রোজা রেখে পানিশূন্যতার কারণে চোখের নানান অস্বস্তি হতে পারে।

দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকা, পর্যাপ্ত পানি পান না করা, অনিয়মিত ঘুম এবং খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের কারণে চোখেও নানান সমস্যা দেখা দিতে পারে।

বিশেষ করে চোখ শুষ্ক হয়ে যাওয়া, লালচে-ভাব, পানির অভাবজনিত সমস্যা, চুলকানি ও প্রদাহ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।

এছাড়া ইফতার ও সেহরিতে অতিরিক্ত তৈলাক্ত ও মসলাযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে শরীরে বিভিন্ন প্রভাব পড়ে, যা চোখের স্বাস্থ্যেও বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

পানিশূন্যতা

ইফতার ও সেহরিতে পর্যাপ্ত পানি গ্রহণ না করলে পানিশূন্যতা হতে পারে দেহে। যা চোখের শুষ্কতার অন্যতম কারণ।

ভিসন আই হাসপাতালের চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ও পরামর্শক জিনাত জাহান রুমা এই বিষয়ে বলেন, “পানিশূন্যতার কারণে চোখের লুব্রিকেইশন কমে যায়, ফলে চোখ শুকিয়ে যেতে পারে এবং জ্বালাপোড়া অনুভূত হয়।”

এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত যথেষ্ট পরিমাণ পানি পান করার পরামর্শ দেন তিনি।

পাশাপাশি অতিরিক্ত চা বা কফি এড়িয়ে চলতে হবে, কারণ এগুলো দেহ থেকে পানি বের করে দেওয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে।

ঘুমের ঘাটতি

রোজায় ঘুমের ঘাটতি চোখের স্বাস্থ্যকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। সেহরির জন্য ভোরে ওঠা এবং দিনের বেলায় পর্যাপ্ত বিশ্রাম না নেওয়ার কারণে চোখে ক্লান্তি দেখা দিতে পারে।

পর্যাপ্ত ঘুম না হলে চোখ ফুলে যায়, লালচে-ভাব দেখা দেয় এবং দৃষ্টিশক্তি কিছুটা দুর্বল হয়ে যেতে পারে।

এই সমস্যা এড়াতে অন্তত ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন। যদি রাতের ঘুম কম হয়, তবে দিনে এক থেকে দেড় ঘণ্টা বিশ্রাম নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

সঠিক পুষ্টিকর খাবার

সঠিক ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করাও চোখের সুস্থতার জন্য অত্যন্ত জরুরি। ভিটামিন এ, সি এবং ই সমৃদ্ধ খাবার, যেমন- গাজর, পালং শাক, টমেটো, কমলা ও বাদাম চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।

এছাড়া মাছ, বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ, ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ হওয়াতে চোখের শুষ্কতা দূর করতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

ইফতার ও সেহরিতে অতিরিক্ত চিনি ও লবণযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এগুলো শরীরে পানির মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে। চোখের যত্নে খেজুর খাওয়ার পরামর্শ দেন- এই চক্ষু বিশেষজ্ঞ।

ডিজিটাল পর্দায় সময় কমানো

রমজানে দীর্ঘ সময় টিভি দেখা, মোবাইল বা কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকা চোখের ক্লান্তি বাড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে রাতে ডিজিটাল পর্দার উজ্জ্বল আলো চোখের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

চোখের চাপ কমাতে প্রতি ২০ মিনিট পরপর ২০ সেকেন্ডের জন্য চোখের বিশ্রাম নেওয়া দরকার। কম্পিউটার বা মোবাইল ব্যবহারের সময় ব্লু লাইট ফিল্টার বা অ্যান্টি-গ্লেয়ার চশমা ব্যবহার করা উপকারী।

অতিবেগুনি রশ্মি

দীর্ঘ সময় রোদে থাকার ফলে চোখ শুষ্ক হতে পারে এবং অতিবেগুনি রশ্মির কারণে চোখের ক্ষতি হতে পারে। দিনের বেলায় বাইরে গেলে অবশ্যই রোদ চশমা ব্যবহার করতে হবে। কারণ এই রশ্মিতে চোখের কর্নিয়া ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

চোখ ধোয়ার অভ্যাস

চোখের স্বাভাবিক আর্দ্রতা বজায় রাখতে হলে চোখ ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি। চোখের চারপাশে ধুলাবালি জমলে চোখে অস্বস্তি হতে পারে। দিনে দুই থেকে তিনবার ঠাণ্ডা পানি দিয়ে চোখ ধুয়ে নেওয়া ভালো।

কনট্যাক্ট লেন্সে সতর্ক

কনট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার করলে রোজার সময় একটু বেশি সতর্ক থাকতে হবে। দীর্ঘ সময় পানি না খাওয়ার ফলে চোখ শুষ্ক হয়ে যায়, যা কনট্যাক্ট লেন্স ব্যবহারের ক্ষেত্রে অস্বস্তি তৈরি করতে পারে।

তাই লেন্স ব্যবহার করলে চোখের আরামের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ‘আর্টিফিশিয়াল টিয়ার ড্রপ’ ব্যবহারের পরামর্শ দেন, ডা. জিনাত জাহান রুমা।

সহজ ব্যায়াম

চোখ সুস্থ রাখতে কিছু সহজ ব্যায়াম করা যেতে পারে। চোখের ক্লান্তি দূর করতে প্রতি দুই ঘণ্টা পরপর চোখ বন্ধ করে কয়েক সেকেন্ড বিশ্রাম নেওয়া উচিত। এছাড়া চোখের বল ঘুরিয়ে নেওয়া, ডান-বাম দিকে দেখা এবং চোখের পাতা দ্রুত ঝাপটানোর মতো ব্যায়াম করলেও আরাম পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন

চোখে যন্ত্রণা? তবে জেনে নিন কমানোর পন্থা

চোখের পাপড়ি ঝরে যাওয়ার কারণ

চোখ শুকানো রোগ হতে পারে বয়স বাড়লে



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews