এক পেনাল্টির প্রতিবাদ করতে গিয়েই ফিফার বড় নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছিলেন ১৯৮৯ ইসলামাবাদ সাফ গেমসে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক ইলিয়াস হোসেন। ৩১ বছর আগের সেই ঘটনা শেষ করে দিয়েছিল আশির দশকে মোহামেডানের সাবেক অধিনায়কের ফুটবল–ক্যারিয়ার
৩১ বছর আগের ঘটনা। বাংলাদেশ ও ভারতের এক ফুটবল লড়াইয়ে ঘটে গিয়েছিল তুলকালাম কাণ্ড। রেফারির এক সিদ্ধান্ত সেদিন অশান্ত করেছিল মাঠ, মাঠের পরিবেশ। তাঁর সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল কি ভুল, সে বিচারের অধিকার অবশ্য ফুটবলের আইন কখনোই খেলোয়াড়দের দেয়নি। এ অনধিকার চর্চা করতে গিয়েই আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গিয়েছিল সে ম্যাচে বাংলাদেশ–অধিনায়কের।
বাংলাদেশের ফুটবলে ঘটে যাওয়া বিস্মৃত অনেক ঘটনার একটি এটি। স্থান পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ। ১৯৮৯ সালের অক্টোবর। চতুর্থ সাফ গেমসে ভারতের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। ইরানি কোচ নাসের হেজাজির সেই বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক ছিলেন ইলিয়াস হোসেন। তাঁর নেতৃত্বে সে বছর লিগে হ্যাটট্রিক শিরোপা পেয়েছিল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। সাদা–কালো শিবিরের কোচ হেজাজিকেই সেবার জাতীয় দলের দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়েছিল পাকিস্তানে।
ইসলামাবাদ সাফ গেমসে বাংলাদেশের গ্রুপে ছিল শ্রীলঙ্কা ও ভারত। প্রথম ম্যাচেই শ্রীলঙ্কাকে ৩–০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে দ্বিতীয় ম্যাচ ভারতের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ–ভারত ফুটবল লড়াই সে সময় অন্যরকম এক আবেদন ছিল ফুটবলপ্রেমীদের কাছে। ইসলামাবাদের মাটিতে লড়াইটাও এর ব্যতিক্রম ছিল না। ম্যাচের ৩৪ মিনিটে নূরুল হক মানিকের ২০ গজ দূর থেকে নেওয়া এক শটে গোল পেয়ে যায় বাংলাদেশ। এরপর গোটা দুই সুযোগ নষ্ট করেন অধিনায়ক ইলিয়াস ও মিজান। একটা পর্যায়ে গোল পরিশোধের জন্য ভারত মরিয়া হয়ে উঠলে ম্যাচটি ভীষণ জমে ওঠে। খেলা শেষ হওয়ার ৬ মিনিট আগে ভারতীয় ফরোয়ার্ডকে বক্সের মধ্যে রেজাউল করিম রেহান ফাউল করলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান সংযুক্ত আরব আমিরাতের রেফারি। তা থেকে গোল করেন সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়।
এই পেনাল্টিতে আপত্তি ছিল বাংলাদেশ দলের। আপত্তি থাকতেই পারে। আজ পর্যন্ত রেফারির দেওয়া পেনাল্টিতে কোনো দল প্রতিবাদ করেনি, এমনটা কমই দেখা যায়। তবে বাংলাদেশের ফুটবলাররা বোধহয় সেদিন একটু বেশিই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন। ভারতের মতো দলের বিপক্ষে তাঁরা যখন এগিয়ে আছেন ১–০ গোলে। কিন্তু সেটি ছিল ভয়ংকর আত্মঘাতী এক ব্যাপার!
অধিনায়ক ইলিয়াস ছিলেন তখনকার বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ খেলোয়াড়। আন্তর্জাতিক ফুটবলে তারও পাঁচ বছর আগে থেকে খেলার অভিজ্ঞতা থেকেও তিনি সেদিন নিজেকে সামলাতে পারেননি। প্রতিবাদের এক পর্যায়ে রেফারিকে মৃদু ধাক্কাই দিয়ে বসেন তিনি। আন্তর্জাতিক ফুটবলে এ ধরনের আচরণ যে গর্হিত, সেদিন মাথা থেকে বিষয়টি যেন পুরোপুরি বেরিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ–অধিনায়ক ইলিয়াসের।
এ আচরণের মাসুল দিতে হয়েছিল ইলিয়াসকে। রেফারি ও ম্যাচ কমিশনারের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অধিনায়ককে দোষী চিহ্নিত করেছিল ফিফা। তাঁকে নিষিদ্ধ করা হয় তিন বছরের জন্য। বাফুফেও ব্যাপারটি ভালোভাবে নেয়নি। ঘরোয়া ফুটবলেও কিছুদিন নিষিদ্ধ ছিলেন তিনি। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে সত্যিকার অর্থে আর কখনোই সেভাবে মাঠে ফেরা হয়নি আশির দশকে দেশের ফুটবলের অন্যতম এই তারকার।
অতি আবেগের চড়া মূল্য দিয়েছিলেন ইলিয়াস, দিয়েছিল বাংলাদেশের ফুটবলও!