ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার যখন পতন হয়, তখন অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয়েছিল। হাসিনার সত্যি পতন হয়েছে, এ সম্বিত ফিরে পেতে তাদের সময় লেগেছে। সে সময় তাকে ভারতের আশ্রয় দেয়া নিয়ে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া অনেকের মধ্যেই হয়নি। হাসিনা পালিয়েছে এটাই সবচেয়ে বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ভারতে আশ্রয় পাওয়া নিয়ে মানুষের মধ্যে এমন প্রবণতা কাজ করেছে যে, ভারত হাসিনার প্রভু এবং তাকে আশ্রয় দেবে, এটাই স্বাভাবিক। আবার ভারত কেন পতিত, পরিত্যক্ত এক ফ্যাসিস্টকে আশ্রয় দিয়েছে, এ প্রশ্নও সচেতন মহলে জেগেছে। কারণ, পৃথিবীতে পরাজিতের পক্ষে কেউ থাকে না। তাকে কেউ মনে রাখে না। তবে ভারত পরাজিত তার সেবাদাসী হাসিনাকে ফেলে দেয়নি। মনে রেখেছে। কেন ফেলে দেয়নি, তা এখন ধীরে ধীরে পরিস্কার হচ্ছে। হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে তাকে এখন দাবার ঘুঁটি বানিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একের পর এক ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তাকে বাংলাদেশে পুনর্বাসনের কাজ করছে। কারণ, হাসিনাকে তার প্রয়োজন। হাসিনা তার ঘরের মানুষ। ’৮১ সালে তিনি যখন দেশে ফিরেন, তখনও ভারত থেকেই ফিরেছিলেন। সেখান থেকেই প্রতিজ্ঞা করে এসেছিলেন, বাংলাদেশের মানুষের ওপর তার পিতা হত্যার প্রতিশোধ নেবেন। এসে তাই করেছেন। এখন আবার ছাত্র-জনতার দাবড়ানিতে সেই ভারতে গিয়েই আশ্রয় নিয়েছেন। জীবনের পড়ন্ত বেলায়ও সেখান থেকে বাংলাদেশের মানুষের ওপর তার প্রতিশোধস্পৃহা কমেনি। নানা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন।

দুই.
গণহত্যার দায়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিচার সময়ের দাবি। কারণ, রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকে এবং বিরোধীদলে থেকে তিনি দেশ ও মানুষের যে ক্ষতি করেছেন, তা ক্ষমা করা যায় না। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যেভাবে নির্বিচারে নৃশংসভাবে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ হত্যা করেছেন, তা অকল্পনীয়। সাম্প্রতিক ইতিহাসে এমন নজির নেই। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, এ নিয়ে হাসিনার মধ্যে তো বটেই, তার অনুসারী কারো মধ্যেই বিন্দুমাত্র কোনো আফসোস বা অনুশোচনা নেই। ‘কাজটি ঠিক হয়নি’ এমন নিরস কথাও বলতে শোনা যায় না। উল্টো এদেশে রয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ভাব এমন, ‘যা করেছে ঠিক করেছে’। মানুষ এমন বিবেকবর্জিত, অমানবিক হয় কী করে! তাদের এ ধরনের আচরণ থেকেই বোঝা যায়, আওয়ামী লীগারদের চরিত্র কেমন। তাদের কাজই হচ্ছে, তাদের নেত্রী যিনি সীমারকেও হার মানিয়েছেন, তার অনুসরণ করা এবং মানুষের ওপর প্রতিশোধ নেয়া। ফলে ভারত মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে এমনই এক সাইকোপ্যাথ হাসিনাকে বেছে নিয়েছে যিনি জন্মসূত্রে বাংলাদেশি, অথচ বাংলাদেশকে নিজের দেশ মনে করেন না এবং যিনি সবসময় বাংলাদেশের মানুষের ওপর প্রতিশোধ নিয়ে আনন্দ পান। এ কারণেই ভারত ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে রেখেছে এবং তিনি একের পর এক ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন। তার নেতাকর্মীদের দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে চলেছেন। এর অর্থ হচ্ছে, শেখ হাসিনার জীবদ্দশায় তার ষড়যন্ত্র থেকে বাংলাদেশের নিস্তার নাই। ভারত তাকে দিয়ে এ ষড়যন্ত্র অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাবে। ইতোমধ্যে গণহত্যার অভিযোগে হাসিনাকে ভারতের কাছ থেকে অন্তর্বর্তী সরকার ফেরত চেয়েছে। ভারত এতে কোনো রা শব্দ করেনি। এটা এখন পরিস্কার, ভারত তাকে ফেরত দেবে না। দিলেই বাংলাদেশে তার একমাত্র ষড়যন্ত্রের কাঠি হারিয়ে যাবে। প্রশ্ন হচ্ছে, বিএনপি কি হাসিনার বিচার চায়? এ নিয়ে দলটির জোরালো অবস্থান পরিলক্ষিত হচ্ছে না। হাসিনার বিচার চেয়ে দলটির দৃঢ় অবস্থান নেয়া এবং বক্তব্য-বিবৃতি দিতে দেখা যায় না। জামায়াতের পক্ষ থেকেও শেখ হাসিনার বিচারের জোরালো দাবি করতে দেখা যায় না। এর কারণ কি? অথচ সবার আগে ফ্যাবিবাদবিরোধী দলমত নির্বিশেষে হাসিনার বিচারের দাবিটি সমস্বরে উচ্চারিত হওয়ার কথা। শুধু সমন্বয়কদের নিয়ে গড়া জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষ থেকে হাসিনার বিচারের জোরালো দাবি করা হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, হাসিনা যে তার বাহিনী দিয়ে নিষ্ঠুরভাবে গুলি করে শিশু থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, ফুটপাতের হকার ও সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছেন, তাদের আত্মদান কি রাজনীতিতে ঠাঁই হবে না? তাদের জীবন ও পঙ্গুত্বের মধ্য দিয়ে অর্জিত ফ্যাসিস্টমুক্ত বাংলাদেশে তাদের হত্যার বিচার পাবে না? রাজনীতিতে কি মানবিকতা বলে কিছু নেই? তাদের জীবনের বিনিময়ে যে ফ্যাসিস্টের বিদায় হলো, সেই ফ্যাসিস্ট ও তার প্রভূ মোদির সাথে তাদের জীবন উৎসর্গের ভূমিতে দাঁড়িয়ে রাজনীতি বা কূটনীতি করতে হবে? সঙ্গতকারণেই একজন গণহত্যাকারি হিসেবে হাসিনার বিচারের জোরালো দাবি সবসময়ের জন্য থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে এ ধরনের দাবি দেখছি না, যা খুবই দুঃখজনক। বলা বাহুল্য, হাসিনার বিচারের সাথে ভারতের আধিপত্যবাদ থেকে মুক্ত থাকার পথও যুক্ত। হাসিনার বিচার হওয়া মানে ভারতের অন্যায় আচরণের বিচার পাওয়া। ফলে এ বিচারের মাধ্যমে ভারতের আধিপত্যবাদকে কবর দেয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এ সুযোগ হাতছাড়া করলে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব চিরদিনের মতো হারিয়ে যাবে। এটা এখন স্বীকৃত, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত যার বন্ধু, তার শত্রুর প্রয়োজন নেই। ফলে এ অঞ্চলের সব দেশই তাকে এখন শত্রু রাষ্ট্র মনে করে। বাংলাদেশের আগেই দেশগুলো ভারত থেকে দূরে সরে গেছে। কেবল হাসিনাকে দিয়ে ভারত বাংলাদেশকে একটি করদরাজ্যে পরিণত করে রেখেছিল। রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকে হাসিনা রাষ্ট্র ও জনগণের প্রতি যে অপরাধ ও অন্যায় করেছেন, তার বিচার হতেই হবে। না হলে, বাংলাদেশ কখনোই ভারতের অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে সোজা হয়ে প্রতিবাদ করতে পারবে না। চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারবে না। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের প্রতিশোধ নেয়ার বড় অস্ত্র হচ্ছে হাসিনা। সেই হাসিনার বিচার চাওয়া নিয়ে বিএনপিসহ অন্যদলগুলোর জোরালো কোনো দাবি পরিলক্ষিত হচ্ছে না। তারা যেন ভারতের প্রতি নমনীয় মনোভাব পোষণ করছে। তাদের আচরণে এমন প্রবণতা পরিদৃষ্ট হচ্ছে যে, ভারতের আশীর্বাদ ছাড়া ক্ষমতায় যাওয়া যাবে না। এই ট্রমা থেকে তারা এখনো বের হয়ে আসতে পারছে না। তাদের মধ্যে এখনো ভারতের আশীর্বাদে ক্ষমতায় যেতে না পারার শঙ্কা কাজ করছে। এটা মেরদ-হীন রাজনৈতিক অবস্থান ছাড়া কিছু নয়।

তিন.
বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে বড় দল বিএনপি এবং ধরে নেয়া যায় নির্বাচন হলে তার ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। দেশের অভিভাকতুল্য দলও এটি। হাসিনার বিদায় এবং আওয়ামী লীগের গুপ্ত দলে পরিণত হওয়ায় রাজনীতিতে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, এ শূন্যতাকে সবচেয়ে বেশি কাজে লাগাতে পারে বিএনপি। দেশের মানুষের মনোভাব বুঝে তাদের কান্ডারি হওয়ার এমন সুযোগ দলটির আর মিলবে না। ঠিক এমন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল, পঁচাত্তরে শেখ মুজিবের পতন ও আওয়ামী লীগের অস্তিত্বহীন হওয়ার মধ্য দিয়ে। তখন রাজনীতিতে যে বিশাল শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছিল, তা কাজে লাগিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। তিনি তাঁর বিচক্ষণতা দিয়ে দেশের মানুষের কান্ডারি হয়েছিলেন। গণভোট দিয়ে নিজের অবস্থান সংহত করেছিলেন। মানুষও তাঁকে অকুণ্ঠচিত্তে সমর্থন দিয়েছিল। এই রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণে জিয়াউর রহমান গড়ে তুলেছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। তিনি রাজনৈতিক শূন্যতাকে কাজে লাগিয়ে একটি রাজনৈতিক দল গঠন এবং তার উপর ভিত্তি স্থাপন করে দিয়েছেন। তার প্রতিষ্ঠিত বিএনপি বারবার ক্ষমতায় এসেছে, মানুষের কাছে গ্রহণীয় ও বরণীয় হয়েছে। হাসিনা ও আওয়ামী লীগের পতনের পর যে রাজনৈতিক শূন্যতা চলছে, এ শূন্যতা কাজে লাগিয়ে দেশের অবিসংবাদিত দলে পরিণত হওয়ার সুযোগ বিএনপির হয়েছে। এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে দলটি। এ সময় দলটির ভুল পদক্ষেপ নিজের প্রতি তো বটেই দেশের জন্যও মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনবে। বিএনপিকে বুঝতে হবে, দেশের মানুষ এখন আর ভারতের তাঁবেদারি করা কোনো দলকে ক্ষমতায় যাওয়া দূরে থাক, রাজনীতিতেও দেখতে চায় না। ফলে ক্ষমতায় যাওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের সুদৃষ্টি প্রয়োজন, এমন মনোভাব যদি বিএনপির মধ্যে থেকে থাকে, তাহলে তা ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনবে। এখন বিশ্ব রাজনীতি পরিবর্তন হয়ে গেছে। প্রত্যেক দেশ প্রত্যেক দেশের স্বার্থ বুঝে ভারসাম্যমূলক সম্পর্ক বজায় রাখে। বড় বা ছোট দেশ বলে কিছু নেই। ছোট দেশের যেমন বড় দেশের কাছে স্বার্থ রয়েছে, তেমনি বড় দেশেরও ছোট দেশের কাছে স্বার্থ রয়েছে। এখানে চোখ রাঙানির কোনো ব্যাপার নেই। পারস্পরিক স্বার্থের ভারসাম্যমূলক সম্পর্ক বজায় রেখেই তারা চলে। এমন নয় যে, এক দেশ আরেক দেশ ছাড়া অচল। হর্ণ অফ আফ্রিকা হিসেবে পরিচিত প্রায় দশ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তন এবং ৯৪ ভাগ মুসলমানের দেশ জিবুতি একটি ল্যান্ডলকড দেশ। এর দক্ষিণে সোমালিয়া, দক্ষিণ-পশ্চিমে ইথোপিয়া, উত্তরে ইরিত্রিয়া ও রেড সি। ইরিত্রিয়ার সাথে তার সম্পর্ক খুব ভালো নয়। কারণ, ইরিত্রিয়া চীন প্রভাববিত, অন্যদিকে জিবুতি যুক্তরাষ্ট্র প্রভাবিত। জিবুতি ইরিত্রিয়ার চেয়ে অনেক ছোট হলেও তার ঠেলায় ইরিত্রিয়াকে তটস্থ থাকতে হয়। জিবুতির কোনো সমুদ্র পথ বা বন্দর নেই। ফলে তাকে ইরিত্রিয়ার বন্দর ব্যবহার করা ছাড়া বণিজ্য করার সুযোগ কম। অন্যদিকে, ভৌগলিক অবস্থান ও বিশ্ব রাজনীতির কারণে জিবুতির কাছেও ইরিত্রিয়ার স্বার্থ রয়েছে। ফলে দুই দেশের রাজনৈতিক সম্পর্ক যেমনই থাকুক, পারস্পরিক স্বার্থে একে অপরের উপর নির্ভরশীল। এই স্বার্থ রক্ষা করে ইরিত্রিয়া যেমন জিবুতিকে বন্দর ব্যবহার করতে দিচ্ছে, তেমনি জিবুতিও ইরিত্রিয়ার স্বার্থ রক্ষা করে চলেছে। আমাদের মানসিকতা হচ্ছে, এমন যে, আমাদের চারপাশে ভারত, তাই ভারতের বিপক্ষে যাওয়া বা তার কথার বাইরে যাওয়া মানে বিপদ। এমন মানসিকতার সুযোগই নিচ্ছে ভারত। অথচ জিবুতিও ইরিত্রিয়ার পেটের ভেতরে থেকেই তাকে তটস্থ রেখেছে। আর ভারতকে কাবু করার অনেক কৌশল অমাদের হাতে রয়েছে। বিশেষ করে সেভেন সিস্টার্সের সাথে যোগাযোগ ও নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য বাংলাদেশ ছাড়া ভারতের কোনো উপায় নেই। ভারতের কেউ কেউ যখন ভয় দেখায় ফেনী থেকে কেটে দিলে গোটা চট্টগ্রাম অঞ্চল আলাদা হয়ে যাবে, তেমনি আমরাও যদি শিলিগুঁড়ি করিডোর বা চিকেন নেক বন্ধ করে দেই, তাহলে সেভেন সিস্টার্সও ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এমন আরও অনেক কৌশল রয়েছে। অর্থাৎ ভারতের সাথে বার্গেইনিং করে চোখে চোখ রেখে ভারসাম্যমূলক স্বার্থ রক্ষা করা বাংলাদেশের পক্ষে খুবই সহজ। শুধু প্রয়োজন রাজনৈতিক দলগুলোর পরোক্ষ-প্রচ্ছন্ন ভারত তোষণ নীতি বা ভারত ছাড়া আমাদের চলবে নাÑএমন মনোভাব পরিহার করা। রাজনৈতিক শূন্যতায় বিএনপির যে সুযোগ এসেছে, এটা যদি কাজে না লাগাতে পারে, তাহলে দলটিকে আজীবন পস্তাতে হবে। দলটিকে সত্যিকারের জাতীয়তাবাদী করে তুলতে হলে প্রথমত ভারতের সাথে ভারসাম্যমূলক স্বার্থসংশ্লিষ্ট সম্পর্ক ছাড়া হুজুর হুজুর নীতি বর্জন করতে হবে। দ্বিতীয়ত, আমাদের ৯২ ভাগ মুসলমানের চেতনা, মূল্যবোধ ও নীতি-নৈতিকতাকে ধারন এবং সংরক্ষণ করতে হবে। দলটি মধ্যপন্থী হিসেবে পরিচিত হলেও এতে ডানপন্থার প্রভাব বেশি। সঙ্গতকারণেই এমন দল মানুষ পছন্দ করে এবং তার প্রতি আশা-আকাক্সক্ষাও বেশি থাকে। বিএনপিকে এটা বুঝতে হবে। প্রকৃত ইসলামী চেতনার যেসব দল রয়েছে, তাদের সাথে দলটিকে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। এতে দেশে উগ্রবাদ বলে কিছু থাকবে না। দেশের মানুষ বিএনপির নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হবে। সঙ্গতকারণেই ভারত চাইবে না, ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাব্য দল হিসেবে বিএনপি ইসলামপন্থীদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলুক। তবে বিএনপিকে এখন ভারতের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ঘেরাটোপকে প্রাধান্য দেয়ার কিছু নেই। কারণ, ভারত নিজেই এখন একটি ক্ষয়ীঞ্চু রাষ্ট্র। তার আধিপত্যবাদকে এখন তার সকল প্রতিবেশি থোড়াই কেয়ার করে। এ বাস্তবতা বিএনপিকে উপলব্ধি করতে হবে। তাকে মেরুদ- সোজা করে ভারতের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে হবে।

চার.
বিএনপিকে জনগণের সামনে পরিস্কার করতে হবে, ভারত প্রশ্নে তার অবস্থান ও ডিপ্লোমেসি কি? লোক দেখানো ভারতবিরোধী বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে তলে তলে ভারত তোষণ নীতি অবলম্বন করলে তা জনগণের সাথে প্রতারণা ছাড়া কিছু নয়। ভারতের অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে ধমক দিয়ে কথা বলতে না পারলে বিএনপিকে কেন মানুষ ক্ষমতায় বাসাবে? বিএনপিকে চিন্তা করতে হবে, ভারতের কাছ থেকে আমাদের পাওয়ার কিছুই নেই। আমাদের কাছে ভারতের পাওয়ার অনেক কিছু আছে। যদিও তার দাসী হাসিনা ভারতকে সব দিয়ে দিয়েছিল। তবে ভারতের কিন্তু বাংলাদেশের কাছে চিরকালের চাওয়া রয়েছে, তা হচ্ছে সেভেন সিস্টার্সকে অবিচ্ছিন্ন রাখার ক্ষেত্রে সহযোগিতা। এই একটি বিষয় দিয়েই ভারতকে দৌড়ের উপর রাখা যায়। বিএনপি যদি ভারতের সাথে চোখে চোখ রেখে কথা বলে কিংবা ভারতের যেকোনো অন্যায় আচরণের তাৎক্ষণিক জবাব দেয়, তাহলে উপমহাদেশে বিএনপি একটি শক্তিশালী দল হিসেবে আবির্ভুত হবে। তার সামনে বিশ্বের নানা দুয়ার খুলে যাবে। এক চীনকে সাথে নিয়ে অনেক কিছু অর্জন করতে পারবে। হাসিনামুক্ত বাংলাদেশে এমন সুযোগ আর হবে না। বিএনপি যদি তা কাজে লাগাতে না পারে, তাহলে তা হবে তার জন্য বড় বিপর্যয়। কাজে লাগাতে পারলে তা হবে বড় সাফল্য। কাজেই, ভারত প্রশ্নে বিএনপিকে জনগণের কাছে অবস্থান পরিস্কার করতে হবে।

[email protected]



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews