'আনন্দ শোভাযাত্রা'য় মোটিফ বানানো শিল্পীর বাড়িতে আগুন নিয়ে সর্বশেষ যা জানা যাচ্ছে

ছবির উৎস, Motiur Rahman

ছবির ক্যাপশান,

আগুনে পুড়ে যাওয়া বাড়িটি বুধবার সকালে যেমন দেখা গেছে

২১ মিনিট আগে

এবারের পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ আয়োজিত 'বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা'র আলোচিত মোটিফ 'ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি' বানানোয় জড়িত ছিলেন সন্দেহে এক শিল্পীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠেছে। মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার গড়পাড়া বাজার এলাকায় ভাস্কর মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে মধ্যরাতে একদল মানুষ আগুন দিয়েছে বলে জানান তিনি।

এতে করে তার প্রায় ৩০টিরও বেশি শিল্পকর্ম পুড়ে গেছে বা নষ্ট হয়ে গেছে।

মানবেন্দ্র ঘোষ বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, গতকাল মঙ্গলবার রাত আনুমানিক তিনটার দিকে এই ঘটনা ঘটেছে। আগুনে তাদের একটি ঘর পুড়ে গেছে যেটি ছিল মূলত তার শিল্পকর্মের ঘর।

তিনি জানান, পহেলা বৈশাখের আগের দিন থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন পেজ ও প্রোফাইল থেকে তিনি হুমকি পেয়ে আসছিলেন। ক্রমশ তা আরও বাড়তে থাকলে তিনি গতকাল রাতেই "শুভাকাঙ্ক্ষীদের পরামর্শে" থানায় গিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

কিন্তু জিডি করে বাড়ি ফেরার কয়েক ঘণ্টার মাথায়ই ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

মি. মানবেন্দ্র বলছেন, আনন্দ শোভাযাত্রায় 'ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি'সহ বিভিন্ন ভাস্কর্য তৈরির অভিযোগে তাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওইসব হুমকি দেওয়া হয়।

"কিন্তু আমি বানিয়েছি বাঘের মোটিফ। 'ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি' আমি বানাইনি। আগেরটাও না, পরেরটাও না। আমি বাঘের দায়িত্বে ছিলাম," বলেন তিনি।

হুমকি-ধমকির মুখে তাড়াহুড়ো করে তিনি বাঘের মোটিফও সুনিপুণভাবে বানাতে পারেননি বলে দাবি করেন।

এদিকে মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার মোছা. ইয়াসমিন খাতুন বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, তারা 'সাসপেক্ট' পেয়েছেন এবং 'জিজ্ঞাসাবাদ চলছে'।

পহেলা বৈশাখের মোটিফ নির্মাণকারী শিল্পীর বাড়িতে আগুন

ছবির উৎস, MANABENDRA GHOSH/FACEBOOK

ছবির ক্যাপশান,

পহেলা বৈশাখের মোটিফ নির্মাণকারী শিল্পীর বাড়িতে আগুন, তদন্ত করছে বলে জানিয়েছেন প্রশাসন

মূল্যবান শিল্পকর্ম পুড়ে গেছে

মানবেন্দ্র ঘোষ জানান, করোনা মহামারির সময় থেকে, অর্থাৎ গত পাঁচ বছর ধরে ঢাকার স্টুডিও ছেড়ে তিনি মানিকগঞ্জে নিজের এই বাড়িতেই থাকেন।

পুড়ে যাওয়া ওই টিনশেড পাকা ঘরটিকেই তিনি তার স্টুডিও হিসেবে ব্যবহার করতেন।

আর সপরিবারে বসবাস করতেন পাশের আরেকটি ভবনে। তাদের বাড়িতে গবাদিপশুও আছে।

"গরু দেখাশুনার জন্য একজন কর্মচারী থাকেন। উনি প্রথমে টের পান, কারণ আগুনের তাপে গরুগুলো ছটফট করছিলো," বর্ণনা করেন তিনি।

মি মানবেন্দ্র জানান, "আগুনে ঘরটা তো গেছেই, সাথে অনেক মূল্যবান তৈজসপত্র ও স্মৃতিও গেছে।"

বিবিসিকে তিনি বলেন, তার আনুমানিক ৩০টিরও বেশি শিল্পকর্ম আগুনে পুড়ে গেছে।

এদিকে এই ঘটনায় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, শিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে যারা হামলা করেছে তাদের প্রত্যেককে ধরার জন্য পুলিশ কাজ শুরু করেছে।

তিনি লিখেছেন, "গত কয়েকদিন জুলাইয়ে বিতাড়িত আওয়ামী লীগ অনলাইনে শিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষকে আক্রমণের উসকানি দিচ্ছিলো তাদের ভাষ্যে 'হাসিনার এফিজি বানানোর অপরাধে'! এদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে।"

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, এরইমধ্যে এ ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার ইয়াছমিন খাতুনের বরাত দিয়ে ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ইতিমধ্যেই পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তদন্ত কাজ চলমান রয়েছে। কারও জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে দ্রুততম সময়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

একই বিবৃতিতে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক মানোয়ার হোসেন মোল্লার বরাত দিয়ে জানানো হয়, তদন্তের মাধ্যমে আগুনের নেপথ্যে সঠিক কারণ নিরূপণের পাশাপাশি পুড়ে যাওয়া বাড়িটি মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পুনর্নির্মাণ করা হবে।

মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার মোছা. ইয়াসমিন খাতুন বুধবার বিকেলে বিবিসি বাংলাকে বলেন, তারা আজই 'সাসপেক্ট' পেয়েছেন এবং এই মুহূর্তে সন্দেহভাজনের 'জিজ্ঞাসাবাদ চলছে'।

তদন্তের স্বার্থে এখনই সন্দেহভাজনের নাম প্রকাশ করা সম্ভব নয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে শিগগিরই মামলা করা হবে।

এদিকে এই বিষয়ে জানতে আজ সকাল থেকে মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমান উল্লাহকে কয়েকবার কল দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

'ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি' মোটিফ আগুনে পুড়ে ছাই

ছবির উৎস, Tahmid Shakib

ছবির ক্যাপশান,

'আনন্দ শোভাযাত্রা' উপলক্ষ্যে বানানো প্রথম 'ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি' মোটিফ আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিলো

ওই মোটিফ নিয়ে আগেও যা হয়েছিলো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বাংলা 'বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা'য় শুরুতে থাকা ওই 'ফ্যাসিবাদের প্রতিকৃতি' মোটিফ নিয়ে আগেও বিতর্ক তৈরি হয়েছিলো।

পহেলা বৈশাখের আগেরদিন, গত শনিবার ভোররাতে এই মোটিফটিসহ দুটি মোটিফে আগুন ধরিয়ে দেয় এক ব্যক্তি। এতে এ দুটি পুড়ে নষ্ট হয়ে যায়। পরে দুই দিনের মধ্যে আরেকটি মোটিফ তৈরি করা হয় যা শোভাযাত্রার সামনের সারিতে ছিল।

বাঁশ ও বেত দিয়ে তৈরি প্রথম 'ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি' মোটিফটির উচ্চতা ছিল ২০ ফুট।

পুড়ে যাওয়া মোটিফে একজন হাঁ করা দাঁত বের হয়ে থাকা দৈত্যাকৃতির নারীর মুখাকৃতি ফুটিয়ে তোলা হয়েছিলো, যার মাথায় ছিল চারটি শিং, নাক ছিল বিশালাকার এবং চোখ দু'টো ছিল ভয়ানক।

পরে যে মোটিফটি বানানো হয় তার উচ্চতা ছিল ১৬ ফুটের মতো।

এই মোটিফটি মূলত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি হিসেবে বানানো হয়েছিলো বলে অনেকে মনে করেন। এ নিয়ে গত কিছুদিন ধরে সামাজিক মাধ্যমে আলোচনাও চলছিল।

জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনাকে সামনে রেখে এবারের নবর্ষের প্রতিপাদ্য ছিলো 'নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান'। এটিকে সামনে রেখেই ওই মোটিফ বানানো হয়েছিলো বলে চারুকলা অনুষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

উল্লেখ্য, বাংলা বর্ষবরণের অন্যতম আয়োজন 'মঙ্গল শোভাযাত্রা' নামটি পরিবর্তন করে এবার 'বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা' করা হয়।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews