আসাদুজ্জামান আসাদ, পঞ্চগড়

উত্তরাঞ্চলের সর্বশেষ জেলা পঞ্চগড়। এ জেলা হিমালয় কন্যা। এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্গা অতি নিকটে। কাঞ্চনজঙ্গা পৃথিবীর তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ। যার ভারতের তিনটি জেলায় স্বাভাবিকভাবে ভ্রমণ পিপাসুদের আগ্রহের কেন্দ্র বিন্দু। মেঘমুক্ত আকাশ থাকলে অতি সহজে কাঞ্চনজঙ্গা দেখা যায়। যা দর্শনে ভ্রমণ পিপাসুদের মনের ইচ্ছা পূরণ করে। এছাড়াও পঞ্চগড়ে ঐতিহাসিক নিদর্শন ও দর্শনীয় স্থান রয়েছে।

সবুজ চা বাগান : পঞ্চগড়ের পতিত সমতল ভূমি, সবুজ চা বাগানে ভরে উঠেছে। সারি সারিভাবে লাগানো সবুজ চা বাগানের সৌন্দর্য ভ্রমণ পিপাসু ও পর্যটকদের একান্তভাবে কাছে টানে। এ জেলায় ১০ হাজার ২৬৭ একর জমিতে চা বাগান রয়েছে। এ জেলায় ২০০০ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে চা চাষের কাজ শুরু করা হয়। এখানে প্রায় ২৯টি চা কারখানা চালু রয়েছে।

রকস মিউজিয়াম : পঞ্চগড় রকস মিউজিয়াম। যা পাথরের জাদুঘর নামে পরিচিতি। এ রকস মিউজিয়ামটি পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজের অভ্যন্তরে অবস্থিত। এটি ১৯৯৭ সালে তৎকালীন অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. নাজমুল হক ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করেন। এ জাদুঘরে প্রত্নতাত্ত্বিক ও লোকজ সংগ্রহ এক হাজারের বেশি রয়েছে। জাদুঘরের ভেতরে উম্মুক্ত দু’রকম গ্যালারি রয়েছে। অভ্যন্তরীণ গ্যালারিতে রয়েছে বিভিন্ন আকৃতি, রঙ ও বৈশিষ্ট্য। আগ্নেয় শিলা, পাললিক শিলা, নুড়ি পাথর, লিলিকা নুড়ি, সিলিকা বালি, হলুদ, গাঢ় হলুদ, বালি, খনিজ বালি, সাদা মাটি, তরঙ্গায়িত চ্যাপ্টা পাথর, লাইমস্টোন, পলি, কুমোর মাটি এবং কঠিন শীলা। এখানে বহু বছরের পুরনো ইমাররতের ইট, পোড়ামাটির মূর্তি রয়েছে। দেশ-বিদেশ থেকে সংগৃহীত পাথর, বালির বর্ণনা কক্ষের মধ্যে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। পাথরের পাশাপাশি এখানে এ অঞ্চলের আদিবাসীদের ইমারতের ইট স্থান পেয়েছে। তাছাড়া হাজার বছরের পুরনো দু’টি নৌকা রয়েছে। যেসব নৌকা প্রশান্ত মহাসাগরীর অঞ্চলে ব্যবহার করা হতো বলে গবেষকরা মনে করেন। হাজার বছরের চুক্তি নাসা মোগল ও ব্রিটিশ শাসনামলে রোপা ও তামার মুদ্রা এখানে সংরক্ষিত আছে। ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর ব্যবহার্য গৃহস্থালি জিনিসপত্র, ক্ষুদ্র ও নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর ব্যবহৃত জিনিসপত্র হাজার বছরের চাষাবাদের উপকরণ এবং ধমীয় উপাসনার নানাবিধ দ্রব্যাদি সাজানো রয়েছে। শুধু তাই নয় পাথরের উপর লেখা চীন, নেপালি লিপির মুদ্রণ সংরক্ষিত রয়েছে।

মির্জাপুর শাহী মসজিদ : মির্জাপুর শাহী মসজিদ। একটি প্রাচীনতম মসজিদ। এটি আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে অবস্থিত। পঞ্চগড় শহর থেকে যার দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার। প্রত্নতান্ত্রিক নিদর্শনযুক্ত মসজিদের শিলা লিপিতে ১৬৫৬ সালে নির্মাণ করার ইতিহাস লিপিবদ্ধ রয়েছে। মালিক উদ্দীন নামে মির্জাপুর গ্রামের এক ব্যক্তি এই ঐতিহাসিক মসজিদটি নির্মাণ করেন। মালিক উদ্দীনের নামে মির্জাপুর গ্রাম প্রতিষ্ঠিত বলে জনশ্রুতি রয়েছে। অনেকে মনে করেন, ১৬৫৬ সালে মুঘল শাসক শাহ সুজার শাসনামলে এ মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল। মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৪০ ফুট ও প্রস্থ ২৫ ফুট। মসজিদের সামনের দেয়ালে চিত্রাঙ্কন ও বিভিন্ন কারুকার্য রয়েছে। প্রতিটি কারুকার্য আলাদাভাবে অঙ্কিত। মসজিদের একই সারিতে তিনটি গম্বুজ রয়েছে। প্রতিটি গম্বুজের কোনায় একটি করে মিনার রয়েছে। মসজিদে ফার্সি ভাষায় একটি শিলা লিপি রয়েছে। শিলা লিপি থেকে ধারণা করা হয় এটি মুঘল আমলে নির্মিত হয়েছে।

তেতুঁলিয়া ডাক বাংলা : তেতুঁলিয়া ডাক বাংলা একটি ঐতিহাসিক স্থান। এটি হিমালয়ের ঝর্ণা ধারা দিয়ে ভারতের সীমান্ত বরাবরে প্রবাহিত মহানন্দা নদীটির তীরে অবস্থিত। ভিক্টোরিয়ান রীতিতে কুচ বিহারের রাজা ভূমি থেকে প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিটার উঁচু পাড়ের উপর এই ডাক বাংলা নির্মাণ করেছিলেন। বর্ষা মৌসুমে তেঁতুলিয়া ডাক বাংলা থেকে মহানন্দা নদীর অপূর্ব সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এছাড়া হেমন্ত ও শীতকালে তেঁতুলিয়া ডাক বাংলা থেকে পৃথিবীর তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্গা দেখা যায়। তেঁতুলিয়া ডাক বাংলাটি একটি ঐতিহাসিক পিকনিক কর্ণার বটে।

বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট : বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট একটি ঐতিহ্যবাহী স্থল বন্দর। বাংলাদেশ-ভারত শূন্য রেখার পাশেই এই স্থল বন্দরটি অবস্থিত। এখান থেকে নেপালে দূরত্ব ৬১ কিলোমিটার, ভুটান ৬৮ কিলোমিটার, চীন মাত্র ২০০ কিলোমিটার। ভারতের অন্যতম শিলিগুড়ির দূরত্ব মাত্র ৫ কিলোমিটার। দার্জিলিং-এর দূরত্ব মাত্র ৫৮ কিলোমিটার। প্রতিনিয়ত এখানে হাজার পর্যটকের ভিড় লক্ষণীয় বটে।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) যৌথ প্যারেড : বাংলাবান্ধা স্থল বন্দরের শূন্য রেখায় বিজিবি ও বিএসএফ সপ্তাহে শনি ও মঙ্গলবার দু’দিন যৌথ প্যারেড করেন। দু’দেশের যৌথ প্যারেড দেখতে দু’দেশের সব বয়সী মানুষেরা ভিড় জমায়।

মহারাজার দিঘী : ভিতরগড় মহারাজার দিঘী। স্বচ্ছ জল রাশির বিরাট দিঘী। পঞ্চগড় জেলা শহর থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার উত্তর পূর্বে অমর খানা ইউপির ভারতীয় সীমান্ত ঘেষা ভিতরগড় এলাকায় অবস্থিত। এ দিঘীর জমি ৫৪ একর। দিঘীর পাড়সহ আয়তন উত্তর-দক্ষিণে ৮০০ গজ ও পূর্ব-পশ্চিমে ৪০০ গজ। পাড়ের উচ্চতা ২০ ফুট। দিঘীর চারদিকে ১০টি ঘাট রয়েছে। ঘাটের উভয় পাশে ইট ও মাটি দিয়ে নির্মিত সু উঁচু পাড়ে সবুজ গাছ-গাছালি। কোলাহল মুক্ত গাছ-গাছালির নিবিড় ছায়া ঘেরা দিঘীর পাড়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বিস্তীর্ণ জলরাশির ঢেউ উপভোগের মজাই আলাদা। নানান পাখির কূজনে মোহিত। ভ্রমণ পিপাসুরা এখানে ভিড় জমায়।

বোদেশ্বরী মন্দির : বোদেশ্বরী মন্দির। এটি বোদা উপজেরার ৫ নম্বর বড় শশী ইউনিয়নে অবস্থিত। করতোয়া নদীর তীরে কারুকার্য মন্ডিত মনোরম পরিবেশে বোদেশ্বরী মহাপীঠ মন্দির অবস্থিত। প্রায় ২ দশমিক ৭৮ একর জায়গাজুড়ে মন্দিরের অবস্থান। মন্দিরের নামানুসারে বোদা উপজেলার নাম করণ করা হয়েছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে।

কিভাবে যাবেন?
ঢাকা থেকে হানিফ, শ্যামলী, নাবিল কোচ এবং অনান্য কোচে পঞ্চগড়ে আসতে পারবেন। নন-এসি কোচে ১০০০ থেকে ১১০০ টাকা এবং এসি কোচে ১৩০০ থেকে ১৯০০ টাকা ভাড়া। ট্রেনে আসতে চাইলে ঢাকা-কমলাপুর থেকে একতা, পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, দ্রুতযান এবং একতা মেইল ট্রেনে আসতে পারেন। শ্রেণি অনুযায়ী টিকিটের ভাড়া জনপ্রতি ৬৯৫ থেকে ২৩৯৮ টাকা।

কোথায় থাকবেন?
ভ্রমণ পিপাসুরা ভ্রমণে এসে কোথায় থাকবেন? এখানে বেশ কিছু আবাসিক হোটেল ও রেষ্ট হাউজ রয়েছে। এসি, নন-এসি দু’ধরনের রুমের আবাসিক ব্যবস্থা রয়েছে। ভাড়া তুলনামূলকভাবে কম। সেন্ট্রাল গেস্ট হাউস, হোটেল মৌচাক, হোটেল রাজ নাগর, হিলটন, হোটেল এইচ কে প্যালেস ইত্যাদি। এছাড়া সরকারি পঞ্চগড় রেষ্ট হাউস, তেতুঁলিয়া ডাক বাংলা রয়েছে। এসব হোটেলে থাকতে হলে রাতেই সিট বুক করতে হবে।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews