“কর অব্যাহতির সংস্কৃতিতে আর থাকতে চাই না,” বলেন তিনি।

বীমা খাতে ‘দুর্নামের শেষ নেই’ মন্তব্য করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেছেন, কোনো কোনো জীবন বীমা কোম্পানির মালিকরা আমানতকারীদের টাকা নিজের ভাবেন।

তার ভাষ্যে, “কোনো কোনো লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মালিকদের মধ্যে এমন প্রবণতা আছে- এখানে যা টাকা আছে, সব আমার। এরকম একটা প্রবণতা আছে। ভয়ানক। ভয়ানক অবস্থা।

“এটা যে ডিপোজিটরের টাকা, এটা যে পলিসি হোল্ডারের টাকা, এটা যে আমার টাকা না, আমি যে আমানতকারী না এবং আমাকে যে এটা ফেরত দিতে হবে উইথ বেনিফিট- এটাই মাথায় নাই। ডেঞ্জারাস।"

সোমবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনে এনবিআরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় বক্তব্য দিচ্ছিলেন আবদুর রহমান।

সুশাসনের অনুপস্থিতিই বীমা খাতের বড় সমস্যা মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সবচেয়ে বড় প্রবলেম হলো- আপনারা এমন একটা ব্যবসা করেন, যেখানে ব্যবসা করার জন্য যে টেকনিক্যাল এক্সপার্টাইজ দরকার; সেই টেকনিক্যাল এক্সপার্টাইজ ছাড়াই আপনারা ব্যবসা করেন এবং সে টেকনিক্যাল এক্সপার্টাইজকে লালন-পালন করার কোনো উদ্যোগ আপনাদের নাই।

“উন্নয়ন সহযোগীরা দেশের বীমা খাতকে প্রমোট করতে বলছে, কিন্তু এই সমস্ত কারণে এটা আগায় না।”

উন্নত দেশের মত বীমা কোম্পানিগুলোকে হেলথ কার্ড চালুর তাগিদ দিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “হেলথ ইন্স্যুরেন্স ভালভাবে দিতে পারলে বাংলাদেশের মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়বে।"

বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেন সংগঠনের সভাপতি সাঈদ আহমেদ। তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে- করপোরেট কর কমানো, স্বাস্থ্যবীমার ওপর শুল্ক বাতিল করা, অনলাইনভিত্তিক বীমার প্রিমিয়ামের উপর ভ্যাট ও করপোরেট কর রহিত করা।

কর সুবিধার ‘প্রভাব পড়েনি’ পুঁজিবাজারে

ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ, ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ও মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন পুঁজিবাজারে কর অব্যাহতির দাবি তুলে ধরে।

জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বলেন, “সারাজীবন কর অব্যাহতি দিলাম, রেজাল্ট তো আসে না। আগেই কেন অব্যাহতির কথা আসে। সবার আগে কেন ট্যাক্স হলিডে লাগবে?

“কর অব্যাহতির সংস্কৃতিতে আর থাকতে চাই না। অব্যাহতি দিতে দিতে নিম্ন কর-জিডিপি অনুপাত থেকে বের হতে পারছি না। আমাদের বদনাম হয়ে গেছে যে, রাজস্ব যা আদায় করি, তার সমপরিমাণ অব্যাহতি দেই।"

তিনি বলেন, “পুঁজিবাজারে যত সুবিধা দেওয়া হয়েছে, মার্কেটে তার বেনিফিট পাওয়া যায়নি। গত ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে যারা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছে, তারা ৭ থেকে ১৫ শতাংশ ক্যাপিটাল হারিয়েছে।

“আমররা অব্যাহতির সংস্কৃতি থেকে বের হচ্ছি। আমরা পণ করেছি অব্যাহতি আর দেব না। অব্যাহতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি।"

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মোমিনুল ইসলাম নিজেদের বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেন। বিনিয়োগকারীর মূলধনী মুনাফার ওপর সম্পূর্ণ কর অব্যাহতি চায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। এছাড়া স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যদের কাছ থেকে উৎসে কর হার কমানো, উৎসে লভ্যাংশ আয়ের উপর কর কমানো, তালিকাভুক্ত বন্ড থেকে অর্জিত আয় বা সুদের ওপর কর অব্যাহতির প্রস্তাব দেয় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ তাদের বাজেট প্রস্তাবে লভ্যাংশ করের ওপর দ্বৈতকরের বিধান প্রত্যাহার করে তা করমুক্ত করার দাবি জানিয়েছে। এছাড়া তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার ব্যবধান ১০ শতাংশ করাসহ বেশ কয়েকটি প্রস্তাব দিয়েছে।

আর ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ মূলধনী আয়ের উপর করহার ১৫ শতাংশের পরিবর্তে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে- ভ্যাট সফটওয়্যার বাস্তবায়ন, ঋণ অ্যাকাউন্ট ও ক্রেডিট কার্ড অ্যাকাউন্টের ওপর আবগারি শুল্ক প্রত্যাহার, মূসক নীরিক্ষা কার্যক্রম সমাপ্তির সময় সুনির্দিষ্ট করা।

আর মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রস্তাবে রয়েছে- মার্চেন্ট ব্যাংকের করপোরেট করহার ২৫ শতাংশ করা, স্টক লভ্যাংশের ওপর কর প্রত্যাহার করা, তালিকাভুক্ত কোম্পানির ভ্যাটের হার কমিয়ে ১০ শতাংশ করা।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews