনপিসহ বেশিরভাগ দলই তাদের প্রতিপক্ষ।
ফলে সরকারের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোও তাদের কর্মকাণ্ডে বাধা সৃষ্টি করবে। গত কয়েক মাসের অভিজ্ঞতা পর্যালোচনায় তাদের এমন ধারণা হয়েছে।
এছাড়াও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে বিচার নির্বাচনের আগে শেষ করার একটা চেষ্টা রয়েছে।
এমন বাস্তবতা বিবেচনায় রেখে আওয়ামী লীগ নেতাদের অনেকে নির্বাচনে তাদের দলের অংশগ্রহণকে আত্মঘাতী হিসেবে দেখছেন।

ছবির উৎস, Getty Images
ছবির ক্যাপশান,
আওয়ামী লীগ তাদের ন্যারেটিভ এবং অবস্থান নিয়েই রাজনীতিতে ফেরার চেষ্টা অব্যাহত রাখবে বলে মনে করেন সাঈদ ইফতেখার আহমেদ
গণ অভ্যুত্থানের ছাত্র নেতৃত্ব, অন্তর্বর্তী সরকার, এখনকার সক্রিয় প্রায় সব দল আওয়ামী লীগ বিরোধী অবস্থানে রয়েছে। দলটিকে নিষিদ্ধ করার দাবিও আছে।
দলটির নেতাদেরই অনেকে মনে করছেন, তারা এখন একা হয়ে পড়েছেন। কারণ তাদের মিত্র ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোরও শীর্ষ কয়েকজন নেতা জেলে রয়েছেন; অন্যরা পালিয়ে আছেন।
ওই দলগুলো নিজেরাই অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে। আরেক মিত্র জাতীয় পার্টিও নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার চেষ্টা চালাচ্ছে।
আর প্রতিপক্ষ বিএনপিসহ অন্য দলগুলোর অনেক ক্ষোভ রয়েছে আওয়ামী লীগের ওপর। দলটির নেতাদেরই কেউ কেউ মনে করেন, তাদের দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের শাসনে বিরোধী দলগুলোর নেতা-কর্মীদের মামলা ও গ্রেফতারের মুখে রাখা হয়েছিল।
ফলে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দিক থেকে কোনো সমর্থন পাচ্ছে না।
এ বিষয়টি যেমন রয়েছে, একইসঙ্গে দলটির সাংগঠিক অবস্থাও শক্তিশালী নেই।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাঈদ ইফতেখার আহমেদ মনে করেন, আওয়ামী লীগের শাসনে দলটি রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। দলে সুবিধাবাদীদের ভিড় বেড়েছিল। তারা এখন সরে পড়েছেন।
অন্যদিকে দুর্নীতির অভিযোগ এতটাই প্রকটভাবে এসেছে যে, তা দলটির ভাবমূর্তিতে প্রভাব ফেলেছে।
এরপরও যদিও আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, তারা পরিকল্পনার মাধ্যমে সংগঠিত হয়ে রাজনীতির মাঠে নিজেরাই নিজেদের জায়গা করে নেবেন।
কিন্তু বিশ্লেষক মি. আহমেদ মনে করেন, পুরো পরিস্থিতিই যখন বিপক্ষে, তখন মানুষের আস্থা অর্জন করে সহসাই রাজনীতিতে ফেরা বা ভাল অবস্থান তৈরি করা আওয়ামী লীগের জন্য বেশ কঠিন।