বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকে বিষণ্ণ হয়ে যান, অতীতের কথা ভেবে আফসোস করেন, জীবনটা যেন আনন্দের বদলে একঘেয়ে আর ক্লান্তিকর হয়ে ওঠে। কিন্তু কিছু মানুষ রয়েছেন, যাঁরা বয়স বাড়লেও আরও প্রাণবন্ত, আনন্দময় আর পরিতৃপ্ত থাকেন। তাঁদের দেখে মনে হয়, যেন জীবনের প্রতি তাঁদের ভালোবাসা কখনো ফুরোবে না!
আসলে এই মানুষগুলোর একটি বিশেষ গুণ আছে,তাঁরা জীবনকে অন্যভাবে দেখেন, আর কিছু ভালো অভ্যাস ধরে রাখেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক এমন ১০টি দারুণ অভ্যাস, যা সত্যিকারের সুখী মানুষদের বয়স বাড়লেও তরুণ ও উজ্জ্বল রাখে-


১. শেখার আগ্রহ কখনো হারিয়ে ফেলেন না
যাঁরা সত্যিই সুখী, তাঁরা কখনো বলেন না, "এটা শিখতে আমি অনেক বুড়ো হয়ে গেছি।" বরং তাঁদের মন সবসময় নতুন কিছুর জন্য উন্মুক্ত থাকে। নতুন ভাষা শেখা হোক, প্রযুক্তি শেখা হোক, বা অন্য যে কোনো দক্ষতা,তাঁরা জীবনের প্রতিটি ধাপে শেখার সুযোগ খোঁজেন।


২. সম্পর্কের যত্ন নিতে জানেন
সুখী মানুষ জানে, ভালো সম্পর্কের মূল্য কতখানি। তাঁরা পরিবার, বন্ধু, প্রিয়জনদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন, সময় দেন। তাদের ভালো-মন্দে পাশে থাকেন। গবেষণাও বলছে, সত্যিকারের সুখ আসে মানসিকভাবে সহায়ক সম্পর্কগুলো থেকে, সংখ্যায় বেশি বন্ধু থাকার প্রয়োজন নেই, দরকার হলো মানসম্পন্ন কিছু ভালো সম্পর্ক।


৩. অতীতের দুঃখ-কষ্ট আঁকড়ে থাকেন না
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই অতীতের কষ্ট ভুলতে পারেন না। কিন্তু যারা সুখী, তাঁরা জানেন ক্ষমা করা মানে পরাজয় নয় বরং নিজের জন্যই তা জরুরি। ক্ষোভ ও অনুশোচনা ধরে রাখলে সুখের জায়গা কমে যায়। তাই তাঁরা ভুলগুলো মেনে নিয়ে জীবনকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে শিখে ফেলেন।


৪. আত্ম-যত্নকে অগ্রাধিকার দেন
সুখী মানুষ জানে, নিজের যত্ন নেওয়া বিলাসিতা নয়, বরং একান্ত প্রয়োজনীয়। তাঁরা মানসিক, শারীরিক ও আবেগিক সুস্থতার প্রতি গুরুত্ব দেন। সেটা হতে পারে সকালে ধ্যান করা, নিয়মিত ব্যায়াম করা, পছন্দের কোনো শখে সময় দেওয়া, বা কেবলমাত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে একটু বিরতি নেওয়া। তাঁরা বুঝে গেছেন,নিজের ভালো থাকার ওপরই সবকিছু নির্ভর করে।


৫. কৌতূহলকে বাঁচিয়ে রাখেন
অনেকেই মনে করেন, বয়স বাড়লে নতুন কিছু শেখা বা জানার প্রয়োজন কমে যায়। কিন্তু সত্যিকারের সুখী মানুষরা বরং উল্টোটা করেন। তাঁরা সবসময় জানতে চান,নতুন কী হচ্ছে, কোন নতুন বই পড়া যায়, কীভাবে নতুন একটি দক্ষতা আয়ত্ত করা যায়। এই কৌতূহল তাঁদের জীবনকে আরও রঙিন আর উচ্ছ্বসিত রাখে।


৬. নিজেকে নিয়ে হাসতে পারেন
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকে নিজেদের খুব সিরিয়াস করে ফেলেন, কিন্তু সুখী মানুষরা তা করেন না। তাঁরা নিজেদের ছোটখাটো ভুল নিয়ে হাসতে পারেন, জীবনকে অতিরিক্ত চাপ নিয়ে দেখেন না। হাসি তাঁদের জীবনকে হালকা ও প্রাণবন্ত রাখে।


৭. সীমা নির্ধারণ করতে জানেন
সুখী মানুষরা বোঝেন, ‘না’ বলাও গুরুত্বপূর্ণ। তাঁরা নিজের সময় ও শক্তিকে সঠিক জায়গায় ব্যয় করেন এবং যেসব জিনিস তাঁদের মানসিক শান্তি কেড়ে নেয়, তা থেকে দূরে থাকেন। অন্যের প্রত্যাশার চাপে নিজেকে হারিয়ে ফেলেন না বরং যেখানে প্রয়োজন, সেখানে সীমানা টানতে জানেন।


৮. অন্যদের সাফল্যে আনন্দ পান
যাঁরা সত্যিই সুখী, তাঁরা অন্যের সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হন না, বরং আন্তরিকভাবে খুশি হন। তাঁরা অন্যদের সাহায্য করতে ভালোবাসেন, প্রশংসা করতে জানেন এবং অন্যদের আনন্দে নিজেরাও আনন্দ খুঁজে নেন।


৯. ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করেন
বিশ্বাসযোগ্যতা ও সম্মান তৈরির অন্যতম উপায় হলো গোপনীয়তা বজায় রাখা। সুখী ও সম্মানিত ব্যক্তিরা জানেন, কোনো সংবেদনশীল কথা বা ব্যক্তিগত তথ্য অন্যের সঙ্গে শেয়ার করা উচিত নয়। অন্যরা যখন জানে যে, তাঁদের কথা নিরাপদ থাকবে, তখনই প্রকৃত সম্পর্কের ভিত্তি তৈরি হয়।


১০. জীবনের ছোট জিনিসগুলো উপভোগ করেন
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—সুখী মানুষদের জন্য আনন্দ মানে শুধুই বড় কিছু পাওয়া নয়। তাঁরা জীবনের ছোট ছোট মুহূর্তগুলো উপভোগ করতে জানেন—গোধূলির নরম আলো, প্রিয়জনের হাসি, এক কাপ ধোঁয়া ওঠা চা, কিংবা বৃষ্টির শব্দ। এই ছোট ছোট আনন্দই তাঁদের জীবনকে পরিপূর্ণ করে তোলে।


সত্যিকারের সুখ কোনো নির্দিষ্ট গন্তব্য নয়, বরং প্রতিদিনের ছোট ছোট সিদ্ধান্তের ফল। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাঁরা জীবনের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব ধরে রাখেন, শেখার আগ্রহ হারান না, সম্পর্কের যত্ন নেন এবং অতীতের ভার ঝেড়ে ফেলেন,তাঁরাই সত্যিকারের আনন্দ খুঁজে পান। সুখ আসলে একটা অভ্যাস, যা প্রতিদিন চর্চা করতে হয়!


সূত্র:https://tinyurl.com/35khf7ww



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews