অস্ট্রেলিয়ার নানা সংবাদ নিজেদের প্ল্যাটফর্মে প্রকাশের জন্য দেশটির গণমাধ্যমকে অর্থ দিতে হয় মেটা ও গুগলের মতো বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানকে। রীতিমতো আইন করেই এই অর্থ নেয় অস্ট্রেলিয়া সরকার।
তবে সম্প্রতি অর্থ দিতে বেঁকে বসে মেটা। এরপর এ–সংক্রান্ত নতুন নিয়ম জারি করতে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। ফলে দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলোকে অর্থ দিতে বাধ্য হবে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো।
আগের আইনটি ২০২১ সালে পাস করেছিল অস্ট্রেলিয়া সরকার। সে অনুযায়ী, নিজেদের প্ল্যাটফর্মে (যেমন ফেসবুক ও গুগল) খবর প্রকাশের জন্য অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যমগুলোর সঙ্গে চুক্তি করতে হতো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে। ওই চুক্তি মেনে অর্থ পরিশোধ করতে হতো তাদের। চলতি বছরের শুরুর দিকে মেটা জানায়, এই চুক্তি আর নবায়ন করবে না তারা।
এরপর বৃহস্পতিবার প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য নতুন নিয়মগুলো ঘোষণা করা হয়। সে অনুযায়ী কোনো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান যদি অস্ট্রেলিয়া থেকে বছরে ১৬ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি আয় করে, তাহলে তাদের দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলোর সঙ্গে বাধ্যতামূলক বাণিজ্যিক চুক্তি করতে হবে। এর ব্যতিক্রম হলে প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর উচ্চহারে করারোপ করা হতে পারে।
অস্ট্রেলিয়া সরকারের নতুন নিয়মগুলো এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এ নিয়ে কাজ শেষ হওয়ার পর সেগুলো ফেসবুক, গুগল ও টিকটকের মতো প্রতিষ্ঠানের ওপর প্রয়োগ করা হবে। নিয়মগুলোর বিষয়ে এক বিবৃতিতে মেটা বলেছে, তারা সরকারের নতুন এই সিদ্ধান্তে উদ্বিগ্ন। কারণ, এক প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ক্ষতি সামাল দিতে অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে অর্থ চাওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ার সহকারী অর্থমন্ত্রী স্টিফেন জোনস বলেন, অস্ট্রেলিয়া থেকে বিপুল পরিমাণ আর্থিক সুবিধা পায় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো। তাই অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকদের জন্য মানসম্মত সাংবাদিকতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখার সামাজিক ও অর্থনৈতিক দায়িত্ব রয়েছে তাদের।
২০২১ সালের আইন অনুযায়ী, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যমগুলো বাণিজ্যিক চুক্তি করেছিল। একই সঙ্গে দেশটির স্থানীয় ডিজিটাল কনেটন্ট (আধেয়) তৈরিতে ফেসবুক ও গুগলের মতো প্ল্যাটফর্মের লাখ লাখ ডলার বিনিয়োগের পথও সৃষ্টি হয়েছিল। ওই চুক্তির মেয়াদ এখন শেষের পথে। এমন সময় চুক্তি নবায়ন না করার কথা জানায় মেটা। এতে সংবাদমাধ্যমগুলো প্রায় ২০ কোটি অস্ট্রেলীয় ডলার ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।
ফেসবুকের অস্ট্রেলিয়া সংস্করণে সংবাদ দেখার জন্য আলাদা একটি ব্যবস্থা (ট্যাব) রাখা হয়েছে। মেটা ওই ট্যাবটি সরিয়ে দেওয়ার কথা বলেছে। সংবাদমাধ্যমকে যে অর্থ দিতে হতো, তা অন্য কোথাও বিনিয়োগ করবে তারা। গত ফেব্রুয়ারিতে মেটা এক বিবৃতিতে বলেছিল, ‘আমরা জানি যে খবর ও রাজনৈতিক তথ্য পাওয়ার জন্য মানুষ ফেসবুকে আসে না। সারা বিশ্বে মানুষ ফেসবুকে যা দেখে, তার মধ্যে খবর ৩ শতাংশের কম।’
মেটার ঘোষণার পর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজের সরকার। সে সময় দেশটির তথ্যমন্ত্রী মিশেল রোল্যান্ড বলেছিলেন, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্ল্যাটফর্মে যদি সংবাদ না থাকে তাহলে সেখানে একটি শূন্যতা তৈরি হবে। এতে ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে।
প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর করারোপের এই নীতি আগামী জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। পরে ফেব্রুয়ারিতে পার্লামেন্টের অধিবেশন বসলে তা আইনে পরিণত করা হতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার সরকার বলেছে, তারা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে অর্থ নিয়ে নিজেদের আয় বাড়াতে চায় না; বরং এই নিয়মের মাধ্যমে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো অস্ট্রেলিয়ার সাংবাদিকতাকে এগিয়ে নিতে অর্থ দেবে। বিনিময়ে তাদের কর মওকুফ করা হবে।