রাশিয়া বলেছে, ইরানের বিরুদ্ধে অবিরাম হুমকিতে বিশ্ব ক্লান্ত হয়ে পড়ছে এবং দেশটিতে বোমা হামলা শান্তি আনবে না। মস্কো আরও সতর্ক করে বলেছে যে ইরান ইতোমধ্যে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
বুধবার রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ইরানের বিরুদ্ধে অবিরাম হুমকিতে বিশ্ব সত্যিই ক্লান্ত। বোমা হামলা করে শান্তি আনা যায় না—এ বোধ এখন বাড়ছে।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শনিবার আলোচনা হতে যাচ্ছে। তবে ইরানি কর্মকর্তাদের মতে, আলোচনায় অগ্রগতির ব্যাপারে তেহরানের আস্থা কম এবং যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য নিয়ে তাদের গভীর সন্দেহ রয়েছে। সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ আলোচনার ঘোষণা দেন। গত জানুয়ারিতে তিনি শপথ নেওয়ার পর থেকে ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক হামলার হুমকি দিচ্ছেন।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, মস্কো যুক্তরাষ্ট্রের অত্যন্ত কঠোর বক্তব্য সম্পর্কে সচেতন এবং ইরান প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে। তার মতে, সংঘাতের বদলে সংলাপের ওপর জোর দেওয়া উচিত।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বমহল ও তেহরানের মধ্যে উত্তেজনার কারণ। ১৯৫০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় এ কর্মসূচি শুরু হলেও ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর ইরান-ওয়াশিংটনের ঘোর বিরোধিতা শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও কিছু ইউরোপীয় দেশ দাবি করে, ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে। তবে তেহরান এ দাবি অস্বীকার করে আসছে।
ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে সম্প্রতি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া ইরান থেকে অস্ত্র কিনেছে এবং এ বছরের শুরুতে দুই দেশ ২০ বছরের কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। তবে ১৬শ’ শতাব্দীতে রাশিয়া ও পারস্যের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর থেকে দুই দেশের সম্পর্ক মাঝে মধ্যে জটিল হয়েছে।
ইরানি কর্মকর্তাদের মতে, রাশিয়া কঠোর ভাষা ব্যবহার করলেও মধ্যপ্রাচ্যে বড় যুদ্ধে জড়াতে সতর্ক। ইরান-রাশিয়া চুক্তিতে পারস্পরিক প্রতিরক্ষা ধারা অন্তর্ভুক্ত নেই। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছেন, বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্ব দুই দেশকেই শত্রু হিসেবে দেখে। তবে মধ্যপ্রাচ্যে পারমাণবিক অস্ত্রের প্রতিযোগিতা শুরু করতে মস্কো আগ্রহী নয়।
জাখারোভা বলেন, রাশিয়া এমন সমাধান চায়, যা পশ্চিমের সন্দেহ দূর করবে এবং আস্থা ফিরিয়ে আনবে। ২০১৮ সালে ট্রাম্প প্রশাসন ইরানের পারমাণবিক চুক্তি (জেসিপিওএ) থেকে একতরফা বেরিয়ে যায়, যার জবাবে ইরান চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বাড়িয়ে দেয়। জাখারোভা বলেন, অন্যরা চুক্তি ভেঙেছে, এর দায় ইরানের ওপর চাপানো যায় না।