ডার্ক ম্যাটার মহাবিশ্বের অন্যতম রহস্যময় উপাদান, যা বিজ্ঞানের জন্য এখনও এক বিশাল ধাঁধা হয়ে আছে। এটি মোট পদার্থের প্রায় ৮৫ শতাংশ গঠন করলেও সরাসরি কোনো আলো শোষণ বা প্রতিফলন করে না। শুধুমাত্র মহাকর্ষের মাধ্যমে এর অস্তিত্ব অনুভূত হয়। বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে এর প্রকৃতি বোঝার চেষ্টা করছেন, কিন্তু এখন পর্যন্ত স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি একটি গবেষণায় মিল্কিওয়ের সেন্ট্রাল মলিকুলার জোন নামে পরিচিত গ্যালাক্সির কেন্দ্রীয় অঞ্চলে ডার্ক ম্যাটারের নতুন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। বিজ্ঞানীদের মতে, এই অঞ্চলে অদ্ভুত কিছু রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটছে, যা প্রচলিত ব্যাখ্যার বাইরে। গবেষণাটি Physical Review Letters সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।
কিংস কলেজ লন্ডনের পোস্টডক্টরাল গবেষক ড. শ্যাম বালাজি এই গবেষণার অন্যতম প্রধান লেখক। তিনি জানান, গ্যালাক্সির কেন্দ্রে বিপুল পরিমাণ ধনাত্মক চার্জযুক্ত হাইড্রোজেন গ্যাসের অস্তিত্ব রয়েছে। সাধারণত হাইড্রোজেন নিরপেক্ষ থাকে, তাই এটি বিজ্ঞানীদের জন্য দীর্ঘদিন ধরে এক রহস্য হয়ে ছিল। প্রশ্ন হচ্ছে, কীভাবে এই গ্যাসের ঋণাত্মক ইলেকট্রনগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে?
বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই অঞ্চলে কোনো স্থায়ী শক্তির উৎস রয়েছে, যা গ্যাসের ওপর প্রভাব ফেলছে। গবেষণা অনুযায়ী, প্রচলিত তত্ত্বের চেয়ে অনেক হালকা ডার্ক ম্যাটারের অস্তিত্বই এর পেছনের কারণ হতে পারে।
সাধারণভাবে, ডার্ক ম্যাটারকে Weakly Interacting Massive Particles (WIMPs) নামে পরিচিত কণার সমষ্টি হিসেবে ধরা হয়। এই কণাগুলো সাধারণ পদার্থের সঙ্গে খুব কমই ক্রিয়া করে, তাই এগুলো শনাক্ত করা অত্যন্ত কঠিন। তবে নতুন গবেষণাটি একটি ভিন্ন তত্ত্বের দিকে ইঙ্গিত করছে, যেখানে তুলনামূলকভাবে হালকা ডার্ক ম্যাটার কণা নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষের মাধ্যমে নতুন চার্জযুক্ত কণা তৈরি করছে। এই নতুন কণাগুলো হাইড্রোজেন গ্যাসকে আয়নিত করতে পারে।
এই গবেষণা ডার্ক ম্যাটারের প্রকৃতি সম্পর্কে নতুন ধারণা দিতে পারে এবং ভবিষ্যতে এর অস্তিত্ব প্রমাণের জন্য বিজ্ঞানীদের নতুন পথ দেখাতে পারে। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, আরও উন্নত পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার মাধ্যমে মহাবিশ্বের এই অজানা শক্তির রহস্য একদিন উন্মোচিত হবে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল