হাসনাত বললেন

দলীয় ছাত্ররাজনীতির ব্যানার সবসময় সাধারণ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, দলীয় ছাত্র রাজনীতির পক্ষে থাকা নেতাদের যুক্তি দলীয় ছাত্র রাজনীতি না থাকলে নাকি নেতা গড়ে উঠবে না। ১৯৪৮, ১৯৫২, ১৯৭১, ১৯৯০, ২০১৮ এবং ২০২৪ এর দিকে দেখলে আমরা দেখি দলীয় ছাত্র রাজনীতির নেতারা জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, ’৪৮ ও ’৫২তে আওয়ামী লীগের কেউ ১৪৪ ধারা ভাঙেনি। একাত্তরে আওয়ামী লীগের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে এখনও। '১৮তে ছাত্রলীগের ভূমিকা দেখেছি। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে, কোটা সংস্কার আন্দোলনে এবং '২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে আমরা দলীয় ছাত্ররাজনীতির অবস্থান দেখেছি। দলীয় ছাত্র রাজনীতির ব্যানারে সবসময়ই তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে ‘গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী ছাত্ররাজনীতি প্রশ্ন: নয়া স্বরূপ অনুসন্ধানের অভিপ্রায়’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে ‘ডায়ালগ ফর ডেমোক্রেসি’ নামক একটি প্ল্যাটফর্ম। এতে হাসনাত এসব কথা বলেন। 

সভায় জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আক্তার হোসেন, শিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সহসাধারণ সম্পাদক মেঘমল্লার বসু বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন আমন্ত্রিত ছিলেন, তবে আসেননি তিনি। 

হাসনাত বলেন, ছাত্ররাজনীতি সংস্কৃতি পরিবর্তন করতে হবে। ছাত্ররাজনীতি হতে হবে শিক্ষার্থীদের অধিকার সংরক্ষণের রাজনীতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংসদ নির্বাচনগুলো হতে হবে নিয়মিত। মেধার ভিত্তিতে হলের সিট বণ্টন এবং হলগুলোর আবাসনের দায়িত্ব প্রশাসনের কাছে ন্যস্ত করতে হবে। ফ্যাসিবাদবিরোধী অবস্থানে সকল ছাত্রসংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন বলেন, ছাত্ররাজনীতির বয়সসীমা নির্ধারণ করে দিতে হবে। আমরা দেখেছি, একজন যত বেশি সময় ছাত্ররাজনীতিতে সক্রিয় থাকেন তত বেশি তার ভয়ানক হয়ে ওঠার প্রবণতা বাড়তে থাকে।

আখতার বলেন, ছাত্ররাজনীতির যে খারাপ দিকগুলো আছে যার কারণে শিক্ষার্থীরা সবসময় নির্যাতিত নিপীড়িত এসেছে সে জায়গায় যদি কারো দায় থাকে তার সব থেকে বড় দায় প্রশাসনের। আমি ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেছি। প্রশাসন কখনোই ছাত্রলীগের কোনো নেতাকে ডেকে নিয়ে শাস্তি দেওয়া দূরের কথা, এমনকি সতর্ক পর্যন্ত করেনি।

তিনি বলেন, ’১৯ সালের ডাকসু নির্বাচন হয়েছে ২৮ বছর পর। ’১৯ সালের পর এখন ’২৪ সাল, ৫ বছর হতে যাচ্ছে আরেকটি ডাকসু নির্বাচন হচ্ছে না। আমরা যতই পরিবর্তনের কথা বলি যদি নিয়মিত ডাকসু নির্বাচন না হয়, তাহলে পরিবর্তনগুলো টেকসই হবে না। প্রতিবছর ছাত্র সংসদ নির্বাচনগুলো হতে হবে এবং এ বিষয়ে সকলকেই একমত হতে হবে।

আলোচনায় ইসলামী ছাত্রশিবির সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম বলেন, ছাত্রশৃঙ্খলা বিধি নামে একটি ব্যবস্থাপনা চালু করা যেতে পারে। এই ছাত্রশৃঙ্খলা বিধিতে স্বতন্ত্র এবং দলগতভাবে সে বিধি মেনে চলতে হবে। ছাত্রশৃঙ্খলা বিধি গঠনের জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক কমিশন হতে পারে এবং পরবর্তীতে সকলে সে বিধিমালা ঐক্যবদ্ধভাবে মেনে নেওয়ার মতো মানসিকতা প্রয়োজন হবে।

শিবিরের সেক্রেটারি জাহিদুল ইসলাম ছাত্র সংগঠনে নারীদের উপস্থিতির বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫০ শতাংশ বা এর বেশি। কিন্তু এরপরও যখন ২২৫ সদস্যের কমিটি হয় সেখানে নারী সদস্যদের সংখ্যা থাকে ৫-৬ বা ৮ জন। এর চেয়ে বড় বৈষম্য আর কিছু হতে পারে না। এ জন্য প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি হলে ১০০ জন নারী থাকবে এবং ১০০ জন পুরুষ থাকবে।

তিনি বলেন, আমরা চাই নারীদের আলাদা প্লাটফর্ম হোক। এক্ষেত্রে কোনো দল যদি সেটা অনুসরণ করতে না পারে তাহলে সে ক্ষেত্রে আমাদের পরামর্শ— নারীদের আলাদা কমিটি হবে এবং পুরুষদের জন্য আলাদা কমিটি হবে।

সভায় মেঘমল্লার বসু বলেন, ডাকসুর গঠনতন্ত্রের সভাপতির একনায়কতান্ত্রিক ক্ষমতাগুলোকে বিলুপ্ত করতে হবে। ছাত্র সংসদের প্রধান (সভাপতি) কোনোভাবেই একজন অছাত্র বা শিক্ষক হতে পারে না। ডাকসুর গঠনতন্ত্রে যিনি সভাপতি তিনি যেকোনো মুহূর্তে বিধিবহির্ভূতভাবে ডাকসু বিলুপ্ত করে দিতে পারেন, যেকোনো সময় ডাকসুর যেকোনো সদস্যকে বরখাস্ত করতে পারেন। গঠনতন্ত্রের ব্যাখ্যা নিয়ে কোনো দ্বিমত তৈরি হলে সেই ব্যাখ্যা কি হবে তা দেওয়ার ক্ষমতা থাকে সভাপতির। এছাড়া কোন বিষয়টি এজেন্ডায় আলোচনা হবে, তা ২৪ ঘণ্টা পূর্বে সভাপতিকে অবহিত করতে হয় এবং তিনি যদি বলেন এই এজেন্ডায় আলোচনা করা যাবে না তাহলে সে আলোচনা হবে না। 

তিনি বলেন, ডাকসুর লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যের কোথাও 'গণতন্ত্র-অধিকার' এই শব্দগুলো নাই। এর যে কাঠামো এর পুরোটাই ‘কালচারাল এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম বা বা ইন্টেলেকচুয়াল এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের মতো’। ডাকসুর গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করার মাধ্যমে ডাকসুকে একটি গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার লড়াইয়ের সংগঠন বা ফোরামে পরিবর্তন করতে হবে। হলগুলোর আবাসনের যে দায়িত্ব প্রশাসনের কাছে ব্যস্ত করতে হবে। এসব পরিবর্তন করলেই অপরাজনীতি অনেকাংশই মেরামত হবে।

‘ডায়ালগ ফর ডেমোক্রেসি’র আহ্বায়ক শেখ মো. আরমান সভায় সভাপতিত্ব করেন। 



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews