ছবির উৎস, Subaas Shrestha/NurPhoto via Getty Images
ছবির ক্যাপশান,
যোগী আদিত্যনাথের যে পোস্টারকে ঘিরে বিতর্কের সূত্রপাত
Author,
রজনীশ কুমার
Role,
বিবিসি সংবাদদাতা
৩৩ মিনিট আগে
নেপালে রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দাবিতে সম্প্রতি রাস্তায় নামছে সেখানকার মানুষ। তারা নেপালে হিন্দু রাষ্ট্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিও জানাচ্ছে।
নেপালের সাবেক রাজা জ্ঞানেন্দ্র বীর বিক্রম শাহ রোববার কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে, তাকে স্বাগত জানানোর জন্য হাজার হাজার মানুষ অপেক্ষা করছিলেন।
নেপালের সাংবাদিকদের তথ্য অনুযায়ী, সেদিন তার অন্তত দশ হাজার সমর্থক বিমানবন্দরের প্রধান ফটকে উপস্থিত ছিলেন। তাদের স্লোগান দিতে শোনা যায়– 'নারায়ণহিতি খালি করো, আমাদের রাজা আসছেন।'
নারায়ণহিতি হলো নেপালের রাজপ্রাসাদ, যেখানে রাজা থাকতেন।
ওই দেশে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহকে জনসম্মুখে প্রায় দেখা যায়নি বললেই চলে। কিছু বিশেষ অনুষ্ঠানের সময় তাকে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিতে দেখা গেছে। তবে গত কয়েক মাস ধরে তিনি বেশ সক্রিয়।
নেপালের সরকারের বিষয়ে জনগণের হতাশা রাজতন্ত্রের সমর্থকদের একটা সুযোগ করে দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
নেপালে কিছু ঘটলেই, সবার নজর থাকে ভারতের দিকে। গত রোববার কাঠমান্ডুতে জ্ঞানেন্দ্র শাহকে স্বাগত জানাতে আসা সমর্থকদের ভিড়ে এক ব্যক্তি হাতে ছিল ভারতের উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের ছবি লাগানো পোস্টার।
জ্ঞানেন্দ্র শাহের পোস্টারের ঠিক পাশে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর ছবি নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ওই ব্যক্তি। এই ছবি প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই নেপালে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে, ভারতের সঙ্গে এই আন্দোলনের কোনো যোগ আছে কি না সেই বিষয়েও।
ছবির উৎস, @bishnurijal1/X
ছবির ক্যাপশান,
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাজনীতিবিদ বিষ্ণু রিজালের পোস্ট
প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট পার্টি অফ নেপালের (ইউনিফাইড মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিষ্ণু রিজাল।
তিনি জ্ঞানেন্দ্র শাহের পোস্টারের পাশে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর ছবি হাতে নিয়ে দাঁড়ানো ব্যক্তির ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করে লিখেছেন, "এটা কিন্তু ১৯৫০-এর যুগ নয়, যে সময়ে ভারতীয় দূতাবাসে আশ্রয় নিতে দিল্লিতে উপস্থিত হওয়া ত্রিভুবন শাহকে আবার সিংহাসনে বসিয়ে দিয়েছিল ভারত। গণআন্দোলনের পর ক্ষমতাচ্যুত জ্ঞানেন্দ্রকে আবার সিংহাসনে বসানোর জন্য লোভ না দেখালেই ভালো হবে।"
বিষ্ণু রিজাল আরও লিখেছেন, "যে যোগীর ছবি নিয়ে প্রদর্শন করা হয়েছে, সেই যোগীই কিন্তু কুম্ভ মেলায় অংশ নেওয়ার জন্য জ্ঞানেন্দ্রকে আমন্ত্রণ জানাননি। যদিও ৫০ কোটি মানুষ সেখানে স্নান করেছেন। জ্ঞানেন্দ্র আবার নিজেকে 'হিন্দু হৃদয় সম্রাট' বলে পরিচয় দেন।"
"গণতন্ত্রের বিরোধিতা করে তিনি একে বিদেশিদের ব্যবস্থা বলে অভিহিত করছেন। এই কথা বলে তিনি জনতাকে তো অপমান করেছেনই, পাশাপাশি আবার রাজা হওয়ার জন্য বিদেশিদের দালালি করায় তার তথাকথিত জাতীয়তাবাদের মুখোশটাও খুলে গেছে।"
উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগীর ছবি প্রসঙ্গে মি. রিজাল বলেছেন, জ্ঞানেন্দ্র শাহ আবার রাজা হওয়ার জন্য "বিদেশিদের দালালি করছেন।"
রবীন্দ্র মিশ্র রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টির সিনিয়র সহ-সভাপতি। রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টির (আরপিপি) প্রতি জ্ঞানেন্দ্র শাহের সমর্থন রয়েছে।
নেপালে রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দোলনের সঙ্গে রবীন্দ্র মিশ্র যুক্ত রয়েছেন। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল যে, জ্ঞানেন্দ্র শাহের পোস্টারের পাশে যোগী আদিত্যনাথের পোস্টার কীভাবে এল এবং এর অর্থই বা কী?
উত্তরে মি. মিশ্র বলেছেন, "লাখো মানুষের ভিড়ে কে কার ছবি এনেছিল তা আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারব না। যোগী আদিত্যনাথের পোস্টার নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন মাত্র একজন। ওই ব্যক্তি জানিয়েছেন, তার নাম- প্রদীপ বিক্রম রানা।"
"যখন লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নামেন, তখন এমন অনেক কিছু ঘটে যায় যা হওয়া উচিত ছিল না। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে রাস্তায় নেমেছি। কোথাও কোনো রকম সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি তার প্রশংসা করতে হবে। কিন্তু লোকে কি নিয়ে কথা বলছে? বলছে যে একজন ব্যক্তি যোগীর ছবি নিয়ে এসেছিল।"
ছবির উৎস, Getty Images
ছবির ক্যাপশান,
নেপালের সাবেক রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহের সমর্থনে জড়ো হওয়া জনতা
এই ঘটনার প্রসঙ্গে অন্য এক তত্ত্বের বিষয়েও উল্লেখ করেছেন রবীন্দ্র মিশ্রা।
তার মতে, "এই জাতীয় প্রদর্শনের সময় এমন ছোটখাটো ঘটনা ঘটে থাকে। আমি মনে করি রাজার এজেন্ডা এত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে যে তার ক্ষতি করতে সরকার নানা রকম কৌশল ব্যবহার করছে।"
"সরকার আমাদের আন্দোলনে ভয় পেয়েছে। জনগণ সরকারের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠছে এবং তারা রাজতন্ত্রের সমর্থনে এগিয়ে আসছে। আমাদের আন্দোলন থামাতে সরকার কাঠমান্ডুতে দুই মাসের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।"
ভারতের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেছেন, "নেপালের কমিউনিস্ট পার্টিগুলোর সবচেয়ে বড় ভণ্ডামি হলো, তারা যখন সরকারে থাকে তখন ভারতের পক্ষে থাকে এবং ক্ষমতা থেকে বেরিয়ে এলে ভারতকে গালি দেয়। তারা মনে করে ভারতকে গালি দেওয়া হলো জাতীয়তাবাদ।"
এখন প্রশ্ন হলো, যোগী আদিত্যনাথের পোস্টার হাতে থাকা ব্যক্তিটি কে? এই বিষয়ে রবীন্দ্র মিশ্রকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানিয়েছেন, প্রদীপ বিক্রম রানা নিজেকে হিন্দুত্ববাদী হিসেবে পরিচয় দেন।
এদিকে, রোববার কাঠমান্ডু জেলা প্রশাসন কিছু জায়গায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে ঘোষণা করেছে। সেই ঘোষণা অনুযায়ী, নয়ই মার্চ থেকে দুই মাসের জন্য এই নিষেধাজ্ঞার আদেশ কার্যকর থাকবে।
মহারাজগঞ্জে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়, শীতল নিবাস, দূতাবাস এলাকা লাইনচৌর, সিংহ দরবার, বালুওয়াতারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং সংসদ ভবনের আশেপাশের এলাকায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
এই সব জায়গায় পাঁচজনের বেশি জড়ো হতে পারবেন না। মিছিল করা বা বিক্ষোভ প্রদর্শন চলবে না।
নেপালে ২৩৯ বছরের রাজতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে ২০০৮ সালে গণতন্ত্রে এসেছিল। ওই দেশে ১৭ বছর হলো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে। কিন্তু এরই মাঝে ১১টা সরকার পরিবর্তন হয়েছে।
নেপালের গণতন্ত্র সম্পর্কে অনেকেই অনেক মন্তব্য করেছেন। তাদের মধ্যে অনেকে মনে করেন, যে সেখানকার নেতারা ক্ষমতার জন্য নানান 'কারসাজি' করতেও দ্রুত 'দক্ষ' হয়ে উঠেছেন।
ভারতে নেপালের সাবেক রাষ্ট্রদূত দীপ কুমার উপাধ্যায়ের মতে যে মূল সমস্যা হলো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে সরকারের কাছে নেপালের জনগণের যে প্রত্যাশা ছিল, তা পূরণ হয়নি।
দীপ কুমার উপাধ্যায় বলছেন, "নেপালের রাজনৈতিক দলগুলো যদি সতর্ক না হয়, তাহলে রাজতন্ত্রের প্রতি মানুষের আকর্ষণ আরও বাড়বে। আপাতত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো যদি এই বিষয়ে গুরুত্ব না দেয় তাহলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।"
"আমি নিজেও বিশ্বাস করি, যে লক্ষ্য নিয়ে গণতন্ত্র এসেছিল সেটা সেখান থেকে সরে এসেছে।"
নেপালের রাজনীতি ভারত দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এসেছে। ওই দেশে এমন অনেক ব্যক্তি রয়েছেন যারা বলে থাকেন সেখানকার রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত হয় কাঠমান্ডুস্থিত ভারতীয় দূতাবাস থেকে।
নেপালের রাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার সঙ্গে ভারতের দক্ষিণপন্থী রাজনীতির সম্পর্ক রয়েছে। ১৯৬৪ সালে, নেপালের সাবেক রাজা মহেন্দ্র নাগপুরে মকর সংক্রান্তির সমাবেশে ভাষণ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএস।
রাজা মহেন্দ্র এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছিলেন। তবে তার এই সিদ্ধান্তে ভারতের তৎকালীন কংগ্রেস সরকারকে বেশ অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছিল। সেই সময় আরএসএসের কমান্ড ছিল এমএস গোলওয়ালকরের হাতে। রাজা মহেন্দ্রর আগমনের কথা ঘোষণা করেছিলেন তিনি।
তবে আরএসএসের আমন্ত্রণ গ্রহণ করার আগে রাজা মহেন্দ্র দিল্লি সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন কি না সেই বিষয়টা স্পষ্ট নয়।
শ্রীমন নারায়ণ ১৯৬০-এর দশকে নেপালে ভারতের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার বই 'ইন্ডিয়া অ্যান্ড নেপাল: অ্যান এক্সারসাইজ ইন ওপেন ডেমোক্রেসি'-এ তিনি লিখেছেন, "যে সময় রাজা মহেন্দ্র আরএসএসের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছিলেন, তখন দিল্লিতে কংগ্রেস সরকারের সাথে তার সম্পর্ক খুব একটা ভালো ছিল না।"
"অন্যদিকে, আরএসএস নেপাল ও তার রাজাকে হিন্দু রাজ্য হিসেবে দেখত। আরএসএস নেপালকে রামরাজ্য হিসেবে দেখত যা মুসলিম শাসকদের আক্রমণে 'কলুষিত' হয়নি। আরএসএসের স্বপ্নে নেপাল অখণ্ড ভারতের অংশ ছিল।"
সাংবাদিক প্রশান্ত ঝা নেপালের বাসিন্দা। তিনি হিন্দুস্তান টাইমসের মার্কিন সংবাদদাতা। মি. ঝা তার বই, 'ব্যাটলস অফ দ্য নিউ রিপাবলিক'-এ লিখেছেন, "রাজা বীরেন্দ্রকে পঞ্চায়েত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিক্ষোভের মুখোমুখি হতে হয়েছিল।
সেই সময় বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (বিএইচপি) কাঠমান্ডুর রাজা বীরেন্দ্রর সমর্থনে একত্রিত হয়েছিল এবং তাকে বিশ্ব হিন্দু সম্রাট হিসাবে ঘোষণাও করেছিল। রাজপরিবারে হত্যার ঘটনার পর জ্ঞানেন্দ্রকে বিএইচপি এই উপাধিই দিয়েছিল।"
"গোরক্ষপুরের গোরক্ষনাথ মঠের সঙ্গে নেপালের শাহ রাজবংশের ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। নেপালে গোরক্ষনাথ মন্দিরের অনেক সম্পত্তি রয়েছে। এই তালিকায় স্কুল ও হাসপাতালও রয়েছে।"
ছবির উৎস, Getty Images
ছবির ক্যাপশান,
নেপালে যোগী আদিত্যনাথ, ২০১৬ সালের ছবি
নেপালের ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়ে খুশি ছিলেন না যোগী আদিত্যনাথ।
সাংবাদিক প্রশান্ত ঝা ২০০৬ সালে যোগী আদিত্যনাথকে ইউপিএ সরকারের নেপাল নীতি নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন।
সেই সময় তার প্রশ্নের উত্তরে যোগী আদিত্যনাথ বলেন, "একমাত্র নেহরুই ভারতকে বুঝতেন। নেহেরু জানতেন যে নেপালে রাজতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, তাই রানাদের শাসনকালের পর রাজাকে ক্ষমতায় বসানো হয়েছিল। নেপালে যাই ঘটুক না কেন, আমরা তার দ্বারা প্রভাবিত হই।"
"একমাত্র রাজতন্ত্রের মাধ্যমেই নেপালে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। নেপালের মাওবাদী এবং ভারতের নকশালপন্থীরা একসঙ্গে কাজ করে। নেপালে মাওবাদীরা ক্ষমতায় এলে ভারতের নকশালবাদীরাও উৎসাহিত হবে। বিজেপি ক্ষমতায় থাকলে এই ঘটনা কখনও হত না।"
নেপালে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত রঞ্জিত রায় তার বই 'কাঠমান্ডু ডিলেমা রিসেটিং ইন্ডিয়া-নেপাল টাইস'-এ উল্লেখ করেছেন, "তুলসী গিরি ছিলেন পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় নেপালের প্রথম প্রধানমন্ত্রী এবং তিনি আরএসএসের সদস্য ছিলেন। তিনি আমাকে বলেছিলেন যে নেপালকে হিন্দু রাষ্ট্র বানানোর ভাবনা তারই ছিল।"
"তুলসী গিরির সময় ভারতের হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর সঙ্গে নেপালের রাজপ্রাসাদের গভীর সম্পর্ক ছিল। নেপাল ১৯৬২ সালের সংবিধানের অধীনে একটা হিন্দু রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং রাজা মহেন্দ্র ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতা।"
তবে ভারতে যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, তার প্রভাব কিন্তু নেপালের রাজনীতিতে দেখা গিয়েছে। ভারতের বামপন্থীদের সঙ্গে নেপালের বামপন্থী এবং মাওবাদীদের সম্পর্ক ছিল। সমাজতন্ত্রীদের প্রভাবও দেখা গিয়েছে সেখানে। এখন যখন হিন্দুত্বের রাজনীতি ক্ষমতায় রয়েছে, তখন তাদের প্রভাব লক্ষণীয়।
ছবির উৎস, Getty Images
ছবির ক্যাপশান,
সরকারের প্রতি নেপালের জনগণের ক্ষোভ রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে
সাম্প্রতিক আবহে প্রশ্ন উঠছে যে নেপালে রাজতন্ত্রপন্থি আন্দোলনকে ভারত কী চোখে দেখবে।
এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল ডেনমার্কে নেপালের সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং কাঠমান্ডুর 'থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক সেন্টার ফর সোশ্যাল ইনক্লুশন অ্যান্ড ফেডারেলিজম' (সিইআইএসএফ) পরিচালনাকারী বিজয়কান্ত কর্ণের কাছে।
তিনি বলছেন, "আমার মনে হয় না ভারত নেপালে রাজতন্ত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো আন্দোলনকে সমর্থন করবে। জ্ঞানেন্দ্র বহুবার দিল্লি গিয়েছেন, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার সঙ্গে দেখা করেননি।"
"উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে অবশ্য জ্ঞানেন্দ্রর সাক্ষাৎ হয়। কিন্তু তার নেপথ্যেও গোরক্ষপুরের গোরক্ষনাথ মঠের সঙ্গে রাজপরিবারের ঐতিহাসিক যোগসূত্র রয়েছে।"
রবীন্দ্র মিশ্রের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল যে জ্ঞানেন্দ্রর শাহের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সাক্ষাৎ করেন না কেন?
এর জবাবে মি. মিশ্র বলেন, "আমি জানি না ভারতের মনে কী রয়েছে। তবে আমি ক্রমাগত বলে চলেছি যে করি যে নেপালে গণতন্ত্র আসার আগে ভারতের সঙ্গে তার আরও বিশ্বাসযোগ্য সম্পর্ক ছিল।"
প্রসঙ্গত, বিবাহ পঞ্চমী উপলক্ষে নেপালের জনকপুরে অবস্থিত জানকী মন্দিরে সেখানকার রাম মন্দির থেকে বরযাত্রী আসে। ইদানীং ভারতের অযোধ্যা থেকেও বরযাত্রী আসা শুরু হয়েছে।
ক্রমে স্থানীয় থেকে আন্তর্জাতিক মাত্রা পেয়েছে এই অনুষ্ঠান। সেখানে সমানভাবে রাজনৈতিক রংও লেগেছে।
উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও ২০১৮ সালে বরযাত্রী নিয়ে জনকপুরে গিয়েছিলেন।