জাতিসংঘের প্রতিবেদন

বিশ্বব্যাপী ক্যান্সারের মতো ছড়াচ্ছে সাইবার অপরাধ

পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সাইবার অপরাধ ক্যান্সারের মতো ছড়িয়ে পড়ছে বলে সতর্কতা দিয়েছে জাতিসংঘ। অপরাধী চক্র ক্রমে তাদের নেটওয়ার্ক বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিচ্ছে। সাইবার প্রতারণার মুখে এশিয়ার দেশগুলো সাম্প্রতিক সময়ে ৩৭ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতির শিকার হয়েছে। অপরাধ চক্রগুলো প্রতারণামূলক বিনিয়োগ, ক্রিপ্টোকারেন্সি, প্রেমের ফাঁদসহ নানা ধরনের অনলাইন স্ক্যামের মাধ্যমে প্রতিবছর কয়েক হাজার কোটি ডলার হাতিয়ে নিচ্ছে। গত সোমবার জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধবিষয়ক সংস্থার (ইউএনওডিসি) প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এশিয়ায় ওই বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির পেছনে রয়েছে শক্তিশালী অপরাধ চক্র। তারা মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী অঞ্চল, কম্বোডিয়া ও লাওসের তথাকথিত ‘বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ থেকে কার্যক্রম চালায়। তারা মূলত কাজের প্রলোভনে পাচারের শিকার নারী-পুরুষকে অমানবিক পরিবেশে কাজ করতে বাধ্য করে। জাতিসংঘ মনে করে, বৈশ্বিকভাবে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ আরও অনেক বেশি।

জাতিসংঘের তথ্যমতে, এশিয়া ছাড়িয়ে অপরাধ চক্র এখন দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।

ইউএনওডিসির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আঞ্চলিক প্রতিনিধি বেনেডিক্ট হফম্যান বলেন, অপরাধ চক্র ক্যান্সারের মতো ছড়িয়ে পড়ছে। এক জায়গায় দমন করা হলেও শিকড় উপড়ে ফেলা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। অপরাধীরা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়ানোর কৌশল শিখে যাচ্ছে এবং তাদের অপরাধ কার্যক্রম বৈশ্বিকভাবে সম্প্রসারিত হচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অপরাধ চক্রগুলো আফ্রিকার জাম্বিয়া, অ্যাঙ্গোলা, নামিবিয়াসহ বিভিন্ন দেশে ঘাঁটি গেড়েছে। এমনকি ফিজি ও ভানুয়াতুর মতো দ্বীপরাষ্ট্রেও পৌঁছে গেছে তারা। আর অর্থ পাচারের জন্য তারা এখন দক্ষিণ আমেরিকার মাদক চক্র, ইতালির মাফিয়া ও আয়ারল্যান্ডের অপরাধ চক্রের সঙ্গেও জোট গড়েছে।

নতুন ডিজিটাল মুদ্রা ক্রিপ্টোকারেন্সি তৈরি ও লেনদেন যাচাইয়ের জন্য ব্যবহৃত পদ্ধতি ‘ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং’কে এই অপরাধীরা বেআইনি অর্থ আড়াল করার হাতিয়ারে পরিণত করেছে। ২০২৩ সালের জুনে লিবিয়ার এক সশস্ত্র গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং কেন্দ্র থেকে ৫০ জন চীনা নাগরিককে গ্রেপ্তার করে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। একই সময়ে চীনের সহায়তায় মিয়ানমারে পরিচালিত এক অভিযানে পাচার হওয়া প্রায় সাত হাজার শ্রমিককে উদ্ধার করা হয়।

জাতিসংঘ বলছে, অপরাধ চক্রগুলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে নতুন ও অভিনব সব উপায় খুঁজে বের করছে। তারা এখন নিজেদের ডিজিটাল ইকোসিস্টেম তৈরি করছে, যেখানে এনক্রিপ্টেড মেসেজিং অ্যাপ, পেমেন্ট অ্যাপ ও ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়িয়ে চলা সম্ভব হচ্ছে।

এই নেটওয়ার্কগুলোর অর্থায়ন বন্ধে সব দেশকে সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। ইউএনওডিসি সতর্ক করেছে, পরিস্থিতি এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, অপরাধ চক্রগুলো স্বাধীনভাবে যে কোনো জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাদের গতিবিধি ঠেকানো ক্রমে কঠিন হয়ে পড়ছে। 



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews