বর্তমান ব্যবসা ও আর্থিক খাতে ডাটা সায়েন্স অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ব্যবসার ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে ডাটা সায়েন্সের ব্যবহার কোম্পানিগুলোকে আরও কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ করে দিচ্ছে। ডাটা সায়েন্সের মডেল এবং অ্যালগরিদমের মাধ্যমে ব্যবসায়িক প্রবণতা বিশ্লেষণ, ঝুঁকি নির্ধারণ, এবং বাজারের প্রতিক্রিয়াগুলোর ভিত্তিতে কৌশল প্রণয়ন করা সহজ হয়েছে।
ডাটা সায়েন্স আধুনিক ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে অপরিহার্য এক মাধ্যম হয়ে উঠেছে, বিশেষত পূর্বাভাসমূলক বিশ্লেষণ ব্যবসার প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। পূর্বাভাসমূলক বিশ্লেষণ মূলত ব্যবসায়িক ডাটার ভিত্তিতে ভবিষ্যৎ পরিস্থিতির পূর্বাভাস করে।
এতে গ্রাহকের ক্রিয়াকলাপ, বিক্রয়ের ধারা, বাজারের প্রবণতা এবং প্রতিযোগিতামূলক অবস্থার মতো বিষয়গুলোর বিশদ বিশ্লেষণ থাকে।
ব্যবসার ক্ষেত্রে পূর্বাভাসমূলক বিশ্লেষণ কোম্পানিগুলোকে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। গ্রাহকের চাহিদা, বাজারের অস্থিরতা এবং প্রতিযোগীদের কর্মকাণ্ডের ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। পূর্ববর্তী ডাটার মাধ্যমে কী ধরনের পণ্য বা সেবা ভবিষ্যতে জনপ্রিয় হবে তা অনুমান করা সম্ভব, যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারে এবং অপচয় হ্রাস করতে পারে।
প্রথমে, ব্যবসায়িক ডাটার বিভিন্ন উৎস থেকে ডেটা সংগ্রহ করা হয়। এই ডাটা হতে পারে বিক্রয় রেকর্ড, গ্রাহকদের ক্রয়ের ইতিহাস, পণ্য সম্পর্কে গ্রাহকদের প্রতিক্রিয়া, এবং বাজারে বিদ্যমান প্রবণতা। এরপর, এই ডাটাকে মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদমের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করা হয়। অ্যালগরিদম ডাটার মধ্যকার নিদর্শনগুলো শনাক্ত করে এবং সেই নিদর্শনগুলো ভবিষ্যতের সিদ্ধান্তের জন্য প্রয়োগ করা হয়।
কোনও ই-কমার্স কোম্পানি যা তার পূর্ববর্তী বিক্রয় ডাটা বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতে কী ধরনের পণ্যের চাহিদা বাড়বে তা নির্ধারণ করতে চায়। এটি পূর্বাভাসমূলক বিশ্লেষণের মাধ্যমে সম্ভব হয়। পূর্ববর্তী বিক্রয় ডাটা, গ্রাহকের ব্রাউজিং ইতিহাস এবং কেনাকাটার ধরন বিশ্লেষণ করে কোম্পানি তাদের পণ্য স্টক বাড়ানোর জন্য কৌশল প্রণয়ন করতে পারে। বিশ্বের বৃহত্তম ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম আমাজন (Amazon) পূর্বাভাসমূলক বিশ্লেষণ ব্যবহারে অন্যতম শীর্ষ কোম্পানি। আমাজন তার সুপারিশ সিস্টেমে পূর্ববর্তী ক্রেতাদের কেনাকাটার ধরন বিশ্লেষণ করে। এই বিশ্লেষণের মাধ্যমে, তারা ভবিষ্যতে গ্রাহকরা কোন পণ্য কিনতে পারেন তা অনুমান করে এবং সেই অনুযায়ী পণ্য সাজেশন দেয়। এতে গ্রাহকরা আগ্রহী পণ্য দ্রুত খুঁজে পান এবং প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয় বৃদ্ধি পায়। আমাজনের সুপারিশ ব্যবস্থা তার ডাটা সায়েন্সের মাধ্যমে এতটাই উন্নত যে প্রায় ৩৫ শতাংশ বিক্রয় তাদের সুপারিশ সিস্টেম থেকে আসে।
বাংলাদেশেও ই-কমার্স এবং অনলাইন খাতে পূর্বাভাসমূলক বিশ্লেষণের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, দারাজ এবং রকমারির মতো অনলাইন শপিং প্ল্যাটফর্মগুলো তাদের গ্রাহকদের ক্রয় ইতিহাস বিশ্লেষণ করে কী ধরনের পণ্য গ্রাহকরা ভবিষ্যতে বেশি কিনবেন তা অনুমান করে। এর ফলে তারা বিভিন্ন প্রচারাভিযান পরিচালনা করতে পারে এবং সঠিক পণ্য স্টক করতে পারে। এভাবে তারা গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী সঠিক সময়ে সঠিক পণ্য সরবরাহ করতে সক্ষম হয় এবং বিক্রয়ও বৃদ্ধি পায়। একইভাবে পাঠাও তাদের গ্রাহকের প্রয়োজন অনুযায়ী সেবা দিয়ে চলেছে।
এছাড়াও বিকাশ এবং নগদের মতো মোবাইল আর্থিক পরিষেবাগুলোতে পূর্বাভাসমূলক বিশ্লেষণ ব্যবহার করা হচ্ছে। এরা গ্রাহকদের লেনদেনের ধারা বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতে কোন ধরনের আর্থিক সেবা বা অফার প্রদান করলে গ্রাহকরা সেগুলো বেশি গ্রহণ করবেন তা অনুমান করে। এর ফলে গ্রাহকদের আরও সঠিকভাবে টার্গেট করা সম্ভব হয় এবং নতুন গ্রাহক আকৃষ্ট করার সুযোগ সৃষ্টি হয়।
বাংলাদেশের ব্যবসায়িক খাতে পূর্বাভাসমূলক বিশ্লেষণ একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি ছোট এবং মাঝারি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোও ডাটা সায়েন্স ব্যবহার করে ব্যবসার উন্নয়ন ঘটাতে পারে। উন্নত ডাটা প্রযুক্তি এবং দক্ষতাসম্পন্ন ডাটা বিশ্লেষকদের মাধ্যমে দেশের ব্যবসায়িক খাতে অভূতপূর্ব পরিবর্তন আনা সম্ভব। পূর্বাভাসমূলক বিশ্লেষণ ব্যবসার জন্য একটি অসাধারণ হাতিয়ার হয়ে উঠেছে যা কোম্পানিগুলোকে তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া আরও শক্তিশালী করতে এবং গ্রাহকদের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তাদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। বাংলাদেশে এই প্রযুক্তির বিস্তৃত ব্যবহার ভবিষ্যতে ব্যবসার ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং ক্রেডিট স্কোরিং হলো ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিক, যা প্রতিষ্ঠানের সঠিক আর্থিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। ডাটা সায়েন্সের অগ্রগতির ফলে এই প্রক্রিয়াগুলো আরও উন্নত এবং নির্ভুলভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হয়েছে। ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকের ঋণপ্রদানের আগে ঝুঁকি মূল্যায়ন করতে ডাটা সায়েন্সের বিভিন্ন মডেল ব্যবহার করছে। ক্রেডিট স্কোরিং বিশেষত গ্রাহকের আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা নির্ধারণে ব্যবহৃত হয়। এই প্রক্রিয়াগুলোতে ডাটা সায়েন্স মডেল মেশিন লার্নিং এবং বিগ ডেটার সাহায্যে গ্রাহকের আর্থিক প্রোফাইল বিশ্লেষণ করে ঝুঁকি হ্রাস করে।
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যা প্রতিষ্ঠানের সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলোকে পূর্বাভাস করে এবং সেগুলোর প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নেয়। ব্যবসার ক্ষেত্রে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা সবসময় একটি অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া ছিল, কিন্তু ডাটা সায়েন্সের মাধ্যমে এই কাজটি অনেক সহজ এবং নির্ভুল হয়ে উঠেছে।
ডাটা সায়েন্স মডেলগুলো গ্রাহকের ইতিহাস বিশ্লেষণ করে এবং ঋণগ্রহীতার সম্ভাব্য ঝুঁকি নির্ধারণ করে। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকের ঋণের ইতিহাস, আয়ের স্তর, অতীতের ঋণ পরিশোধের রেকর্ড, এবং অন্যান্য আর্থিক তথ্যের ভিত্তিতে গ্রাহকের ঝুঁকি পরিমাপ করে। এর ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো সম্ভাব্য ক্ষতি থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে পারে এবং ঝুঁকি হ্রাসের পদক্ষেপ নিতে পারে।
ক্রেডিট স্কোরিং হলো একটি বিশেষ মডেল যা গ্রাহকের বিভিন্ন আর্থিক তথ্য ব্যবহার করে তাদের ক্রেডিট স্কোর নির্ধারণ করে। ক্রেডিট স্কোর মূলত একটি সংখ্যা যা গ্রাহকের ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা নির্দেশ করে। মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে ক্রেডিট স্কোরিং প্রক্রিয়া আরও সহজ এবং স্বয়ংক্রিয় হয়ে উঠেছে। মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদমগুলো বড় ডাটাসেট থেকে গ্রাহকের আর্থিক স্থিতি বিশ্লেষণ করে এবং ঝুঁকি পূর্বাভাস করে। এতে প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকের ঝুঁকি মূল্যায়নের ক্ষেত্রে মানবিক ভুল এড়াতে পারে এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে।
মেশিন লার্নিং মডেলগুলো ক্রমাগত নতুন ডাটার ওপর ভিত্তি করে আপডেট হয়, ফলে ক্রেডিট স্কোরিংয়ের নির্ভুলতা বাড়ে। এর ফলে ব্যাংকগুলো ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে এবং ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদমগুলোর মাধ্যমে অতীতের নিদর্শনগুলো বিশ্লেষণ করে এবং নতুন গ্রাহকদের জন্য অনুমান করা যায় যে তারা ভবিষ্যতে কীভাবে ঋণ পরিশোধ করতে সক্ষম হবে।
বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রেডিট স্কোরিং ব্যবস্থা হলো ফিকো (FICO)। ফিকো ডাটা সায়েন্স মডেলের সাহায্যে গ্রাহকের বিভিন্ন আর্থিক তথ্যের ভিত্তিতে একটি স্কোর তৈরি করে, যা ঋণগ্রহীতার ঝুঁকি নির্ধারণে সহায়ক। ফিকো ক্রেডিট স্কোর ৩০০ থেকে ৮৫০ এর মধ্যে হয় এবং এটি বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যবহার করে থাকে।
ফিকো মডেলটি গ্রাহকের ঋণগ্রহণের ইতিহাস, ক্রেডিট কার্ডের লেনদেন, এবং অন্যান্য আর্থিক তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ক্রেডিট স্কোর নির্ধারণ করে। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো ঝুঁকির মাত্রা পূর্বাভাস করতে পারে এবং গ্রাহকদের জন্য নির্ধারিত ঋণ সুবিধা প্রদান করতে পারে।
বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরেও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও ক্রেডিট স্কোরিং ক্রমবর্ধমান হারে ব্যবহৃত হচ্ছে। মোবাইল ফিন্যান্সিং প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন বিকাশ, নগদ, এবং মাইক্রোফিন্যান্স কোম্পানিগুলো ক্রেডিট স্কোরিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহকদের ঋণ প্রদান করে। এই প্ল্যাটফর্মগুলো গ্রাহকের মোবাইল লেনদেনের ইতিহাস এবং অন্যান্য আর্থিক ডাটার উপর ভিত্তি করে গ্রাহকের ঝুঁকি নির্ধারণ করে।
বিকাশ এবং নগদ এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলোতে গ্রাহকের লেনদেনের ধরন, আয়ের স্তর এবং অন্যান্য আর্থিক ডাটা বিশ্লেষণ করা হয়। গ্রাহকের মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেনের ইতিহাসের ভিত্তিতে তার ক্রেডিট স্কোর তৈরি করা হয়। এর মাধ্যমে, প্রতিষ্ঠানগুলো ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে এবং সঠিকভাবে ঋণ প্রদানের সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
সেন্টিমেন্ট বিশ্লেষণ (Sentiment Analysis) আধুনিক ডাটা সায়েন্সের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে অর্থনৈতিক খাত এবং বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনায়। এটি মূলত সোশ্যাল মিডিয়া, সংবাদমাধ্যম, ব্লগ, আর্থিক প্রতিবেদন, এবং অন্যান্য উৎস থেকে প্রাপ্ত মতামতের ওপর ভিত্তি করে বাজারের মেজাজ বা অনুভূতি বিশ্লেষণ করে। একটি দেশের আর্থিক বাজারে বিনিয়োগকারীদের মনোভাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাজারের মেজাজ বা ‘সেন্টিমেন্ট’ যদি ইতিবাচক থাকে, তবে সাধারণত শেয়ারের দাম বাড়তে থাকে, আর যদি নেতিবাচক হয়, তাহলে শেয়ারের মূল্য কমতে পারে।
সেন্টিমেন্ট বিশ্লেষণ সরাসরি শেয়ার বাজারের এবং অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলতে পারে। যখন কোনও পণ্য বা কোম্পানি সম্পর্কে জনমত নেতিবাচক হয়, তখন তার প্রভাব বাজারের দামে পড়ে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ বিনিয়োগকারীরা প্রায়ই জনমতের ওপর ভিত্তি করে তাদের সিদ্ধান্ত নেন। বাজারের মেজাজ যদি নেগেটিভ হয়, তবে বিনিয়োগকারীরা তাদের শেয়ার বিক্রি করে দিতে পারে, যার ফলে শেয়ারের মূল্য হ্রাস পায়।
সেন্টিমেন্ট বিশ্লেষণের প্রধান লক্ষ্য হলো বৃহৎ পরিমাণ ডাটা সংগ্রহ করে বাজারের সাধারণ মানসিকতা বোঝা এবং সেখান থেকে সিদ্ধান্তে আসা। বিশেষত বিগ ডাটা বিশ্লেষণ করতে এবং অপ্রতুল তথ্যকে একত্রিত করে অর্থনৈতিক বাজারের সামগ্রিক প্রবণতা নির্ধারণ করতে সেন্টিমেন্ট অ্যালগরিদম খুবই কার্যকর।
বিশ্বখ্যাত তথ্য প্রযুক্তি এবং ফাইন্যান্স কোম্পানি ব্লুমবার্গ (Bloomberg) সেন্টিমেন্ট বিশ্লেষণ ব্যবহারে একটি শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান। তারা বিভিন্ন অর্থনৈতিক সংবাদ, বাজার প্রতিবেদন, সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট, এবং বিনিয়োগকারীদের প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ করতে সেন্টিমেন্ট অ্যালগরিদম ব্যবহার করে।
ব্লুমবার্গের এই সেন্টিমেন্ট অ্যালগরিদম বাজারের অবস্থা, শেয়ার মূল্য এবং অর্থনৈতিক প্রবণতা সম্পর্কে বিনিয়োগকারীদের তথ্য প্রদান করে, যাতে তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
ব্লুমবার্গের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো এই বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের সাহায্য করে, যাতে তারা বাজারে বিনিয়োগের সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে। বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্যকে একত্রিত করে, তারা বাজারের সামগ্রিক মেজাজ বোঝে এবং সেই অনুযায়ী তাদের পরামর্শ প্রদান করে।
বাংলাদেশেও সেন্টিমেন্ট বিশ্লেষণের ব্যবহার ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশেষ করে ই-কমার্স এবং অনলাইন ব্যবসার ক্ষেত্রে। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো, যেমন দারাজ এবং রকমারি, সোশ্যাল মিডিয়া থেকে প্রাপ্ত গ্রাহকদের মন্তব্য ও পর্যালোচনা বিশ্লেষণ করে তাদের ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে। এদের সেন্টিমেন্ট বিশ্লেষণের মাধ্যমে নতুন পণ্য বাজারজাত করা এবং প্রচারাভিযান পরিচালনা করা সহজ হয়েছে।
গ্রাহকদের থেকে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেলে সেই পণ্যগুলোতে প্রচারাভিযান চালানো হয়, এবং নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেলে পণ্যের মান বা সেবা উন্নত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এভাবে সেন্টিমেন্ট বিশ্লেষণের মাধ্যমে কোম্পানিগুলো তাদের কৌশল তৈরি করে এবং বিক্রয় বৃদ্ধি করে।
সেন্টিমেন্ট বিশ্লেষণ ভবিষ্যতে আরও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হবে। বিগ ডাটার সাথে সাথে মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদমের অগ্রগতি এই প্রক্রিয়াকে আরও উন্নত করবে। এটি ভবিষ্যতে বিনিয়োগকারীদের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সহায়ক হবে এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বাজার প্রবণতা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সেন্টিমেন্ট বিশ্লেষণ অর্থনৈতিক খাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এবং এর প্রভাব প্রতিদিন বাড়ছে।
লেখক: অধ্যাপক, ফলিত পরিসংখ্যান এবং ডাটা সায়েন্স পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
E-mail: [email protected]