বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সমন্বয়ে গঠিত নতুন রাজনৈতিক দল—জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ৪৯ দিন আগে (২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫)।

এনসিপি যে একটি নতুন দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে, তা দেশের কতজন মানুষ জানে? আমার ধারণা, ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন মহানগর/জেলার কিছু শিক্ষিত ও রাজনৈতিক সচেতন মানুষ ছাড়া খুব কম মানুষই এই দলের নাম জানে। মোটাদাগে বাংলাদেশের ১৫-২০% মানুষ এই দলের নাম বা এর কিছু নেতার নাম জানে।

৫ আগস্টের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের শূন্যস্থান পূরণ করার মতো একটি বিকল্প শক্তিশালী রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশের সর্বোচ্চ সুযোগ ছিল এনসিপির সামনে। কিন্তু তারা তা পারেনি—বরং এখন তো বিন্দুমাত্র আশার আলোও দেখা যাচ্ছে না। এর পেছনে কয়েকটি কারণ থাকতে পারে—

১) আওয়ামী লীগের “মুজিব কাল্ট”-এর মতো জুলাই-অগাস্ট আন্দোলনের একক কৃতিত্ব বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘরে রেখে একটি নতুন কাল্ট তৈরির চেষ্টা করা।

২) রাজধানীসহ সারা বাংলাদেশে এলাকাভিত্তিক কিশোর গ্যাংগুলোকে স্বীকৃতি দেওয়া।

৩) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি এনসিপি-তে রূপান্তরিত হওয়া সত্ত্বেও এখনও সরকারে তাদের দুই নেতার অংশীদারিত্ব থাকায় নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সেই সঙ্গে এনসিপির সঙ্গে পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত অনেক নেতা-কর্মী ও উপদেষ্টাকে মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কান পাতলে শোনা যায় ব্যাপক দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির গল্প।

৪) এনসিপির শীর্ষ নেতৃত্বের অধিকাংশই ছাত্রলীগের ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসা। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, উপজেলা ও জেলায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের দিয়েই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কমিটিগুলো গঠন করা হয়েছে, যার ফলে আওয়ামী লীগ–ছাত্রলীগ পুনর্বাসনের প্রশ্নটি জোরালোভাবে সামনে আসে।

৫) বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও জনসমাগমে উঠে আসা অভিযোগ (কিছু ক্ষেত্রে প্রমাণসহ), যেখানে বলা হয়েছে প্রশাসন ও স্থানীয় সরকার অফিসে এনসিপির নেতাদের ব্যাপক প্রভাব, অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ ও আর্থিক দুর্নীতির বিষয়গুলো।

৬) এনসিপি নেতাদের ৫ আগস্টের আগের ও পরের জীবনযাপন তুলনা করলে দেখা যায়, অনেকেই প্রতিদিন ৮-১০ হাজার টাকা মূল্যের ইলিয়ান ব্র্যান্ডের পাঞ্জাবি পরে, দামি গাড়ি চালায়, কেউ কেউ নতুন দামী অফিস, বাড়ি ও ফ্ল্যাট কিনেছে—যা জনমনে প্রশ্নের উদ্রেক করে।

৭) বিএনপির মতো দল যেখানে শোডাউন বা পোস্টার প্রচারণা নিষিদ্ধ করেছে, সেখানে এনসিপির অনেক নেতাকর্মী নিজ নিজ এলাকায় ১-২ শত গাড়ির শোডাউন, হাজার হাজার পোস্টারে চিরাচরিত রাজনৈতিক সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে।

৮) নির্দিষ্ট কোনো আর্থিক উৎস ছাড়াই দল গঠনের দিন সরকারি বাসে করে বিভিন্ন জেলা থেকে লোক আনা, রূপায়ণ টাওয়ারে বিলাসবহুল অফিস ভাড়া নেওয়া, ফাইভ স্টার হোটেলে ইফতার আয়োজন—এসব বিষয় সাধারণ মানুষের মধ্যে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। ফলে তাদের প্রতি সাধারণ মানুষের যে অন্ধ বিশ্বাস ছিল, তাতে ফাটল ধরেছে।

সর্বোপরি, সাধারণ মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গা থেকে বিচ্যুত হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সমন্বয়ে গঠিত নতুন রাজনৈতিক দল—জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। অথচ, একসময় মানুষের ভালোবাসা ছিল তাদের প্রতি। আওয়ামী লীগ ও তার দোসর দলগুলো ছাড়া প্রায় সব রাজনৈতিক দলই কখনো না কখনো এই আন্দোলনের প্রতি প্রচ্ছন্ন সহানুভূতি ও সহযোগিতা দেখিয়েছিল।

লেখক: যুগ্ম মহাসচিব, জিয়া সাইবার ফোর্স (জেড সি এফ)



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews