বিক্রেতারা বলছেন, এবার অল্প বয়সীরা টপস, মধ্য বয়সীরা থ্রি পিস আর বেশি বয়সী নারীরা শাড়ি কিনছেন। তবে সব বয়সীরাই প্রাধান্য দিচ্ছেন আরামকে।

অন্য বছরের তুলনায় এবার যেন গরম একটু আগেই চলে এসেছে, রোজার ঈদও বছরের অন্যতম উষ্ণ মাস এপ্রিলের শুরুতে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ঈদ কেনাকাটায় গরমের বিষয়টি মাথায় রেখে আরামদায়ক পোশাক নির্বাচন করছেন নারীরা, বিক্রেতারাও আবহাওয়ার কথা বিবেচনা করে পোশাক নিয়ে আসার কথা বলেছেন।

রাজধানীর জনপ্রিয় বিপণিবিতান বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স, ধানমণ্ডির শপিং মল রাপা প্লাজা, শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেট ও মিরপুরের বিভিন্ন বিপণিবিতান ঘুরে দেখা গেল, তীব্র গরমে স্বস্তি পেতে হালকা কাজের সুতির পোশাক খুঁজছেন ক্রেতারা।

বিক্রেতারা বলছেন, এবার অল্প বয়সীরা টপস, মধ্য বয়সীরা থ্রি পিস আর বেশি বয়সী নারীরা শাড়ি কিনছেন। তবে সব বয়সীরাই প্রাধান্য দিচ্ছেন আরামকে।

ধানমন্ডির রাপা প্লাজার শাড়ির দোকান নীলআঁচল থেকে উপহারের শাড়ি কিনছিলেন সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ সনিয়া আক্তার।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, তার বয়স্ক আত্মীয়দের উপহার দেওয়ার জন্য সুতি শাড়ি কিনছেন তিনি।

“গরম বেশি তো, এ কারণে কাতান বা অন্য শাড়ি নিইনি। উনারা সুতি কাপড়ে আরাম পাবেন। আর নিজের জন্য বুটিক্সের থ্রি পিস কিনব। ঈদে ডিউটি থাকবে, ক্যারি করতে সুবিধা হবে। এগুলো অনেক আরামদায়ক হয় গরমের মধ্যে।”

দোকানটিতে শাড়ির পাশাপাশি থ্রি পিসও বিক্রি হয়। বিক্রেতা সুরুজ আলম বলেন, দোকানে খুব কম ক্রেতা আসছে; তবে যারা আসছেন, তারা শাড়ি, থ্রি পিস দুটো মিলিয়েই কেনা-কাটা করছেন।

“এবার মেয়েরা থ্রি পিস কিনতেছে, দেশি আর পাকিস্তানি থ্রি পিস এবার বেশি চলতেছে। আর বয়স্কদের মধ্যে শাড়ি কেনার আগ্রহ বেশি। সবাই গরমটা মাথায় রেখে কাপড় কিনতেছে।”

‘ম্যাচিং ফেয়ারে’ বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন নকশার থ্রি পিস আর গজ কাপড়। দোকানটিতে মধ্যবয়সী নারীদের থ্রি পিস কেনার জন্য ভিড় করতে দেখা গেল।

দোকানে পোশাক কিনতে আসা মাহমুদা আক্তার বলেন, “খুঁজে খুঁজে হালকা কাজের মধ্যে পাকিস্তানি থ্রি পিস কিনতেছি। কাপড়টা সফট, দেখতেও সুন্দর। অতিরিস্তি গর্জিয়াসও না, আবার সিম্পলও না। একটু বেশি সময় যাতে পরে থাকতে পারি সেজন্যই এমনটা কেনা।”

ক্রেতাদের মধ্যে এবার পাকিস্তানি ও দেশি থ্রি পিসের চাহিদা বেশি থাকার কথা বললেন দোকানটির বিক্রেতা মো. ইমন।

তিনি বলেন, “এখন গজ কাপড় কেউ কিনছে না, থ্রি পিসই নিচ্ছে সবাই। যাদের বয়স কম তারা পাকিস্তানি আর বয়স যাদের একটু দেশি তারা কটনের মধ্যে থ্রি পিস কিনতেছে। আমরাও গরমে পরতে কষ্ট হবে না এমন পোশাক নিয়ে আসছি।”

ঈদের জন্য মিরপুর ১ নম্বরের আঙ্গিনা মেগামলে ওয়ান পিস, থ্রি পিস আনা হয়েছে।

আঙ্গিনার একজন স্বত্বাধিকারী মিন্টু সরকার বলেন, “আমরা সবসময় আরামদায়ক পোশাক নিয়ে আসার চেষ্টা করি, এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। যে গরম… না হলেও তো উৎসবটা উপভোগ করতে পারবে না, স্বাচ্ছন্দ বোধ করেব না।”

ঈদ উপলক্ষে ‘এমব্রেলা’ নারীদের জন্য নিয়ে এসেছে বিভিন্ন ডিজাইনের টিউনিক, টপস, টু পিস, থ্রি পিস, গাউন, শাড়ি।

এমব্রেলার বসুন্ধরা শাখার বিক্রয়কর্মী রোজা রহমান রোকসানা বলেন, “আরামদায়ক হবে এমন বিবেচনা করেই পোশাকগুলো আনা হয়েছে।”

বসুন্ধরা শপিং মল থেকে নিজের ও আত্মীয়দের জন্য পাকিস্তানি থ্রি পিস কিনেছেন মেহনাজ সুলতানা।

তিনি বলেন, “এটা পরলে গরম লাগবে না, তবে সুন্দর আছে। কাপড় কোয়ালিটি ভালো, বহরেও অনেক বেশি থাকে। কালারও ভালো, সব মিলিয়ে বানাতে সুবিধা। এসব কারণে কেনা আরকি। ঈদ যেহেতু. একটু গর্জিয়াসই পরতে ইচ্ছা হয়, ট্রেন্ডিও।”

মসধ্যবয়সী নারীরা পাকিস্তানি থ্রি পিস ও কটনের মধ্যে ভারি কাজের থ্রি পিস কিনছে বলে জানান মহাখালীর এসকেএস শপিং মলের ইনসাফ ফ্যাশন ওয়ার্ল্ড এর ব্যবস্থাপক মো. আবু ইউসুফ বলেন।

তিনি বলেন, “সবাই আরামের পোশাকই খুঁজেতেছে। আর পাকিস্তানি প্রডাক্ট অ্যাভেইলেবল হওয়ার পর এগুলাই সবাই কিনছে।”

জেন্টল পার্ক মেয়েদের জন্য নিয়ে এসেছে টপস, টু পিস ও থ্রি পিস। তাদের বসুন্ধরা শাখার সিনিয়র এক্সিকিউটিভ উজ্জ্বল কুমার সেন বলেন, “শীত যেতে যেতেই রমজান চলে এসেছে; গরমও আগে চলে এসেছে। এজন্য প্রডাক্টের ভ্যারিয়েশন গরমকে মাথায় রেখে করা হয়েছে।“

তরুণীদের পছন্দ ওয়ান পিস, বয়স্করা কিনছেন শাড়ি

নিজেদের কেনাকাটা সেরে নিতে ধানমন্ডি থেকে আজিজ সুপার মার্কেটে এসেছেন দুই বান্ধবী সুমাইয়া রহমান ও তানিশা আক্তার।

তারা বলছিলেন, বিপণিবিতানগুলো ঘুরে কটনের ওয়ান পিস কেনার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।

তানিশা আক্তার বলেন, “পাঞ্জাবি, টপস এগুলা সবসময় পরা যায়, পড়তেও আরাম। এ কারণেই এ ধরনের পোশাক পছন্দের।”

মহাখালীর এসকেএস শপিং মলের ইনসাফ ফ্যাশন ওয়াল্ড এর ব্যবস্থাপক মো. আবু ইউসুফ বলেন, “টিনএজাররা টপস টাইপের ড্রেস বেশি কিনছে। আর একুট বয়স্ক যারা তারা ঈদে কম কাজের মধ্যে শাড়ি পরতে চাইছে। তারা থ্রি পিস কিনলেও, হালকা কাজের খোঁজে।”

দেশি পোশাকের শীর্ষ ১০টি ব্র্যান্ড অঞ্জনস, কে ক্র্যাফট, বাংলার মেলা, রঙ বাংলাদেশ, সাদাকালো, বিবিয়ানা, নিপুণ, দেশাল, প্রবর্তনা ও সৃষ্টি ব্র্যান্ড সম্মিলিতভাবে ‘দেশি দশ’ নামে বিপণিবিতান খুলে পণ্যের বিপণন করে। এবার কামিজ, কুর্তি, কাফতান, ফ্রক, টপস, শাড়ির সংগ্রহ রয়েছে সেখানে।

বসুন্ধরা শপিং মলের দেশি দশ থেকে নিজের জন্য টপস কিনেছেন আফরা শেহরিন। তিনি বলেন, “এ ধরনের পোশাক আমার পছন্দের। আবার সবসময় পরাও যায়, কাজও করা যায়- সব মিলিয়ে খুবই আরামের।”

মিরপুরের বেনারশি পল্লীর নিউ তাঁত ঘর থেকে ঈদে পরার জন্য কাতান শাড়ি কিনেছেন পঞ্চাশোর্ধ শাহানা আক্তার।

তিনি বলেন, “আমার বয়সের সঙ্গে যায় তো, এ কারণে কেনা। আর ঈদের দিন তো অনেক কাজ থাকে, এমনিতেও বেশিক্ষণ পরা হবে না। কোথাও গেলে পরা যাবে।”

আজিজ সুপার মার্কেটে নিজের জন্য কেনাকাটা করতে এসে সাদিয়া রহমান জেরিন বললেন, স্বস্তিকে প্রাধান্য দিয়ে এবার তিনি ‘রুচিসম্মত’ পোশাক কিনবেন।

“গরমে যে পোশাক পরা যাবে না সেই পোশাক কেনা মানে টাকা জলে ফেলা। পার্টি ড্রেস বা একটু ভারী কাজের কাপড় পরলে আধা ঘণ্টা যেতে না যেতেই অস্থির লাগে, কখনো কখনো গায়ে র‌্যাশ ওঠে। এসব কারণে দেশি বুটিক্সের ওয়ান পিস কিনব ভাবছি।”



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews