নেপোলিয়ান সারা বিশ্ব জয় করে হেরে গিয়েছিলেন বেলজিয়ামের ওয়াটারলু নামক ছোট্ট একটা গ্রামে। গাজা নিয়ে ট্রাম্প যদি কোনো বাড়াবাড়ি করেন, নিশ্চিতভাবে গাজা হয়ে উঠবে ট্রাম্পের ওয়াটারলু। ট্রাম্প হয়তোবা গ্রিনল্যান্ডকে ট্রাম্পল্যান্ড বানাতে পারবেন, কিন্তু কখনোই গাজা দখল করতে পারবেন না।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাবান লোক। এত ক্ষমতার অধিকারী হয়েও আমেরিকান প্রেসিডেন্টদের মোটামুটি যুক্তিসঙ্গতভাবে নীতিমালা লিখতে ও প্রয়োগ করতে হয়, যেন দেশের ও বিদেশের জনগণ তাদেরকে বিজ্ঞ ও ভালো প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিবেচনা করেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড জে. ট্রাম্প সেই দলে পড়েন না। বিদেশে তো বটেই, দেশে কে তাকে নিয়ে কি ভাবে বা কি বলে, সেটা নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই লোকটির। এই মাথাব্যথাটা আগের মেয়াদেও ছিল না ট্রাম্পের, এবার আরও কমেছে।

ট্রাম্প যা ভাবেন, তাই বলেন এবং তা প্রয়োগ করতে এগিয়ে যান– এতে অন্যরা কি বলবে বা কার কি ক্ষতি হবে তা নিয়ে ভাবার মানসিকতা ও সময় তার নেই। ২০১৬ থেকে ২০২০ পর্যন্ত ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে, যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবনে সমর্থকদের দিয়ে আক্রমণ চালিয়ে আমেরিকার গণতান্ত্রিক ভিত্তিতে খুব বড় ধরণের আঘাত হেনেছিলেন। তবু বিচিত্র এই মার্কিন জনগণ ট্রাম্পের ব্যাপারে দারুণ ক্ষমাশীল তারা, ভুলে গেলেন লোকটার যত পাগলামি– ২০২৪ সালে তাকেই আবার নির্বাচিত করে আনলেন ভোট দিয়ে।

এবার শপথ নেয়ার ১০ মিনিটের মধ্যেই তিনি শুরু করলেন ট্রাম্প-ঘূর্ণি। এক মাস পার না হতেই, বেপরোয়াভাবে একের পর এক নতুন আজগুবি নীতিমালা ঘোষণা করে চমকে দিলেন সারা পৃথিবীকে। তার এই চমক পৃথিবীজুড়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়িয়ে দিল।এর মধ্যে রয়েছে কানাডা-চীন-মেক্সিকোর ওপর আমদানি শুল্ক ধার্য্য করে নতুন বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করা। ইউএসএইডের সব কর্মসূচি বন্ধ করে দিয়ে আফ্রিকার বিরাট জনগোষ্ঠীকে খাদ্য-পুষ্টি-স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত করার ট্রাম্পীয় নীতিহীন নীতি, সবমহলেই ধিক্কৃত হচ্ছে।আরো রয়েছে গ্রিনল্যান্ডকে ডেনমার্ক থেকে কেড়ে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একীভূত করার খায়েশ। কানাডাকে আমেরিকার ৫১তম অঙ্গরাজ্য করা যায় কিনা তা নিয়ে চিন্তাভাবনা। ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্টকে হোয়াইট হাউসে ডেকে কি বেইজ্জতিটা না করলেন এই সেদিন। ট্রাম্পের রাশিয়া তথা পুতিন প্রীতি ইউরোপীয় দেশগুলোকে রীতিমতন শঙ্কিত করে তুলেছে।

বাংলাদেশ নিয়েও তিনি বেশ চমক দিয়েছেন।তিনি খুঁজে বের করেছেন, বাংলাদেশের রাজনীতি শক্তিশালী করতে ইউএসএইডের ২৯ মিলিয়ন ডলার এমন এক সংস্থার কাছে গেছে, যে সংস্থার নাম আগে কেউ শোনেনি এবং যাদের কর্মচারীর সংখ্যা মাত্র দুজন। তিনি মনে করেন, এই অনুদানের উদ্দেশ্য বাংলাদেশিরা যেন ‘উগ্র বাম কমিউনিস্টদের’ ভোট দিতে পারে।

তার আজগুবি নীতিমালাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দৃষ্টি আকর্ষণ করছে যেটা, তা হলো গাজা থেকে সমস্ত গাজাবাসীকে তাড়িয়ে সেখানকার যুদ্ধবিধস্ত বাড়িঘর ভেঙে ভূমি উন্নয়নের পরিকল্পনা। এই অভিনব ভাবনার একক কৃতিত্ব ট্রাম্পের নয়, কিছুটা দিতে হবে তার বড় জামাতা জ্যাভেট কুশনারকেও। গাজাতে মার্কিন প্রকল্প গড়া নিয়ে সর্বপ্রথমে কথা বলেছিলেন কুশনার, বেশ কয় মাস আগে, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সেমিনারে।তিন দিকে ভূমধ্যসাগরের নীল জলরাশির আশ্রয়ে অবস্থিত গাজাকে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ইহুদি ধর্মাবলম্বী ট্রাম্পের এই জামাতার দুই চোখ লোভে জ্বলজ্বল করছিল। কুশনারের চোখে লোভের প্রকাশ আমি একা নয়, আরও বহুজন দেখতে পেয়েছেন বলেই আমার বিশ্বাস।

ট্রাম্প ফরমান জারি করেছেন– মিশর, জর্ডানসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোকে গাজার ২২ লাখ বাসিন্দাকে স্থান দিতে হবে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সেনা ও নৌবাহিনী পাঠিয়ে গাজা দখল করবেন, গাজায় বানাবেন ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরা’। প্রথমে সব যুদ্ধের ধ্বংসাবেশ পরিষ্কার করবেন এবং এরপর ভূমধ্যসাগরের এই স্বর্গভূমিতে তিনি নতুন নতুন প্রকল্প উন্নয়ন করবেন। গাজা হয়ে যাবে যুক্তরাষ্ট্রের। কাদের জন্য এই প্রকল্প বুঝতে কষ্ট হবার কথা নয়। তার ইসরায়েলি বন্ধুরা ও ট্রাম্প যে এই রিয়েল এস্টেটসের বড় সুবিধাভোগী হবেন তা নিশ্চিন্তে বলে দেয়া যায়। ট্রাম্পের ধারণা এই প্রকল্প শেষ করতে তার ১০ থেকে ১৫ বছর সময় লাগবে। এই প্রকল্পের শেষ দেখে মরতে চাইলে ট্রাম্পকে অন্তত ৯৪ বছরের পরমায়ু পেতে হবে।

ট্রাম্প যখন ওয়াশিংটনে গাজা নিয়ে তার বিধ্বংসী নীতি ঘোষণা করছিলেন, তার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অপরাধ কমিশন এর মধ্যেই নেতানিয়াহুকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিচারের সম্মুখীন করেছে। ট্রাম্প জোর করে গাজার লোকজনদের সরিয়ে গাজা দখল করার ঘোষণা দিয়ে নিজেই নিজেকে যুদ্ধাপরাধে জড়ালেন। জাতিসংঘ সনদে স্পষ্ট ঘোষণা দেয়া আছে যে, কোনো এলাকার জনসাধারণকে জোর করে তাদের ভূমি থেকে অপসারণ করলে তা যুদ্ধপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। গাজা ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তার পাশে দাঁড়ানো আরেক যুদ্ধপরাধীর দলে শামিল হলেন। যখন তিনি তার গাজা নীতি নিয়ে কথা বলছেলিন, পাশে দাঁড়ানো নেতানিয়াহু তার হাসি-খুশি চেপে রাখতে পারছিলেন না।

ট্রাম্প তার দল এবং কংগ্রেসের নেতাদেরকেও আগে বলেননি তার গাজা ভাবনা। ট্রাম্পের সেক্রেটারি অফ স্টেটস মার্কো রুবিও, যিনি মূলত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রী, ট্রাম্প যখন গাজা ঘোষণা দিচ্ছেন, তিনি গুয়েতেমালায় সরকারি সফর করছিলেন।ওখানে টেলিভিশনের সামনে বসে ট্রাম্পের সংবাদ সম্মেলন থেকে তিনি প্রথম শুনলেন ট্রাম্পের গাজা নিয়ে পরিকল্পনা ।

রুবিও কি চমকে উঠেছিলেন গাঁজাখুরি স্বপ্নবৃত্তান্ত শুনে? বোধ হয় না, তিনি তো ট্রাম্পকে ভালোভাবেই চিনেন। ২০১৬ সালে রিপাবলিকান প্রাইমারিতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে কত যে হেনস্তা সহ্য করতে হয়েছিল তার। তখন ট্রাম্প তাকে ডাকতেন, 'লিটল রুবিও'। একবার ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্কে নেমে তিনি বেশ ঘামাচ্ছিলেন, যেন কথা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। বিতর্কের মধ্যেই ট্রাম্প তার কাছে গিয়ে তাকে একটা পানির বোতল এগিয়ে দিলেন, বললেন, 'লিটল রুবিও, তুমি বোধ হয় খুব ক্লান্ত, পানিটা খেয়ে নাও।’ সমস্ত দর্শকের মজার হাসিতে রুবিওর হেনস্তা সম্পূর্ণ হয়েছিল। রুবিও আর এই ভুল করেননি, পরের নির্বাচনগুলোতে ট্রাম্পের পেছনে গিয়ে দাঁড়ালেন, এখন তিনি তার সেক্রেটারি অফ স্টেটস।

জর্ডানের আম্মানে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে বিক্ষোভ। ছবি রয়টার্স

ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনার নিন্দা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে। মধ্যপ্রাচের দেশগুলো এর তীব্র নিন্দা করেছে। মিশর, জর্ডান এবং অন্যান্য আরব রাষ্ট্রগুলো গাজার অধিবাসীদেরকে তাদের দেশে গ্রহণে সরাসরি অপারগতা প্রকাশ করে দিয়েছে। ফ্রান্স, জার্মানি,অস্ট্রেলিয়া ও ব্রিটেন– সবাই ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছে। চীন আর রাশিয়াও ট্রাম্পের গাজা নীতির বিরোধিতা করেছে, এমনকি ট্রাম্পের বন্ধু উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উনও এর সমালোচনা করেছেন।

ওয়াশিংটন পোস্ট এক নিবন্ধে লিখেছে, “১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনি জনগণকে নিজেদের জমি থেকে ইসরায়েলের বিতাড়নের ঘটনা– যাকে বলা হয় ‘নাকবা’, তা এখনও ফিলিস্তিনিদের সম্মিলিত স্মৃতিতে জীবন্ত হয়ে আছে।”

১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনি জনগণকে নিজেদের জমি থেকে ইসরায়েলের বিতাড়নের ঘটনা– যাকে বলা হয় ‘নাকবা’, তা এখনও ফিলিস্তিনিদের সম্মিলিত স্মৃতিতে জীবন্ত হয়ে আছে। ছবি: রয়টার্স  

গাজা এখন এক ধ্বংসস্তূপ, তা সত্ত্বেও ফিলিস্তিনিরা দলবেঁধে তাদের ঘর বাড়িতে ফিরে আসছে। তারা ইসরায়েলের ১৫ মাস যুদ্ধে অবিরাম হামলা ও বোমার ভয় অগ্রাহ্য করেও নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে, গাজাবাসী কখনো আত্মসমর্পণ করেনি। তারা যে ট্রাম্পের রক্তচক্ষু অমান্য করে নিজেদের জায়গায়, ধ্বংসস্তূপের মাঝে আবার ঘর বাঁধবেন তা অবধারিত সত্য, কেউ তাদেরকে নিজেদের জমি থেকে হটাতে পারবে না।

একমাত্র ইসরায়েলি অতি ডানপন্থীরা খুশিতে নাচানাচি করছে। তাদের নেতা ইতামার বেন গাভি, যিনি কয়দিন আগেই নেতানিয়াহুর নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী ছিলেন, তিনি বলেছেন, “আমাদের জন্য এটা বিরাট সুযোগ। আমাদের এই সুযোগ ছেড়ে দেয়া ঠিক হবে না।” ইসরায়েলের হাইওয়েগুলোর পাশে বড় বড় বিলবোর্ড বসানো হয়েছে, যাতে ট্রাম্পের বিরাট ছবির সঙ্গে লেখা রয়েছে, “অনেক ধন্যবাদ, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।”

গাজা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে ডনাল্ড ট্রাম্পকে একজন প্রেসিডেন্টের মতো মনে হয়নি, বরং মনে হচ্ছিল একজন ধান্ধাবাজ রিয়েল এস্টেট ব্যাবসায়ী।ট্রাম্প ধারণা করেছিলেন, গাজার অধিবাসীদের সরিয়ে নিজেদের দেশে নেয়ার ট্রাম্পীয় সিদ্ধান্ত জর্ডান ও মিশর নীরবে মেনে নেবে এবং তিনি এর জন্য সৌদিদের ওপর যে চাঁদা ধরে দেবেন এবং সেই চাঁদা সৌদিরা ট্রাম্পের ব্যাংকে পাঠিয়ে দেবে। কিন্তু এই তিন রাষ্ট্রই ট্রাম্পের গাঁজাখুরি পরিকল্পনাকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বেশ সশব্দেই

আরব দেশগুলো নিজেদের পরিকল্পনা নিয়ে কথাবার্তা শেষ করেছে। সেখানে মিশরের দেয়া পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। মিশর প্রস্তাব করেছে, গাজার শাসন ক্ষমতা চালাবে একটা ফিলিস্তিনি টেকনোক্র্যাট কমিটি যার মধ্যে হামাস থাকবে না। গাজার অধিবাসীদেরকে অন্য জায়গায় না সরিয়ে গাজা পুনর্গঠনের কাজ করা হবে এবং এজন্য অর্থায়ন নিয়েও কথাবার্তা হচ্ছে। আরব দেশগুলো ইউরোপীয়দের সাহায্যে গাজা পুনর্গঠন করবে, হামাসও এই পরিকল্পনা মেনে নিয়েছে এবং চারটি ইউরোপীয় দেশ অনুমোদন করেছে।

ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র স্বভাবতই আরব পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছে। তবে এখন তাদের প্রভাব খুব সীমিত। ৫৪ জন ইসরায়েলি ও মার্কিন জিম্মি হামাস গাজাতে আটকে রেখেছে।এত যুদ্ধ করে এবং হুমকি-ধমকি দিয়েও জিম্মিদেরকে তারা মুক্ত করতে পারছে না। গত সপ্তায়ও মার্কিন দূত হামাসের সঙ্গে দুবাইতে দেখা করেছে। ট্রাম্প যতই বড় বড় কথা বলুন না কেন, হামাসের শক্তিকে মান্য করতে তারাও বাধ্য হচ্ছেন।

নেপোলিয়ান সারা বিশ্ব জয় করে হেরে গিয়েছিলেন বেলজিয়ামের ওয়াটারলু নামক ছোট্ট একটা গ্রামে। গাজা নিয়ে ট্রাম্প যদি কোনো বাড়াবাড়ি করেন, নিশ্চিতভাবে গাজা হয়ে উঠবে ট্রাম্পের ওয়াটারলু। ট্রাম্প হয়তোবা গ্রিনল্যান্ডকে ট্রাম্পল্যান্ড বানাতে পারবেন, কিন্তু কখনোই গাজা দখল করতে পারবেন না। আমেরিকানদের যত গোলাবারুদ আছে সবই নেতানিয়াহু ব্যবহার করেছেন গাজাতে, গত পনেরো মাস ধরে। কিন্তু গাজাকে দখল করতে পারেননি, পারেননি গাজাবাসীকে আত্মসমর্পণ করাতে। গাজাবাসী প্রাণ দিয়েছে, কিন্তু দেশ দেয়নি– ট্রাম্পকেও দেবে না।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews