সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে প্রত্যন্ত গ্রামের আলোচিত সেই গুপ্তঘরের (কথিত আয়নাঘর) রহস্য উদঘাটন করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।  

গুপ্তঘরের মালিক সুমনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।



মঙ্গলবার (১৩ মে) সন্ধ্যায় সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলমগীর হোসেনের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন সুমন।  

তিনি রায়গঞ্জ উপজেলার চান্দাইকোনা ইউনিয়নের সোনারাম গ্রামের জহুরুল ইসলামের ছেলে। নাজমুল হোসেন আরাফাত একই ইউনিয়নের পূর্ব লক্ষ্মীকোলা গ্রামের মৃত রেজাউল করিম তালুকদারের ছেলে। ভিকটিম আব্দুল জুব্বার উপজেলার পূর্ব পাইকড়া গ্রামের বাসিন্দা এবং শিল্পী খাতুন লক্ষ্মী বিষ্ণুপ্রসাদ গ্রামের মনসুর আলীর স্ত্রী।  

বুধবার (১৪ মে) বিকেলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিরাজগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশের এসআই নাজমুল হক রতন বলেন, সুমনের জবানবন্দি এবং সেটা যাচাই-বাছাই করে আয়নাঘর বলতে কিছু পাওয়া যায়নি। ওই নারী এবং বৃদ্ধকে নির্যাতনের চিহ্নও মেলেনি। মূলত বৃদ্ধ আব্দুল জুব্বার একজন বিয়ে পাগল মানুষ। প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তিনি আরও তিনটি বিয়ে করেছেন। তবে তার ছেলে-মেয়েরা পর্যায়ক্রমে তিনটি স্ত্রীকেই অত্যাচার করে তাড়িয়ে দিয়েছেন। বৃদ্ধের নিজের নামে ৮ বিঘা জমি রয়েছে। তার জমি হাতিয়ে নেওয়ার জন্য শিল্পী খাতুন নামে ওই নারীর সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার কথা বলে তাদের দুমাস আটকে রাখেন মাস্টারমাইন্ড আরাফাত।  

তিনি আরও বলেন, আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে সুমন জানিয়েছেন, প্রায় এক বছর আগে দুর্ঘটনায় তার বাবা জহুরুল ইসলামের পায়ের তিনটি আঙুল কেটে ফেলতে হয়। সেই কাটা আঙুলে পচন ধরে। তার চিকিৎসার সূত্র ধরেই গ্রাম্য ডাক্তার নাজমুল হোসেন আরাফাতের সঙ্গে পরিচয় এবং সম্পর্ক হয় সুমনের। আরাফাতের এক ভাই চিকিৎসক, তার পরামর্শেই জহুরুলের চিকিৎসা করেন তিনি। এতে জহুরুলের পা ভালো হয়ে যায়।  

সম্পর্কের সূত্র ধরে গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসার কথা বলে সুমনের নির্মাণাধীন ঘর ভাড়া চান আরাফাত। ঘর রেডি না হওয়ায় সুমন আরাফাতকে ঘরটি ঠিক করে নিতে বলেন। পরে আরাফাত তিন লাখ টাকা দিয়ে দুটো রুম তৈরি করে নেন। এটাচ বাথরুমের জন্য আরাফাত নিচে হাউজ করেন। ওই হাউজকেই কথিত আয়নাঘর বা গুপ্তঘর হিসেবে উল্লেখ করেন বন্দি থাকা শিল্পী ও জুব্বার।  

এসআই নাজমুল হক রতন আরও বলেন, সুমনের ভাষ্য অনুযায়ী গত শবে বরাতের ১০/১২ দিন আগে রাতে আব্দুল জুব্বারকে নিয়ে আসেন আরাফাত। তখন বৃদ্ধের ব্যাপারে প্রশ্ন করলে আরাফাত বলেন তাকে বিয়ে দেব। বৃদ্ধ নিজেও বিয়ের করবেন বলে স্বীকার করেন। প্রথম দু/তিনদিন বৃদ্ধকে কলা রুটি খেতে দেওয়া হয়। বিষয়টি সুমনের মা জানতে পারলে তিনি তাকে খাবার দিতে থাকেন। এর ১৪ দিন পর শিল্পী খাতুনকে নিয়ে এসে আরাফাত বলেন, বৃদ্ধের সঙ্গে এই নারীর বিয়ে দেব। বৃদ্ধ বিয়েতে রাজি হয়। দুজনে একসঙ্গেই থাকেন। তাদের ওই কক্ষটিতে বাইরে থেকে তালা দিয়ে রাখা হয়। তবে বাইরের দরজা দিয়ে দুজনেরই পালানোর সুযোগ থাকলেও তারা পালাননি। আন্ডারগ্রাউন্ড কক্ষে তাদের রাখা হয়নি। বেশ কিছুদিন থাকার পর সুমনের সঙ্গে শিল্পীর চার/পাঁচদিন শারীরিক সম্পর্ক হয়। তখন শিল্পী সুমনকে বিয়ে করতে চান। তবে বয়সের তফাৎ থাকায় সুমন বিয়ে করতে রাজি হন নাই। এর মধ্যে মমিন নামে আরেকজনকে নিয়ে আসেন আরাফাত। তারা বৃদ্ধকে বলেন, তোমার জমির কাগজপত্র নিয়ে আসো। শিল্পীকে বিয়ে করতে চাইলে তার নামে জমি লিখে দাও। বৃদ্ধ বলে, আমার কাছে এখন তো কাগজপত্র নেই।  

সুমন জবানবন্দিতে আরও বলেন, ১০/১২ দিন পর দুজনকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলেন আরাফাত। কিন্তু ২ মে সকালে উঠেই দেখি তারা কেউ নেই। সকালেই এলাকাবাসী এসে আমার বাড়িঘরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। অবস্থা বেগতিক দেখে আমি পালিয়ে যাই। আরাফাত পাওনা তিন লাখ টাকা পরিশোধ ও আরও ৫০ হাজার টাকা দিতে চেয়েছিলেন, এজন্য তাকে সহযোগিতা করেছি।  

এসআই নাজমুল আরও বলেন, প্রধান আসামি আরাফাতকে পুনরায় রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে, আরও বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে।  

প্রসঙ্গত, গত ২ মে ভোরে রায়গঞ্জ উপজেলার সোনারাম গ্রামে দিনমজুর সুমনের বাড়িতে নির্মাণাধীন ভবনের নিচে গুপ্তঘর থেকে মাটি খুঁড়ে সুরঙ্গ পথ তৈরি করে বেড়িয়ে আসেন বলে দাবি করেন শিল্পী খাতুন ও আব্দুল জুব্বার। তারা বলেন গুপ্তঘরে বৃদ্ধকে ৫ মাস ২৫ দিন ও শিল্পীকে ৪ মাস বন্দী রাখা হয়েছিল। এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ জনতা জহুরুলের বাড়িঘর ও গুপ্তঘর ভাঙচুর এবং আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। একই দিনে পশ্চিম লক্ষ্মীকোলা গ্রামে অভিযুক্ত নাজমুল ইসলাম আরাফাতের ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।  

এ ঘটনায় শিল্পীর স্বামী মনসুর আলী ও আব্দুল জুব্বারের ছেলে শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। এসব মামলায় ২৫ জনকে আসামি করা হয়। গ্রেপ্তার করা হয় প্রধান আসামি নাজমুল হোসেন আরাফাতকে। পুলিশী অনুসন্ধানে আন্ডারগ্রাউন্ড কক্ষ পাওয়ার বিষয়টি উঠে আসে। তবে সেটি আয়না ঘরের মতো নয়। ১২ মে দুটি মামলার তদন্তভার গোয়েন্দা পুলিশে হস্তান্তর করা হয়। দুটি মামলা তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন এসআই নাজমুল হক রতন। সোমবার রাতে সদর উপজেলার বহুলী বাজার থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সুমনকে। মঙ্গলবার ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করে সুমনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।  

আরএ



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews