বাংলাদেশের ক্রিকেটে একটি নতুন যুগের সূচনা করেছিলেন ‘পঞ্চপাণ্ডব’ (মাশরাফি-মুশফিক-তামিম-সাকিব-মাহমুদুল্লাহ)। পরাজয়ের বৃত্তে ঘুরপাক খেতে থাকা একটা দলকে বিজয়ের পথ দেখিয়েছিলেন তারা। তাদের ধারাবাহিক পারফরম্যান্সে ছোট দলের তকমা বাদ দিয়ে বড় দল হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশ। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের বিদায়ে পঞ্চপাণ্ডবের যুগটা এখন কালের গর্ভে ঠাঁই নিয়েছে। বুধবার রাতে সংক্ষিপ্ত বার্তায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানান তিনি।
আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ব্যর্থতার পর ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম। আগেই টেস্ট ও আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। এবার ওয়ানডে থেকেও বিদায় নিলেন। পঞ্চপা-বের মধ্যে মুশফিক এখনো টেস্ট ক্রিকেট খেলে যাবেন। মাহমুদুল্লাহর অবসর ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় এক বিবৃতিতে বিসিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) বাংলাদেশ দলে অসাধারণ অবদানের জন্য মাহমুদুল্লাহকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছে। বুধবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা করা এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার ১৮ বছরের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের সমাপ্তি টেনেছেন।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘বিভিন্ন ফরম্যাটে সব মিলিয়ে মাহমুদুল্লাহ ৪৩০টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন, যেখানে করেছেন ১১,০৪৭ রান এবং উইকেট নিয়েছেন ১৬৬টি। আইসিসি ইভেন্টে বাংলাদেশি খেলোয়াড় হিসেবে সর্বাধিক সেঞ্চুরি (৪) করার গৌরব তার রয়েছে এবং ওয়ানডেতে বাংলাদেশের চতুর্থ সর্বোচ্চ এবং টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি। তিনি ছয়টি টেস্ট ম্যাচ এবং ৪৩টি টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিকে জাতীয় দলের নেতৃত্ব দেওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন।’
মাহমুদুল্লাহর অবদানের প্রশংসা করে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ বলেন, ‘এটি বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত সবার জন্য একটি হৃদয়বিদারক মুহূর্ত, কারণ মাহমুদুল্লাহ প্রায় দুই দশক ধরে জাতীয় দলের শক্তির স্তম্ভ হয়ে আছেন। চাপের মধ্যেও তার ধারাবাহিকতা এবং সাফল্য তাকে অমূল্য সম্পদে পরিণত করেছে। তার নিষ্ঠা এবং পারফরম্যান্স ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি মানদন্ড স্থাপন করেছে এবং তাদের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।’
সত্যিই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবেন মাহমুদুল্লাহ। ২০১৫ সালে অ্যাডিলেডে ১০৩ রানের ইনিংস খেলে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের নায়ক হয়ে উঠেছিলেন তিনি। সেবার বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলে মাইলফলক স্থাপন করে বাংলাদেশ। একই বিশ্বকাপে হ্যামিল্টনে ১২৮ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে দলকে দেখিয়েছিলেন জয়ের স্বপ্ন। ২০১৭ সালে কার্ডিফে ১০২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে পরাজিত করেন নিউজিল্যান্ডকে। এমন আরও কত স্মরণীয় ইনিংস খেলেছেন মাহমুদুল্লাহ। বল হাতেও আলো ছড়িয়েছেন। দলের স্তম্ভ হয়েছিলেন প্রায় দুই দশক। তার বিদায়ে শেষ হয়ে গেল একটি যুগ। এবার নতুনদের নতুন যুগের সূচনা করার পালা।