আউটার রিং রোড ঘিরে মাছের খামার

ইলিশের পাশে রুই-কাতালের বাস

পশ্চিমে বিশাল বঙ্গোপসাগর। অন্যপাশে সারিবদ্ধ পাঁচটি পুকুর। সমুদ্র আর এসব পুকুরের মাঝে ২০ হাত প্রস্থের ছোট্ট বাঁধ। সামান্য এই বাঁধই আলাদা করে দিল লোনা আর মিঠা পানিকে। এক পাশে সমুদ্রে ইলিশসহ লোনা পানির নানা মাছ। অন্যপাশে চাষ হচ্ছে মিঠা পানির রুই, কাতাল কিংবা তেলাপিয়া। পতেঙ্গা থেকে দক্ষিণ কাট্টলি পর্যন্ত ১৫ দশমিক দুই কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড প্রকল্প। ঘন গাছগাছালি আর বঙ্গোপোসগারকে পৃথক করে এগিয়ে চলা এই সড়কের দু পাশে চোখ মেললে এরকম বেশ কিছু মাছের খামার চোখে পড়বে। সেই রকমই একটি খামারের দেখা মিলল রানি রাসমনি ঘাটের একটু দক্ষিণে। ‘মামা-ভাগিনা আল্লাহর দান মৎস্য প্রকল্প’ নামের এই প্রকল্পের অধীনে পাঁচটি পুকুরে মাছ চাষ হচ্ছে।

মঙ্গলবার বিকেলে সেই মাছের খামারে গিয়ে দেখা যায়, খামারের শ্রমিকেরা পুকুরগুলোতে মাছের খাবার ছেটাচ্ছিলেন। সেই বড় পুকুরগুলোর মাঝখানে থাকা ছোট্ট একটি পুকুরকে করা হয়েছে নার্সারি। এই পুকুরে মূলত প্রথমে পোনা এনে রাখা হয়। ২৫০ থেকে ৩০০ গ্রাম হলেই তবে বড় পুকুরে যাওয়ার ‘অনুমতি মেলে তাদের।’ সেই নার্সারির পাশেই শ্রমিকদের থাকার জন্য ঘর তোলা হয়েছে। সেই ঘরে পাওয়া গেল তত্ত্বাবধায়ক মো. আনোয়ার হোসেনকে।

তাঁর সঙ্গে দীর্ঘ আলাপ করে জানা গেল মাছের খামারটির সবিস্তার। আনোয়ার হোসেন পূর্বকোণকে বলেন, ৫৪ লাখ টাকায় পাঁচ বছরের জন্য পাঁচটি পুকুর লিজ নিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে। দুজন মালিক এই লিজ নিয়েছেন। কী কী মাছ চাষ হয় এমন প্রশ্নে আনোয়ারের তড়িৎ জবাব, ‘তেলাপিয়া, মৃগেল, কাতাল, রুই আর পাঙাস।’

খামারে ৯ জন শ্রমিক কাজ করছিলেন। তাঁরা জানান, ৪-৫ মাস পর পর মাছ বিক্রির জন্য পুকুর থেকে তোলা হয়। পাইকারি ক্রেতারা এসে নিয়ে যায় সেসব মাছ। এরপর মাছগুলো ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে। আবার পাইকারি ক্রেতাদের চাহিদার অতিরিক্ত হলে বিক্রির জন্য তোলা হয় পাহাড়তলী বাজারেও। পূর্ণাঙ্গ মাছ তোলার পর আবার ছাড়া হয় ছোট মাছ। এভাবে পুরো বছরধরে চলতে থাকে মাছ চাষ।
মাছ চাষে কেমন লাভ হয় তা খোলাসা করতে চাননি আনোয়ার হোসেন। শুধু বললেন মোটামুটি লাভ হয়।

তিনি বলেন, এর আগে দু’বার ঘূর্ণিঝড়ের মুখে পড়তে হয়েছে। এ সময় সমুদ্রের পানিতে তলিয়ে যায় খামার। এর সঙ্গে রয়েছে সমুদ্রের পানির উৎপাত। ফাঁক ফোকর হয়ে সমুদ্রের পানি পুকুরে প্রবেশ করলেই সব শেষ; মাছ মরে সাদা হয়ে যায় পুরো পুকুর।

আনোয়ারের সঙ্গে কথা বলা শেষে আউটার রিং রোড ধরে উত্তরে দুই কিলোমিটার এগোতেই দেখা গেল আরও বেশ কিছু মাছের ঘের। সড়কের পূর্ব পাশে একটি বিশাল ঘেরের ওপরের পুরোটা জুড়ে জাল বিছিয়ে দেয়া হয়েছে; যাতে কেউ মাছ চুরি করতে না পারে। ঘেরের চারপাশে নারিকেল গাছ আর নানা সবজি চাষ করা হয়েছে। সেই ঘেরের এক পাশে পানিতে ডানা ঝাপটাচ্ছিল হাঁসের দল। অন্য পাশের একটি খড়ের গাঁদা ঘিরে আছে বেশ কয়েকটি। ঘেরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আমির হোসেনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল-এটি আসলে একটি মিশ্র খামার। হাঁসের মল পুকুরের মাছের খাদ্যের জোগান দেয়। গরুর গোবরের সারে বেড়ে উঠে সবজি আর গাছ।
আমির হোসেন বলেন, একদিকে করোনা, অন্যদিকে মাছের খাবারের দাম বাড়ায় এখন ব্যবসা কিছুটা মন্দা। তবু বহুমুখী উৎপাদনের কারণে একটিতে ক্ষতি হলে, অন্যটিতে লাভ করে ক্ষতি পোষানো যায়।

কাট্টলি হয়ে আউটার রিং রোডের শুরু যেখান থেকে হয়েছে সেদিকে বঙ্গোপাসাগরের কূল ঘেঁষে আছে কয়েকটি মাছের খামার।
মাছের খামারের সঙ্গে যুক্ত থাকা মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোডের জন্য যাতায়াতব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় গত কয়েকবছরে খামারের সংখ্যা বেড়েই চলছে। সরকারসহ নানা প্রতিষ্ঠান থেকে লিজ নিয়ে এসব খামার গড়ে উঠেছে। বাজারে খামারগুলোর রুই কাতলার চাহিদা একটু বেশি। ৪ থেকে ৫ কেজি পর্যন্ত হওয়া এসব রুই-কাতলা প্রতি মন ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।

তবে সবার সঙ্গে কথা বলে একটা দাবি পাওয়া গেল সব পক্ষ থেকে। সেটি হলো মাছের খাদ্যের দামটা যেন একটু কমানো হয়। তাহলে মাছ চাষ করে আরও অনেকেই স্বাবলম্বী হবে বলে তাঁদের বিশ্বাস।

পূর্বকোণ/এএ

The Post Viewed By: 18 People

The Post Viewed By: 18 People



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews