তুরস্কে টানা সপ্তম রাতেও বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল। এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে রয়েছে শিক্ষার্থী, সাংবাদিক ও আইনজীবী। গত বুধবার রাত থেকে এই বিক্ষোভ শুরু হয়। ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুকে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার করার পর বিক্ষোভ ছড়িয়েছে। তিনি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ানের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
মানবাধিকার সংস্থা ও জাতিসংঘ এই গ্রেফতার নিন্দা জানিয়েছে এবং বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের বলপ্রয়োগের সমালোচনা করেছে।
ইমামোগলু দাবি করেছেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো রাজনৈতিকভাবে প্রণোদিত। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন।
মঙ্গলবার আঙ্কারায় এ ইফতার অনুষ্ঠানে যুবকদের উদ্দেশে এরদোয়ান ধৈর্য ও সুবিবেচনার আহ্বান জানিয়ে বলেন, যারা এই দেশকে অরাজকতার আখড়া বানাতে চায়, তাদের কোনও লক্ষ্য নেই। তিনি বিক্ষোভকারীদের পথকে ‘কানাগলি’ বলে উল্লেখ করেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ইস্তাম্বুলের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারো শিক্ষার্থী মাচকা পার্কে জড়ো হয়ে শিসলির দিকে মিছিল করে। পুলিশ জনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং প্ররোচনামূলক কর্মকাণ্ড রোধে বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করে এবং কিছু রাস্তা বন্ধ করে দেয়।
নিশান্তাশি এলাকা দিয়ে মিছিলের সময় শিক্ষার্থীরা ‘সরকার, পদত্যাগ কর!’ স্লোগান দেয় এবং পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতির মধ্যে পতাকা ও ব্যানার উত্তোলন করে। অনেকেই মুখে স্কার্ফ বা মাস্ক পরেছিলেন, যাতে পুলিশ তাদের শনাক্ত করতে না পারে।
প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি) জানিয়েছে, মঙ্গলবারের সমাবেশটি তাদের ধারাবাহিক রাতের সমাবেশের শেষ হবে এবং শনিবার ইস্তাম্বুলে একটি বড় সমাবেশের পরিকল্পনা করা হয়েছে। দলের নেতা ওজগুর ওজেল বলেন, ইমামোযগলুর সমর্থনে, তার গ্রেফতারের প্রতিবাদে, স্বচ্ছ ও সরাসরি বিচার দাবিতে আমরা শনিবার বড় সমাবেশ করব।
গত বুধবার থেকে এখন পর্যন্ত তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলি ইয়ারলিকায়ার মতে, ১ হাজার ৪১৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ৯৭৯ জন এখনও হেফাজতে রয়েছে। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, যারা রাস্তায় আতঙ্ক সৃষ্টি করতে চায়, তাদের কোনও ছাড় দেওয়া হবে না।
এদিকে, মঙ্গলবার সাংবাদিক ইয়াসিন আকগুলসহ সাত সাংবাদিককে আদালতে হাজির করা হয়। আকুল এএফপির ফটোগ্রাফার হিসেবে বিক্ষোভ কভার করছিলেন। এএফপির চেয়ারম্যান ফ্যাব্রিস ফ্রিজ তার গ্রেফতারকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে উল্লেখ করে এরদোয়ানকে হস্তক্ষেপের অনুরোধ জানিয়েছেন।
ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদানের সঙ্গে বৈঠকের পর ‘উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছেন বলে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে।
ইমামোগলুকে গত সপ্তাহে ১০০ জনের বেশি ব্যক্তির মধ্যে একজন হিসেবে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে দোষ প্রমাণিত হলে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবেন না। ২২ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা এরদোয়ানের শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ইমামোগলুকে দেখা হয়।