ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে ইট-পাথরের শহর ছেড়ে গ্রামে ছুটছে মানুষ। যত দিন যাচ্ছে সড়ক-মহাসড়ক, নৌ ও রেলপথে মানুষের ভিড় তত বাড়ছে। শহরে পরিবার নিয়ে থাকা চাকরিজীবী-ব্যবসায়ীরা ভোগান্তি এড়াতে আগেভাগেই পরিবারের সদস্যদের বাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছেন। সড়ক, নৌ ও রেলপথের ঈদযাত্রায় বুধবারও ছিল স্বস্তি। তবে গত কয়েকদিনের তুলনায় এদিন রেলওয়ে স্টেশন, লঞ্চঘাট ও বাসটার্মিনাল ঘিরে যাত্রীর চাপ ছিল বেশি। আজ থেকে তা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে পুলিশসহ সংশ্লিষ্টরা মাঠে তৎপর রয়েছে। তারা নির্বিঘ্নে মানুষের চলাচল নিশ্চিত করতে কাজ করছে। দুর্ঘটনা, ছিনতাইসহ অঘটন প্রতিরোধেও আন্তরিক তারা। তাদের প্রত্যাশা-এবার ঈদযাত্রা আনন্দময় হবে।

নৌপথে যাত্রী বেড়েছে : দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোয় যাতায়াতে নৌপথে যাত্রী বেড়েছে। বুধবার ঢাকা নদীবন্দরে (সদরঘাট) যাত্রীচাপ তুলনামূলক বেশি ছিল। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কর্মকর্তা ও লঞ্চ মালিকরা জানান, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে যাত্রী কিছুটা বাড়লেও তা চাপের পর্যায়ে পৌঁছেনি। বিকাল ৫টা পর্যন্ত সদরঘাট থেকে ৩২টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। একই সময়ে ৩৭টি লঞ্চ ঘাটে এসেছে। আরও কিছু লঞ্চ ছাড়ার জন্য অপেক্ষমাণ ছিল। তবে সদরঘাটে পৌঁছাতে যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। হকার ও এলোমেলো যানবাহনের কারণে সড়কে যানজট ছিল। 

এদিন সদরঘাট পরিদর্শন করেন বিআইডব্লিউটিএ-এর নৌনিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি যুগান্তরকে বলেন, নির্বিঘ্ন, নিরাপদ ও আরামদায়ক যাত্রা নিশ্চিত করতে নৌ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী সব বিভাগ কাজ করছে। তিনি বলেন, লঞ্চে ভাড়ার তালিকা উন্মুক্ত স্থানে টানানো হয়েছে। দু-চারটি লঞ্চে ভাড়ার তালিকা ছোট হওয়ায় তা দৃশ্যমান ছিল না, সেগুলো পরিবর্তন করতে বলেছি। বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

ট্রেনে কিছুটা শিডিউল বিপর্যয়, স্ট্যাডিং টিকিট পেতে ভিড় : কমলাপুর স্টেশন থেকে প্রায় সব ট্রেনই সময় মেনে চললেও দু-একটির শিডিউল বিপর্যয় ঘটছে। স্টেশন ম্যানেজার সাহাদাত হোসেন জানান, বুধবার ভোর থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত প্রায় সব ট্রেন সময় অনুযায়ী ছেড়ে গেছে। তবে অনেক যাত্রী স্ট্যাডিং টিকিট কাটতে কাউন্টারের সামনে ভিড় করেন। নিয়ম অনুযায়ী আন্তঃনগর ট্রেন ছাড়ার ২ ঘণ্টা আগে স্ট্যাডিং টিকিট দেওয়ার নিয়ম। এদিকে আজ থেকে চলবে বিশেষ ট্রেন। যাত্রীসেবায় প্রতিবারের মতো এবারও কর্তৃপক্ষের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার এবং ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে টিকিট চেক করা হচ্ছে। এদিন ছিল ঈদ উপলক্ষ্যে ট্রেনযাত্রার তৃতীয় দিন। প্রথম দুই দিনের তুলনায় ট্রেনে যাত্রীর চাপ কিছুটা বেশি ছিল। তবে তেমন কোনো ভোগান্তি দেখা যায়নি। রাত পর্যন্ত ঢাকা ছেড়েছে ৬৯টি ট্রেন। এর মধ্যে আন্তঃনগর ৪৩টি এবং মেইল ও কমিউটার মিলিয়ে ২৬টি ট্রেন। স্টেশনের স্টেশন ব্যবস্থাপক শাহাদাত হোসেন বলেন, শুধু তিতাস কমিউটার ৪৫ মিনিট দেরিতে ছেড়েছে। ট্রেনটি স্টেশনে আসতে দেরি করেছিল, এজন্য ছাড়তে দেরি হয়েছে। 

বাসটার্মিনালগুলোয় মানুষের চাপ বাড়ছে : বুধবার সায়েদাবাদ, গাবতলী ও মহাখালী বাসটার্মিনালে যাত্রীর চাপ বেড়েছে। পরিবহণসংশ্লিষ্টরা জানান, অনলাইনে টিকিট কেনার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় বাস কাউন্টারগুলোয় আগের মতো ভিড় নেই। তবে গার্মেন্ট ছুটি হলে যাত্রীর ভিড় আরও বাড়বে। বুধবার গাবতলী বাসটার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, যাত্রীরা বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন। সায়েদাবাদ বাসটার্মিনালে সকালে যাত্রী কম থাকলেও দুপুরের পর তা বাড়তে শুরু করে। কল্যাণপুরে হানিফ পরিবহণের টিকিট বিক্রেতা মনির হোসেন জানান, গত কয়েকদিন ট্রেনে যাত্রীর চাপ বেশি থাকায় বাসযাত্রী কমেছে। পাশাপাশি অনলাইনে টিকিট কেনার কারণে কাউন্টারে তেমন ভিড় নেই। সিরাজগঞ্জের যাত্রী মনির হোসেন বলেন, আমি আগেই অনলাইনে টিকিট কেটে নিয়েছি, তাই কোনো সমস্যা হয়নি। পছন্দমতো সিটও পেয়েছি, আর বাসের জন্যও বেশি সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। এদিকে বাস ভাড়া সরকার নির্ধারিত হারেই রাখা হয়েছে বলে পরিবহণ কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তবে কিছু লোকাল বাস নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ৩০-৫০ টাকা বেশি নিচ্ছে ‘বকশিশ’ দাবি করে। 

অতিরিক্ত ভাড়া আদায় হতে পারে ৮৩২ কোটি টাকা : গণপরিবহণকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট এবারের ঈদযাত্রায়ও ‘বকশিশ’-এর নামে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় অব্যাহত রেখেছে। সরকারের পক্ষ থেকে মোবাইল কোর্ট মাঠে নামলেও তা বন্ধ হচ্ছে না। যাত্রীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি বুধবার রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করে। সংগঠনটি জানায়, যাত্রীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ৮৩২ কোটি ৩০ লাখ টাকা। শুধু রাজধানী ছাড়তেই দেড় কোটি যাত্রীকে বিশাল অঙ্কের এই টাকা গুনতে হবে। যাত্রী কল্যাণের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, যাত্রীর নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন যাতায়াত নিশ্চিত করার পাশাপাশি অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার নানামুখী তৎপরতার মধ্যেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় চলছেই। 

ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানা : গণপরিবহণে যাত্রীদের ভোগান্তি রোধে বুধবার সায়েদাবাদ, গাবতলী, ফুলবাড়িয়া ও মহাখালী বাসটার্মিনালে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে। এ সময় গাবতলী ও মহাখালী বাসটার্মিনালে প্রতিটি কাউন্টারে ভাড়ার তালিকা পাওয়া যায় এবং যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে সায়েদাবাদ বাসটার্মিনালে রামগতি, লক্ষ্মীপুরগামী নীলাচল পরিবহণে ১০০ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগে ৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া কামারপাড়ায় গাইবান্ধাগামী নিউসাফা পরিবহণে দুই ব্যক্তির কাছ থেকে ১০০ টাকা করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগে ৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। মিরপুর ডি লিংক, নীলাচল পরিবহণে ভাড়ার তালিকা না থাকায় ৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়াও ফুলবাড়িয়া বাসটার্মিনালে অভিযানের সময় দোলা পরিবহণ, গোল্ডেন লাইন ও এমাদ পরিবহণে ভাড়ার তালিকা না থাকায় ৬ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews