এক বছরের মধ্যে কেউ যদি ১৬০ থেকে ১৮০ টুকরা চিউয়িং গাম চিবিয়ে খান তাহলে তিনি নিজের অজান্তেই প্রায় ৩০ হাজার মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা গিলে ফেলছেন।

মানুষের মুখে হাজার হাজার মাইক্রোপ্লাস্টিক নির্গত করতে পারে চিউয়িং গাম– এমনই উঠে এসেছে সাম্প্রাতিক এক গবেষণায়।

অনেক মানুষেরই প্রতিদিনের অভ্যাস হলো চিউয়িং গাম চিবানো, যা দ্বিতীয়বার না ভেবেই বেশিরভাগ মানুষ চিবাতে পছন্দ করেন।

‘ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, লস অ্যাঞ্জেলেস’ বা ইউসিএলএ-এর নতুন এক গবেষণা বলছে, এ সাধারণ ও সহজ কাজটি মানুষের মুখে হাজার হাজার ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণার বাহক হতে পারে।

ইউসিএলএ স্যামুয়েলি স্কুল অফ ইঞ্জিনিয়ারিং-এর গবেষকরা বলছেন, প্রাকৃতিক ও সিন্থেটিক উভয় চিউয়িং গাম থেকেই চিবানোর সময় মাইক্রোপ্লাস্টিক বের হয়। আর এসব কণা এতই ছোট যে এগুলোকে খালি চোখে দেখা না। তবে তা মানুষের শরীরে সহজেই প্রবেশ করতে পারে।

মাইক্রোপ্লাস্টিক হল প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণা, যা বালির দানার চেয়েও আকারে ছোট এবং এগুলোকে পানির বোতল থেকে শুরু করে খাবার প্যাকেজিং পর্যন্ত সবকিছুতেই পাওয়া যায়।

এসব কণা বড় আকারের প্লাস্টিকের জিনিসপত্রের ভাঙ্গন থেকে আসে বা সরাসরি আণুবীক্ষণিক আকারে কিছু প্রসাধনী পণ্যেও তৈরি হয় বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পরিবেশে মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ ও মানব স্বাস্থ্যের ওপর এদের সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন বিজ্ঞানীরা।

চিউয়িং গাম মানুষের প্লাস্টিকের সংস্পর্শের আরেকটি অপ্রত্যাশিত উৎস হতে পারে কি না তা নিয়ে গবেষণা করেন ইউসিএলএ-র অধ্যাপক সঞ্জয় মোহান্তি ও স্নাতক শিক্ষার্থী লিসা লো।

এজন্য ১০টি জনপ্রিয় গাম ব্র্যান্ড নিয়ে পরীক্ষা করেছেন তারা, যার অর্ধেক ব্র্যান্ড কৃত্রিম উপাদান যেমন পেট্রোলিয়ামভিত্তিক পলিমার ব্যবহার করেছে চিউয়িং গাম তৈরিতে এবং বাকি অর্ধেক প্রাকৃতিক উপাদান, যেমন চিকল, ব্যবহার করেছে। চিকল মূলত উদ্ভিদনির্ভর রস, যা প্রচলিত চিউয়িং গাম তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

গবেষণায় একজন স্বেচ্ছাসেবককে চার মিনিটের জন্য প্রতিটি গামের সাতটি টুকরা চিবাতে বলেন গবেষকরা এবং প্রতি ৩০ সেকেন্ডে তার লালার নমুনা সংগ্রহ করেন তারা। ফলো-আপ পরীক্ষায় তারা ২০ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে মুখে মাইক্রোপ্লাস্টিক নির্গত হওয়ার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেন।

গবেষকরা বলছেন, তাদের এ গবেষণার ফলাফল ছিল বিস্ময়কর। কৃত্রিম ও প্রাকৃতিক উভয় গাম থেকেই একই মাত্রার মাইক্রোপ্লাস্টিক বের হয়েছে। প্রতি গ্রাম চিউয়িং গাম চিবানোর ফলে প্রায় একশটি মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা নির্গত হয়। কিছু ধরনের গামের ক্ষেত্রে প্রতি গ্রামে প্রায় ছয়শটি পর্যন্ত কণা নির্গত হতে পারে।

সাধারণ চিউয়িং গামের ওজন ২ থেকে ৬ গ্রামের মধ্যে হয়। তাই একটি চিউয়িং গাম চিবানোর সময় এর একটি টুকরা তিন হাজারেরও বেশি কণা তৈরি করতে পারে। এক বছরের মধ্যে কেউ যদি ১৬০ থেকে ১৮০ টুকরা চিউইং গাম চিবিয়ে খান তাহলে তিনি নিজের অজান্তেই প্রায় ৩০ হাজার মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা গিলে ফেলছেন।

এ সংখ্যার পরও এখনই কোনও সতর্ক বার্তা দিচ্ছেন না বিজ্ঞানীরা। অধ্যাপক মোহান্তি বলেছেন, “মানুষকে ভয় দেখানো আমাদের লক্ষ্য নয়। মাইক্রোপ্লাস্টিক মানুষের জন্য ক্ষতিকর কি না তা আমরা এখনও নিশ্চিত করে জানি না। এ নিয়ে মানুষের ওপর কোনও পরীক্ষা হয়নি।”

তবে প্রাণী ও মানুষের কোষের ওপর গবেষণা থেকে ইঙ্গিত মিলেছে, দেহে প্রদাহ বা বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষতির মতো সমস্যা তৈরি করতে পারে মাইক্রোপ্লাস্টিক। বিষয়টি নিশ্চিতের জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন।

গবেষকরা বলছেন, কম ক্ষতিকর মনে হলেও এ বিষয়টি স্পষ্ট, মাইক্রোপ্লাস্টিক মানুষের শরীরে প্রবেশের আরেকটি উপায় হতে পারে চিউয়িং গাম।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews