বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তৎপর হয়ে উঠেছেন বিদেশিরা। সরকারের প্রতিনিধি ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে আগামী নির্বাচন নিয়ে জানতে চাইছেন তারা। মূলত নির্বাচনের সময় নিয়েই আগ্রহ দেখাচ্ছেন বিদেশিরা। এর পাশাপাশি কোন প্রক্রিয়ায় নির্বাচন হচ্ছে এবং এতে কোনো সহযোগিতা লাগবে কি না, তা নিয়েও কথা বলছেন তারা।

কূটনৈতিক সূত্র বলছে, জুলাই-আগস্টের গণ অভ্যুত্থানের পর বিশেষ পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নেওয়া বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সমর্থন আছে পশ্চিমা থেকে পুবের প্রায় প্রতিটি রাষ্ট্রের। সরকারের নেওয়া সংস্কার উদ্যোগের বিষয়েও জোরালো সমর্থন দিয়েছে বিশ্বের ক্ষমতাশালী রাষ্ট্রগুলো। সংস্কারের প্রয়োজনীয় আর্থিক সহযোগিতার প্রস্তাবও দিয়েছিলেন কেউ কেউ। কিন্তু বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার নয় মাসের মাথায় নির্বাচনের টাইমলাইন নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে দেশের অভ্যন্তরেই। এ কারণেই প্রতিটি আলোচনাতেই কবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তা জানতে চাইছেন বিদেশিরা। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন সম্প্রতি বলেছেন, যেসব দেশে গণতন্ত্রের চর্চা নেই সেসব দেশও বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন কবে হবে তা জানতে চায়। এ সরকার তো নিজে থেকে বলেছে, যথাশিগগির সম্ভব দায়িত্ব শেষ করে নির্বাচন দিয়ে রাজনীতিবিদদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে দেওয়া এ সরকারের অঙ্গীকার। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এক ধরনের স্থিতিশীলতা, এক ধরনের অনুমাননির্ভরতা থেকে তারা নির্বাচনের সময় জানতে চাইতে পারেন। কারণ, বিনিয়োগের প্রশ্ন আছে। তারা জানতে চাইতে পারেন, কী রকম পরিস্থিতি হবে বা কখন নতুন সরকার আসবে। এটা নিজেদের স্বার্থে তারা জানতে চাইতে পারেন। জানতে চাইলে বাংলাদেশে দায়িত্ব পালন করা ইউরোপের একটি দেশের শীর্ষ এক কূটনীতিক বলেন, প্রতিটি কূটনৈতিক বৈঠকে এখন মূল আলোচনা হলো বাংলাদেশের নির্বাচনের সময়। কারণ আগামী নির্বাচন নিয়ে সরকারের দেওয়া টাইমলাইন স্পষ্ট নয়। আমাদের সঙ্গে আলোচনায় রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকেও এই টাইমলাইনের বিষয়ে অনাস্থার কথাই জানানো হচ্ছে। তাই মূলত সবার আগ্রহ, আসলে কবে বাংলাদেশের নির্বাচন হচ্ছে? বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী এশিয়ার একটি দেশের মধ্যম সারির এক কূটনীতিক জানান, নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়ের পাশাপাশি নির্বাচনের ধরন নিয়েও আগ্রহ আছে কূটনৈতিক মহলে। বিগত তিন মাসের বাংলাদেশের বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহ এ আগ্রহ বাড়িয়ে দিয়েছে। দেশের পরিবেশ অস্থির হওয়ার মতো বিভিন্ন লক্ষণ দেখতে পাচ্ছেন অনেকেই। তাই নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা বেড়েছে। কারণ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের ক্ষমতার হস্তান্তর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াতেই দেখতে চায় সবাই। উল্লেখ্য, গত মাসের মাঝামাঝি ঢাকা সফর করে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী সচিব নিকোল চুলিকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল। তারা বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ প্রায় সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় তারা প্রত্যেক দলের কাছে আলাদা আলাদা করে নির্বাচনের সময় ও পদ্ধতি নিয়ে জানতে চেয়েছেন। সরকারের সঙ্গে আলোচনাতেও ছিল নির্বাচন প্রসঙ্গ। যুক্তরাষ্ট্রের এ প্রতিনিধি দলের পরপরই ঢাকা সফর করা চীনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিরাও রাজনৈতিক দলগুলো ও সরকারের সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে জানতে চেয়েছেন। গতকাল রাশিয়া ও জাপানের রাষ্ট্রদূত বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে আলাদা আলাদা বৈঠক করেন। দুই বৈঠক শেষেই বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে দুই রাষ্ট্রদূতই কথা বলেছেন এবং কত তাড়াতাড়ি নির্বাচন হতে যাচ্ছে সে সম্পর্কে জানতে চেয়েছে রাশিয়া ও জাপান। অন্যদিকে, নির্বাচনে কারিগরি সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে ইতোমধেই কাজ শুরু করেছে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের একটা চাপ বিদেশিদের পক্ষ থেকে তৈরি হচ্ছে বলে মনে করেন স্থানীয় রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন কবির বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাংলাদেশে গত তিনটি অসম্পূর্ণ নির্বাচনের পর মানুষের অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ একটা নির্বাচনের প্রত্যাশা খুবই স্বাভাবিক। এটা দেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উভয়েরই প্রত্যাশা। আমাদের উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে বাংলাদেশে সংস্কার প্রক্রিয়া শেষে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশা অস্বাভাবিক কিছু নয়।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews