Printed Edition

জাকিয়া সুফিয়ান

জাতীয় কবির ভাষায়-

ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে

এলো খুশির ঈদ

তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে

শোন আসমানি তাকিদ।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে- পবিত্র ঈদের খুশির ব্যাপারে আসমানি তাকিদ কি? একমাস পবিত্র রমজানের সিয়াম সাধনার পর ঈদুল ফিতরের আগমন। ঈদ শব্দের অর্থ আনন্দ। তাই ত্যাগের পর আনন্দ উপভোগ একটি আকর্ষণীয় বিষয়। এই ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে হলে রমজান মাসের প্রতি ফিরে তাকাতে হয়। যেহেতু ঈদের খুশি সম্পূর্ণভাবে রমজান মাসের ওপর নির্ভরশীল, ঠিক যেমন পরকালে বেহেশত লাভ দুনিয়াবি জিন্দেগির ওপর নির্ভরশীল। আসমানি তাকিদ হিসেবে রমজান কঠোর সাধনার মাস। এ মাস মুসলমানদের সওয়াব হাসিলের নির্ধারিত মৌসুমি মাস। এ মাসের একটি ফরজ অন্য মাসের ৭০টি ফরজের সমান। এ মাসের একটি নফল অন্য মাসের ফরজের সমান। এ মাসের এক টাকা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য খরচ করলে অন্য মাসে ৭০ টাকা খরচ করার সওয়াব পাওয়া যায়। একজন ভুখা লোককে আহার করালে ৭০ জনকে আহার করানোর সওয়াব পাওয়া যায়। মসজিদে গিয়ে যাদের নামাজ আদায়ের অভ্যাস তাদের জন্য রমজানুল মোবারক আরো খোশ খবর বয়ে এনেছে। কারণ মানুষ যখন উত্তমরূপে অজু করে একমাত্র নামাজের উদ্দেশ্যে মসজিদের পানে অগ্রসর হয় তখন তার প্রতি কদমেই নেকি বৃদ্ধি পেতে থাকে। তাই কোনো কোনো সাহাবায়ে কেরাম ছোট ছোট পদক্ষেপে মসজিদে গমন করতেন। সুতরাং অন্য সময় প্রতি পদক্ষেপে একটি সওয়াব লেখা হলে পবিত্র রমজান মাসে প্রতি পদক্ষেপে ৭০টি সওয়াব লেখা হয়। ইফতারির মধ্যে রয়েছে আরো পুণ্য। যে এই মাসে কোনো রোজাদার মানুষকে ইফতার করায় ফেরেশতারা রমজানের প্রতি রাত্রে তার প্রতি রহমত পাঠান অধিকন্তু তাকে রোজাদার মানুষের সমান পুণ্য দান করা হয় অথচ ইফতার গ্রহণকারীর পুণ্য কমানো হয় না কিন্তু শর্ত- অবশ্যই হালাল রুজি হতে হবে। এরপর পবিত্র রমজান সম্পর্কে আল্লাহ পাক হাদিসে কুদসিতে ইরশাদ করেছেন- ‘রোজা আমারই জন্য, আমিই এর প্রতিদান দেবো।’ সুতরাং দীর্ঘ প্রতিবেদনে প্রতীয়মান হলো, রমজান মাসে কায়মনোবাক্যে ইবাদত-বন্দেগিতে আত্মনিয়োগ করলে বেহেশত লাভ অবশ্যম্ভাবী।

ঈদের আনন্দ দু’ধরনের। এক প্রকার আনন্দ আধ্যাত্মিক, অন্য প্রকার বাহ্যিক। আধ্যাত্মিক আনন্দ তাদের জন্য যারা সংযম ও আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে রমজানের সুচিতা অর্জনে সক্ষম হয়েছেন এবং যাদের ইবাদত-বন্দেগি রাহমানুর রাহিমের দরবারে গ্রহণীয় হয়েছে। এতদোপলক্ষে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর রা:-এর ঈদের ঘটনাটি প্রণিধানযোগ্য। তৎকালীন আরব জাহানের মুসলমানরা যখন পবিত্র ঈদের আনন্দ উদযাপনেরত তখন হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রা: স্বীয় গৃহের কপাট বন্ধ করে এমনভাবে ক্রন্দনরত ছিলেন- চোখের অশ্রুতে দাড়ি মুবারক ভিজে গিয়েছিল। অবস্থা অবলোকন করে জনৈক সাহাবি তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আমিরুল মোমিনিন! সব লোক একান্তভাবে আজকে আনন্দ উপভোগ করছে অথচ এমন আনন্দঘন মুহূর্তে আপনি কেন চোখের অশ্রুতে বুক ভাসিয়ে দিচ্ছেন? উত্তরে তিনি বললেন, ‘যারা পবিত্র রমজান মাসে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে আল্লাহর মকবুল বান্দাদের তালিকাভুক্ত হতে পেরেছেন কেবলমাত্র তাদেরই উচিত ঈদের আনন্দ উপভোগ করা। আর যারা মকবুলিয়তের লিস্টিভুক্ত হতে পারেনি তাদের ক্রন্দন করাই উচিত। আমি তো জানি না পবিত্র রমজানের সিয়াম সাধনার দ্বারা আল্লাহর মকবুল বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হতে পেরেছি কি না।’ সুতরাং ঈদের আধ্যাত্মিক আনন্দ তারাই উপভোগ করতে সক্ষম যারা রমজান এক মাস আসমানি তাকিদ অনুসারে রমজানের বিধি-বিধান পালনের মাধ্যমে করুণাময় আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পেরেছেন।

মুসলিম জাহান বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশে। ঈদ উৎসবের তাৎপর্য অতি ব্যাপক। আল্লাহ তায়ালার এমন মহিমা বাংলার ধনী গৃহ হতে শুরু করে দিনমজুরের কুটিরেও ঈদের বাহ্যিক আনন্দ উপচেপড়ে। মধ্যবিত্ত, নি¤œবেতনভুক্ত চাকরিজীবী এবং নিরন্ন খেটে খাওয়া মানুষের বিপত্তি ঘটে সর্বাধিক। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে প্রত্যেক মুসলমান এ সময় তার প্রিয়জনদের মুখে হাসি ফোটাতে চান, সঞ্চয়ের শেষ অর্থ প্রদানের মাধ্যমে হলেও ক্রয় করতে ইচ্ছুক সুন্দর পোশাক ও আনুষঙ্গিক অন্য জিনিস। কিন্তু এ ব্যাপারে কয়জনই বা সফলকাম যেহেতু বাংলার অধিকাংশ লোক এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে এবং দারিদ্র্যই যাদের নিত্য অলঙ্কার। নবী করিম সা: কিভাবে ঈদুল ফিতরের আনন্দধারা অনাথ-এতিম বালকের মধ্যে সঞ্চারণ করেছিলেন তা শাইখ আহমদ শিহাব উদ্দীন আলকাল ইউবির ভাষায় বলতে চাই-

একদিন মহানবী সা: ঈদের নামাজে যাচ্ছেন। পথে দেখলেন ছেলেরা উৎফুল্ল অবস্থায় খেলছে। এক ছেলে বিষণœ অবস্থায় ছিন্ন বস্ত্র পরিধান করে এক কোণে বসে কাঁদছে। হুজুর সা: দুঃখী ছেলেটির কাছে গেলেন। জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার কি দুঃখ বাবা?’ ছেলেটি বলল, ‘আমার আব্বা যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। মা অন্য স্বামী গ্রহণ করেছেন। আমার সম্পত্তি যা ছিল তা খেয়ে আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছেন। এখন আমার না আছে বস্ত্র, না আছে খাদ্য। না আছে মাথা গোঁজার স্থান।’ হুজুর সা: তখন বললেন, ‘মুহাম্মদ যদি তোমার আব্বা হন, আয়েশা যদি তোমার আম্মা হন, আলী যদি তোমার চাচা হন, হাসান ও হোসাইন যদি তোমার ভাই হন তবে কি তুমি খুশি হবে?’ ছেলেটি বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ সা: অবশ্যই।’ রাসূলুল্লাহ সা: তার হাত ধরে তাকে গৃহে নিয়ে গেলেন। তাকে গোসল করালেন। উত্তম খাদ্য দ্বারা আহার করালেন। সুন্দর বস্ত্র পরিধান করালেন। ছেলেটি হাস্য বদনে অন্য ছেলেদের সাথে খেলতে গেল। ছেলেরা জিজ্ঞেস করল, কিছুক্ষণ আগে তুমি ক্রন্দন করছিলে, আর এখন হাসছ। কারণ কি? সে বলল, আমার বাবা ছিল না। এখন আমার বাবা রাসূলুল্লøাহ সা:, ভাই ছিল না, এখন ভাই হজরত হাসান ও হোসাইন। পেটে খাদ্য ছিল না, এখন পেটপুরে আহার করেছি। বস্ত্র ছিল না, এখন নতুন বস্ত্র পরিধান করেছি। সুতরাং এখন আমার কোনো দুঃখ নেই। অন্য ছেলেরা তখন দুঃখ করে বলল, হায়! আমার আব্বাও যদি সে যুদ্ধে শহীদ হতেন। নবী করিম সা:-এর ওফাৎ পর্যন্ত সেই এতিম ছেলেটি তাঁর কাছে ছিল। যখন হুজুর সা:-এর ওফাৎ হলো তখন ছেলেটি চিৎকার করে বলে উঠল, এখন আমি প্রকৃত এতিম হয়েছি। প্রকৃত দরিদ্র হয়েছি।

নবী করিম সা:-এর সে বাণী ভুলে গেছি বিধায় ঈদের আনন্দের ঝর্ণাধারা আজ অবরুদ্ধ। তাই জাতীয় কবির ভাষায় আক্ষেপের সুরে বলতে হয়-

কোথা সে মহান শক্তি সাধক আনিবে যে পুনঃ ঈদ?

ছিনিয়া আনিবে আসমান থেকে ঈদের চাঁদের হাসি,

ফুরাবে না কভু যে হাসি জীবনে, কখনো হবে না বাসি।

সমাধির মাঝে গণিতেছি দিন, আসিবেন তিনি কবে?

রোজা ইফতার করিব সকলে, সেই দিন ঈদ হবে।

লেখিকা : বিশিষ্ট প্রবন্ধকার ও সাহিত্যিক



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews