ঢাকা, ২৬ জানুয়ারি – প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে রিলায়েন্স ফাইন্যান্স ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পি কে হালদার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। বিদেশে পলাতক প্রশান্ত কুমার হালদারকে (পি কে হালদার) ফেরত আনতে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছে পুলিশ।

এরইমধ্যে তাকে গ্রেফতার করে দেশে ফিরিয়ে আনতে পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোল (ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন) থেকে রেড নোটিশ জারি করা হয়েছে। তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হলে কিভাবে ফিরিয়ে আনা হবে সেটি নিয়ে কাজ করছেন সংশ্লিষ্টরা।

দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া পি কে হালদারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়া জারি করতে গত ৪ জানুয়ারি পুলিশ সদর দফতরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) থেকে ইন্টারপোলকে চিঠি দেওয়া হয়। পরদিন ৫ জানুয়ারি বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছে বিষয়টি নিশ্চিত করেন এনসিবি’র এআইজি মহিউল ইসলাম। চিঠিতে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করার সুপারিশ করা হয়। এরপর ৮ জানুয়ারি পি কে হালদারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল রেড নোটিশ জারির বিষয়টি নিশ্চিত করেন পুলিশ সদর দফতরের জনসংযোগ বিভাগের এআইজি সোহেল রানা।

আরও পড়ুন : বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রথম নৌপ্রধান ক্যাপ্টেন নুরুল হক আর নেই

তিনি জানান, বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে ইন্টারপোলের কাছে যে আবেদন করা হয়েছিল সেই আবেদনে পি কে হালদারের সম্ভাব্য অবস্থান তুলে ধরা হয়। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলাসহ আরও যেসব অভিযোগ রয়েছে, সেগুলো সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয় ইন্টারপোলের কাছে। এরপরই ইন্টারপোল পি কে হালদারের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করে।

রেড নোটিশ জারির পর কিভাবে পি কে হালদারকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) এআইজি মহিউল ইসলাম বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ পুলিশ সংস্থায় (ইন্টারপোল) রেড নোটিশ জারির জন্য প্রথমে আবেদন করতে হয়। তারপর এটা জারি হলে আসামিকে ধরার জন্য চেষ্টা চলতে থাকে। আর আমরা যেটা করি, মাঝে মাঝেই ইন্টারপোলের কাছে আসামিদের আপডেট চেয়ে মেইল করি।

পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ইন্টারপোলের সহযোগিতায় যখন কোনও আসামি গ্রেফতার হয়, তখন তারা সংশ্লিষ্ট দেশকে বিষয়টি অবগত করে জানায় যে অমুক দেশ বা স্থান থেকে গ্রেফতার হয়েছে। পরে ওই দেশের পুলিশের মাধ্যমে আসামিকে আদালতে উপস্থাপনের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর শুরু হয় দেশে নিয়ে আসার প্রক্রিয়া। ৪০ কার্যদিবসের মধ্যে এই প্রক্রিয়া শেষ করার একটা বাধ্যবাধকতা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

অন্যদিকে কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, প্রত্যর্পণ বা বন্দি বিনিময় চুক্তি না থাকলে ইন্টারপোল সংক্রান্ত বিষয়াদি দুদেশের পুলিশের যোগাযোগের মাধ্যমে আসামি হস্তান্তর হয়ে থাকে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন রাষ্ট্রদূত বলেন, ইন্টারপোলের মাধ্যমে কোনও আসামিকে বিদেশে চিহ্নিত করা হলে ওই দেশের পুলিশ বাংলাদেশ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে থাকে। এখানে দূতাবাস ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুধুমাত্র সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে অনেক সময় বিদেশে আসামি চিহ্নিত করার পরও ওইদেশ আসামিকে ফেরত দিতে অপরাগতা প্রকাশ করতে পারে। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আসামিকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া জটিল হয়ে যায়।

কোন কোন ক্ষেত্রে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় জানতে চাইলে এই রাষ্ট্রদূত বলেন, আসামিকে যে শাস্তি দেওয়া হয়েছে সেটি যদি অন্যদেশের আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয় তবে আসামিকে ফেরত দিতে অস্বীকার করা হতে পারে। যেমন যেসব দেশে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেওয়া হয় না সেসব দেশ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে হস্তান্তর করতে চায় না।

প্রসঙ্গত, আর্থিক খাত থেকে আত্মীয়-স্বজনসহ তার চক্রের মাধ্যমে অন্তত ১০ হাজার কোটি টাকা সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে। তবে এখন পর্যন্ত ৪০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের তথ্য পেয়েছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। দুদক ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ পি কে হালদার এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে। এছাড়া দুদকের ক্যাসিনো মামলায় চার্জশিট তালিকায় লিজিং কোম্পানি ও আর্থিক খাত থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা পাচারেও তার নাম এসেছে।

সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন
এন এ/ ২৬ জানুয়ারি



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews