হ্যারিকেন, টাইফুন বা সাইক্লোন—যে নামেই ডাকা হোক না কেন, এসব ভয়ংকর ঝড় গরম ও আর্দ্র বাতাস থেকে শক্তি সংগ্রহ করে এবং সাগরে তাণ্ডব চালায়। সাধারণত ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রার গ্রীষ্মমন্ডলীয় সমুদ্রে এ ধরনের ঝড় সৃষ্টি হয়।
তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, হ্যারিকেন কখনো নিরক্ষরেখার খুব কাছে আসে না, এমনকি একবারও তা এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে অতিক্রম করেনি। কিন্তু কেন নিরক্ষীয় অঞ্চলে হ্যারিকেন তৈরি হয় না?
নিউজউইকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পৃথিবীর ঘূর্ণনগতির কারণে বায়ুমণ্ডলে কোরিওলিস বল কাজ করে, যা নিরক্ষীয় অঞ্চলে অনুপস্থিত। এই বলের কারণে পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে বাতাস ও ঝড় ডানদিকে বাঁক নেয় এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাঁক নেয় বামদিকে। তবে নিরক্ষরেখায় এই বলের অভাব থাকায় কোনো ঝড় ঘূর্ণিরূপ নিতে পারে না। ফলে ৪০০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো বড় ধরনের ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয় না।
ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও বায়ুমণ্ডল বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ম্যাথু বার্লো বলেন, ‘হ্যারিকেন সাধারণত নিরক্ষরেখা থেকে দূরে সৃষ্টি হয় এবং বাতাসের প্রভাবের কারণে আরও দূরে সরে যায়। ইতিহাসে সবচেয়ে কাছাকাছি যে হ্যারিকেন তৈরি হয়েছিল, তা নিরক্ষরেখা থেকে প্রায় ১০০ মাইল দূরে ছিল।’
হ্যারিকেন কেন কখনো নিরক্ষরেখা অতিক্রম করে না?
হ্যারিকেন যদি নিরক্ষরেখা পার হতে চায়, তবে তাকে ঘূর্ণনের দিক বদলাতে হবে, যা প্রকৃতিতে অসম্ভব। কারণ, একবার ঘূর্ণন শুরু হলে তা থামিয়ে উল্টো দিকে চালানো প্রায় দুঃসাধ্য।
তবে কিছু বিজ্ঞানী বলছেন, তাত্ত্বিকভাবে শক্তিশালী কোনো ঝড় যদি পর্যাপ্ত গতি ও শক্তি সঞ্চয় করতে পারে, তাহলে এটি দুর্বল কোরিওলিস বল উপেক্ষা করে নিরক্ষরেখা অতিক্রম করতে পারে। ইউনিভার্সিটি অব হাওয়াইয়ের আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ গ্যারি বার্নসের মতে, এখন পর্যন্ত বাস্তবে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি, যেখানে কোনো হ্যারিকেন নিরক্ষরেখা পেরিয়েছে।
এই কারণেই নিরক্ষীয় অঞ্চল হ্যারিকেনের তাণ্ডব থেকে নিরাপদ থাকে। তবে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে এ ধরনের ঝড় ভয়াবহ বিপর্যয় সৃষ্টি করে চলেছে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল