মাইক্রোসফটের ঘোষণানুযায়ী, ২০২৫ সালের ১৪ অক্টোবর থেকে উইন্ডোজ ১০-এর অফিসিয়াল সাপোর্ট বন্ধ হয়ে যাবে। এরপর আর কোনো সিকিউরিটি আপডেট, বাগ ফিক্স বা প্রযুক্তিগত সহায়তা পাওয়া যাবে না। এর ফলে ডিভাইসগুলো ম্যালওয়্যার, ভাইরাস এবং সাইবার আক্রমণের ঝুঁকিতে পড়বে এবং নতুন হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের সঙ্গে অসামঞ্জস্যতা দেখা দেবে।

বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আইসিটি প্রতিষ্ঠান, ছোট ব্যবসা এবং ব্যক্তিগত ব্যবহারকারীদের জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ, বিশেষত যেসব কম্পিউটার উইন্ডোজ ১১-এ আপগ্রেডের উপযোগী নয়। সমস্যার সমাধানে পুরোনো ডিভাইসগুলোতে বিকল্প অপারেটিং সিস্টেম ইনস্টল করে তা পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করা যেতে পারে। এটি নতুন ডিভাইস কেনার খরচ সাশ্রয় করবে এবং পরিবেশ রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

উইন্ডোজ ১০ এখনও বিশ্বব্যাপী ডেস্কটপ অপারেটিং সিস্টেমের বাজারে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। জেডডিনেট-এর তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৬০% উইন্ডোজ পিসি এখনও উইন্ডোজ ১০ ব্যবহার করছে, যা প্রায় ৭০ কোটিরও বেশি। ক্যানালিসের অনুমান অনুযায়ী, সাপোর্ট বন্ধ হওয়ার ফলে প্রায় ২৪ কোটি পিসি ইলেকট্রনিক বর্জ্যে পরিণত হবে।

বাংলাদেশে উইন্ডোজ ১০ ব্যবহারের সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান পাওয়া কঠিন হলেও স্ট্যাট কাউন্টারের তথ্যানুযায়ী, ৭৪.৮৬% উইন্ডোজ ১০, ২১.২৯% উইন্ডোজ ১১ এবং ৩.৩৬% উইন্ডোজ ৭ ব্যবহার হচ্ছে। দেশের বাজার বিশ্লেষণেও দেখা যায়, নতুন ডিভাইস কেনার প্রবণতা তুলনামূলকভাবে কম, যার ফলে পুরোনো ডিভাইসগুলোতে এখনও উইন্ডোজ ১০ ব্যবহারের হার বেশি।

পুরোনো হার্ডওয়্যার বা বিভিন্ন প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে অনেকের পক্ষেই উইন্ডোজ ১১-এ আপগ্রেড করা সম্ভব নয়। এদের জন্য মাইক্রোসফট নির্ধারিত ফি-এর বিনিময়ে ২০২৮ সাল পর্যন্ত এক্সটেন্ডেড সিকিউরিটি আপডেটস প্রদান করবে। বড় প্রতিষ্ঠানগুলো এই সুবিধা নিতে পারলেও সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য এটি ব্যয়বহুল হতে পারে।

উল্লেখযোগ্য যে, উইন্ডোজ ৭-এর বর্ধিত সাপোর্টের সময় প্রতি পিসির জন্য খরচ শুরু হয়েছিল ২৫ ডলার থেকে, যা তৃতীয় এবং শেষ বছরে গিয়ে ১০০ ডলার পর্যন্ত পৌঁছায়। যদি মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ১০-এর জন্য একই মূল্যনীতি অনুসরণ করে, তবে একটি নতুন পিসি কিনে উইন্ডোজ ১১-এ আপগ্রেড করাই হবে তুলনামূলকভাবে ব্যয়-সাশ্রয়ী।

দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হিসেবে উইন্ডোজ ১০-এর এলটিএসসি(লং-টার্ম সার্ভিসিং চ্যানেল) সংস্করণ ব্যবহার উপযোগী হতে পারে, যা ১০ বছর পর্যন্ত সাপোর্ট দেয় (৫ বছর বেসিক সাপোর্ট এবং ৫ বছর এক্সটেন্ডেড সাপোর্ট)।

উইন্ডোজ ১০ এন্টারপ্রাইজ এলটিএসসি ২০১৯-এর সাপোর্ট ২০২৯ সালের ৯ জানুয়ারি, এলটিএসসি ২০২১-এর সাপোর্ট ২০২৭ সালের ১২ জানুয়ারি (এক্সটেন্ডেড সাপোর্ট নেই) এবং আইওটি (ইন্টারনেট অব থিংস) এলটিএসসি ২০২১-এর সাপোর্ট ২০৩২ সালের ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত থাকবে। এলটিএসসি সংস্করণ ব্লোটওয়্যার-মুক্ত এবং কম রিসোর্সে কার্যকর, তবে এটি ব্যক্তিগত ব্যবহারকারীদের জন্য কিছুটা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।

পুরোনো হার্ডওয়্যারের জন্য লিনাক্স একটি কার্যকর সমাধান। লিনাক্স ডিস্ট্রো (ডিস্ট্রিবিউশন) পুরোনো পিসিতে ভালো পারফরম্যান্স দেয় এবং বিনামূল্যে নিরাপত্তা আপডেট সরবরাহ করে। এটি ওপেন সোর্স, ফলে ব্যবহারকারীরা প্রয়োজন অনুযায়ী এটি কাস্টমাইজ করতে পারেন।

জনপ্রিয় লিনাক্স ডিস্ট্রোর মধ্যে রয়েছে:
উবুন্টু, লিনাক্স মিন্ট, ফেডোরা, ডেবিয়ান, আর্চ লিনাক্স, জরিন ওএস, এলিমেন্টারি ওএস ও কালি লিনাক্স। এসব ডিস্ট্রো ব্যক্তিগত, পেশাদার, সাইবার সিকিউরিটি এবং গেমিং সহ নানা ক্ষেত্রে ব্যবহারযোগ্য।

ছাত্রছাত্রীদের ওপেন সোর্স প্রকল্প ও সাইবার সিকিউরিটিতে অভ্যস্ত করার জন্য লিনাক্স বেশ কার্যকর। ছোট ব্যবসার জন্য এটি বাজেটবান্ধব, কারণ এতে সফটওয়্যার লাইসেন্সের খরচ নেই।

উল্লেখযোগ্য সফটওয়্যার সমূহ:

  • অফিস কাজের জন্য: লিব্রেঅফিস, ফায়ারফক্স, থান্ডারবার্ড
  • গেমিংয়ের জন্য: পপ ওএস, গারুডা লিনাক্স (উন্নত গেমিং পারফরম্যান্স ও হার্ডওয়্যার সাপোর্ট সহ)
  • গেম রান করার জন্য: স্টিম, লুট্রিস, রেট্রোআর্চ, ওয়াইন, প্লে অন লিনাক্স
  • মাল্টিমিডিয়া প্রোডাকশনের জন্য: উবুন্টু স্টুডিও, এভি লিনাক্স (প্রি-ইনস্টলড ব্লেন্ডার, গিম্প, আরডর ইত্যাদি)

তবে নতুনদের ক্ষেত্রে লিনাক্স শেখার প্রয়োজন হতে পারে এবং কিছু সফটওয়্যার উইন্ডোজের মতো সাপোর্ট নাও করতে পারে।

ক্লাউড-ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম: ভবিষ্যতের পথ
পুরোনো কম্পিউটারে ক্লাউড-ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেমও কার্যকর হতে পারে। এই প্রযুক্তিতে ডেটা, সফটওয়্যার ও কম্পিউটিং রিসোর্স সরাসরি ক্লাউড সার্ভার থেকে ব্যবহৃত হয়, যার ফলে কম রিসোর্সেও কার্যকরভাবে কাজ করা সম্ভব হয়।

সুবিধাসমূহ:

  • রিমোট অ্যাক্সেস
  • স্বয়ংক্রিয় আপডেট
  • রিয়েল-টাইম ডেটা সিঙ্ক
  • ক্লাউড এআই দ্বারা কনটেন্ট তৈরি, ইনসাইট ও অ্যানালিটিক্স
  • প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা ও ব্যক্তিগত ব্যবহারের ক্ষেত্রে ক্লাউড ওএস সহজ, সাশ্রয়ী এবং রক্ষণাবেক্ষণে সুবিধাজনক।

প্রচলিত ক্লাউড ওএস টুল:

  • গুগল ওয়ার্কস্পেস
  • মাইক্রোসফট ৩৬৫
  • গুগল ক্লাসরুম
  • মাইক্রোসফট টিমস

ব্যক্তিগত ব্যবহারে: গুগল ড্রাইভ, আইক্লাউড ইত্যাদি স্বয়ংক্রিয় ব্যাকআপ ও বহুমুখী অ্যাক্সেসের সুযোগ দেয়। তবে এর সঙ্গে গোপনীয়তা ও নিরাপত্তার কিছু ঝুঁকি রয়েছে—যেমন: তৃতীয় পক্ষের অ্যাক্সেস, ডেটা লস ও সাইবার আক্রমণ।

শক্তিশালী এনক্রিপশন, জিরো ট্রাস্ট আর্কিটেকচার ও AI-ভিত্তিক সুরক্ষা ব্যবস্থা।

প্রচলিত ক্লাউড ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম:

  • ক্রোম ওএস
  • উইন্ডোজ ৩৬৫
  • লিনাক্স থিন ক্লায়েন্ট ওএস

তবে এই সিস্টেমগুলো উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগের উপর নির্ভরশীল।

উইন্ডোজ ১০ চলবে, কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণভাবে
মূলধারার সাপোর্ট বন্ধ হলেও উইন্ডোজ ১০ চালানো যাবে, তবে উন্নত অ্যান্টিভাইরাস ও ফায়ারওয়াল ব্যবহার বাধ্যতামূলক। তা সত্ত্বেও সিস্টেমের দুর্বলতা থেকে সম্পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।

গুরুত্বপূর্ণ ডেটা ক্লাউড বা বাহ্যিক স্টোরেজে ব্যাকআপ রাখা উচিত। হার্ডওয়্যার সমস্যা বা সাইবার আক্রমণের সময় এটি ডেটা রক্ষায় সহায়ক হবে।

আনঅফিসিয়াল উপায়ে পুরোনো হার্ডওয়্যারে উইন্ডোজ ১১ ইনস্টল করাও সম্ভব, তবে তা ঝুঁকিপূর্ণ।

বর্তমানে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মাঝারি মানের প্রতিষ্ঠান এখনও উইন্ডোজ ১০ ব্যবহার করছে, তবে সাপোর্ট বন্ধ হওয়ার বিষয়ে অনেকেরই কোনো ধারণা নেই।

কম্পিউটার বিক্রেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সস্তা দামে কার্যক্ষম পিসি খুঁজে ক্রেতারা বেশি আগ্রহী। ফলে ৪র্থ ও ৬ষ্ঠ জেনারেশনের পিসি এখনো বাজারে জনপ্রিয়।

ব্যক্তিগত ব্যবহারকারীদের অনেকে মনে করেন, আপডেট বন্ধ হলেও সমস্যা নেই; প্রয়োজনে নতুন করে উইন্ডোজ ইনস্টল দিয়ে সমাধান করেন।

আজও বহু স্থানে উইন্ডোজ ৭, অফিস ২০০৩ ও ২০০৭-এর মতো পুরোনো সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়, যদিও ফ্রি ও আপডেটেড সফটওয়্যারের অনেক বিকল্প রয়েছে। অনেকে আবার নিরাপত্তার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও ক্র্যাক ভার্সন ব্যবহার করেন।

এ ছাড়া, বিভিন্ন ওয়েবসাইট (যেমন- গিভঅ্যাওয়ে অফ দ্য ডে) প্রায়ই পেইড সফটওয়্যারের ফ্রি সংস্করণ প্রদান করে, যা ব্যবহারকারীদের জন্য একটি ভালো সুযোগ। 

সফটওয়্যার আপডেটের মাধ্যমে নিয়মিত নিরাপত্তার দুর্বলতা দূর করা হয়। আপডেট বন্ধ থাকলে হ্যাকাররা সহজেই এসব দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে সিস্টেমে আক্রমণ চালাতে পারে।

উইন্ডোজ ১০-এর সাপোর্ট বন্ধ হওয়ার আগেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিগত ব্যবহারকারীদের এখনই ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা করা উচিত, পুরোনো কম্পিউটার আপডেট করবেন নাকি বিকল্প কোনো সমাধান খুঁজবেন। 



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews