বাংলাদেশে প্রধানত পাঁচ ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে। প্রতিটি ব্যবস্থা নিজস্ব কাঠামো, পাঠ্যসূচি ও পরীক্ষাপদ্ধতির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এ ব্যবস্থাগুলো হলো: ১. সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থা (General Education System): এটি দেশের সবচেয়ে বিস্তৃত শিক্ষা ব্যবস্থা। এটি তিনটি স্তরে বিভক্ত: (১) প্রাথমিক শিক্ষা (Class 1–5), (২) মাধ্যমিক শিক্ষা (Class 6–10) ও (৩) উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা (Class 11–12) এরপর উচ্চশিক্ষা (বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে) ব্যাচেলর, মাস্টার্স, এমফিল ও পিএইচডি।

২. আলিয়া মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থা (Madrasah Education System): এটিও কয়েকটি স্তরে বিভক্ত: (১) ইবতেদায়ি (প্রাথমিক)- Class 1–5, (২) দাখিল (মাধ্যমিক) সমতুল্য SSC, (৩) আলিম (উচ্চ মাধ্যমিক) সমতুল্য HSC, (৪) ফাজিল (ব্যাচেলর পর্যায়) ও (৫) কামিল (মাস্টার্স পর্যায়)।

৩. কওমী মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থা। এ স্তর সাধারণত তেরোটি শ্রেণীতে বিভক্ত: (১-১৩, তায়সীরুল মুবতাদী- দাওরায়ে হাদীস) এ ব্যবস্থাটি স্বতন্ত্রভাবে পরিচালিত হয়। দারুল উলূম দেওবন্দ অনুযায়ী এই ব্যবস্থার নিজস্ব সিলেবাস রয়েছে। বর্তমানে ‘দাওরায়ে হাদীস’ ডিগ্রিকে মাস্টার্স-এর সমমান দেওয়া হয়েছে। আলিয়া ও কওমী-উভয় ব্যবস্থায় আবার কমবেশি হিফজ বিভাগও চালু আছে।

৪. কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ব্যবস্থা (Technical and Vocational Education System)। এতে রয়েছে পাঁচ স্তরের লেখাপড়া। সেগুলো হলো: (১) টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ (TSC), (২) পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, (৩) কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (VTI, TTC), (৪) ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং ও (৫) শর্ট কোর্স ও ট্রেডভিত্তিক প্রশিক্ষণ। এ ব্যবস্থার লক্ষ্য হলো দক্ষতা অর্জন ও পেশাগত প্রস্তুতি।

৫. দেশের পঞ্চম ও শেষ স্তরের শিক্ষা ব্যবস্থার নাম O-Level, A-Level (Cambridge/Edexcel)। এ ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক পাঠ্যক্রমে পরিচালিত হয়, এটি বাংলাদেশ শিক্ষা বোর্ডের আওতাভুক্ত নয়।

এখন ভাবনার বিষয় হলো, একটি দেশের শিক্ষাব্যবস্থা যখন নানামুখী হয় তখন সবাই নিজের স্বার্থ নিয়ে টানাটানি করতে থাকে। নানান শিক্ষিত গোষ্ঠী নানাভাবে বিভক্ত হয়ে পড়ে। জাতি গঠনে তখন আর সম্মিলিত প্রয়াস থাকে না। নিজেরা নিজেদের মধ্যে টানাটানি, রেষারেষি আর মারামারি করতে করতে দেশ ও জাতি পিছিয়ে পড়ে।

এ পর্যায়ে আমি আলিয়া মাদরাসার শিক্ষা ব্যবস্থার জটিলতা নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই।

প্রাচীন বাংলায় শিক্ষাব্যবস্থা খুব একটা সংগঠিত ছিল না। আজ থেকে ৩০০০ বছর আগের যুগটি ছিল বৈদিক যুগ। ঐতিহাসিকদের মতে, এ সময় লেখাপড়ার কোনো সংগঠিত রূপ ছিল না। এ যুগে আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধনের নিমিত্তে শুধু মন্দিরকেন্দ্রিক লেখাপড়া চালু ছিল। আর এ যুগের ঠিক ৫০০ বছর পরে শুরু হয় ব্রাহ্মণ যুগ। আদি মানুষের আত্মা, জন্ম আর মৃত্যু পরিচালননিয়ম জানাই ছিল এ শিক্ষার উদ্দেশ্য। কিন্তু এ শিক্ষা সার্বজনীন ছিল না। শুধু ব্রাহ্মণ পরিবারের শিশুরাই এ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারত। এর বাইরে নি¤œবর্ণের কোনো গোত্র লেখাপড়া করার অধিকার রাখত না। এ যুগ শেষ হলে শুরু হয় বৌদ্ধশিক্ষার যুগ। এ যুগের সূচনা খ্রিষ্টপূর্ব ৬ শতকে। এ শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল মঠকেন্দ্রিক। শুধু মাঠকেন্দ্রিক থাকার কারণে এ শিক্ষাব্যবস্থার সার্বজনীনতাও ছিল না। এভাবেই মন্দিরকেন্দ্রিক, মাঠকেন্দ্রিক এবং পরিবার ও গোষ্ঠীকেন্দ্রিক লেখাপড়া ছিল প্রাচীন বাংলার বাস্তব চিত্র। ৫৭১ খ্রিষ্টাব্দে আরবে আগমন ঘটে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের। এ যুগকে মধ্যযুগ বলা হয়। এ যুগে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনীত ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থার এক মহাবিপ্লব ঘটে।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ শিক্ষা প্রচার ও প্রসারের নিমিত্তে ছড়িয়ে পড়েন বিভিন্ন দেশে। ৭১১ সালে ভারতবর্ষে আগমন ঘটে মুহাম্মাদ বিন কাসিমের। তিনি রাজ্য বিস্তারের পাশাপাশি শিক্ষা বিস্তারের দিকে বিশেষ নজর দেন। মক্তব ও মসজিদ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিশু শিক্ষার প্রবর্তন করেন। এ মক্তব ও মসজিদে মুসলিম শিশুর পাশাপাশি হিন্দু শিশুরাও শিক্ষাগ্রহণ করতো। এ সময় থেকেই এ দেশে শিক্ষাব্যবস্থার একটি ধারা সৃষ্টি হয়। আর এ শিক্ষাব্যবস্থা আরো সুগঠিত রূপ পায় সুলতানি আমলে (১২১০-১২৭৬) । এ আমলে প্রতিটি ধনী বাড়ির সামনে মক্তব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এসব মক্তবে আরবী ও ফার্সি পাঠদানের পাশাপাশি হস্তলিপিও শেখানো হতো। হিন্দু শিশুরাও এসব মক্তবে পড়াশোনা করতো। শাসকগণ প্রাথমিক শিক্ষার পাশাপাশি মাধ্যমিক শিক্ষার বিষয়েও অত্যন্ত গুরুত্ব দেন। এ উপলক্ষে শাসকগণ প্রচুর লাখেরাজ জমি দান করে দিতেন। নওগাঁর মহিসন্তোষ তকিউদ্দিন আরাবী প্রতিষ্ঠিত মাদরাসার জন্য বরাদ্দকৃত জমিই তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এ প্রতিষ্ঠানের জন্য দানকৃত জমির পরিমাণ ছিল ২৭০০ একর। রাজশাহী জেলার বাঘাতে মাদরাসার জন্য দান করা জমির পরিমাণ ছিল ৪২টি গ্রাম। এসব মাদরাসায় শিক্ষার্থীরা বিনা খরচে লেখাপড়া করতো। ১২৭৮ সালে শারফুদ্দীন আবূ তাওয়ামা কর্তৃক সোনারগাঁয়ে প্রতিষ্ঠিত মাদরাসাটি ছিল বাংলার সবচেয়ে বড় মাদরাসা। এ সময় মাদরাসার পাঠ্যসূচিতে ছিল আরবী, নাহু, ছরফ, বালাগাত, মানতিক, কালাম, তাছাউফ, সাহিত্য, ফিক্বহ, দর্শন ইত্যাদি। মোগল আমলে (১৫২৬ থেকে ১৮৫৭ সালে) বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার এ পাঠ্যসূচির সাথে সংযুক্তি ঘটে। জীববিদ্যা, প্রাণিবিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা, সমাজবিজ্ঞান, হিসাববিজ্ঞান, গণিত, ভূগোল, কৃষি, লোকপ্রশাসন, চারুকলা ইত্যাদি জ্ঞানের এ শাখাগুলো মাদরাসাশিক্ষার সাথে সংযুক্ত হয়। এভাবেই প্রাচীনকালে মাদরাসাশিক্ষার মাধ্যমে উপমহাদেশে শিক্ষাব্যবস্থার সোনালি অধ্যয়ের যাত্রা শুরু হয়।

কিন্তু ইংরেজ আমলে (১৭৫৭-১৯৪৭) পলাশীর প্রান্তরে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের পর দুর্ভাগ্যজনকভাবে মাদরাসাশিক্ষার পথ সংকুচিত হতে থাকে। শুরু হয় ইংরেজ শাসন। এ সময় ইংরেজরা মাদরাসার নামে বরাদ্দকৃত জমি বাজেয়াপ্ত করতে থাকে। তাদের প্রায় ২০০ বছরের শাসনামলে ৮০,০০০ মাদরাসার মধ্যে ৭৮,০০০ মাদরাসা বন্ধ হয়ে যায়। এভাবে উপমহাদেশে শিক্ষাব্যবস্থার গতি রুদ্ধ হতে থাকে। কিন্তু বাংলার ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা নিজের বাড়িতে, পাড়ায় ও মহল্লায় মক্তব, মসজিদ নির্মাণপূর্বক মাদরাসাশিক্ষার ধারা অব্যাহত রাখে। দেশের ধর্মপ্রাণ জনতা ও আলেম সমাজের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার কারণে ইংরেজ শাসকদের ষড়যন্ত্র শতভাগ সফল হয়নি। ইংরেজগণ অবশ্য কিছু মুসলিম আইন অফিসার তৈরির জন্য ১৭৮০ সালে উপমহাদেশে প্রতিষ্ঠা করেন কলকাতা আলিয়া মাদরাসা। আর আলেম সমাজের উদ্যোগে ১৮৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় দেওবন্দের সুবিখ্যাত ক্বওমী মাদরাসা। এ দুই ধারার মাদরাসা উপমহাদেশে সফল ও সমান্তরালভাবে চলতে থাকে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার ব্যবধান দূর করতে ১৯৮৫ সাল থেকে দাখিলকে এসএসসি এবং ১৯৮৭ থেকে আলিমকে এইচএসসির সমমানের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ জনতার দাবির মুখে মাদরাসা শিক্ষার সার্বিক মান উন্নয়নে ২০০৬ সালে সরকার ফাজিলকে ডিগ্রি এবং কামিলকে মাস্টার্স মান প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বর্তমানে সে শিক্ষার অধিকতর মানোন্নয়নের জন্য স্বতন্ত্রভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়।

এ আলোচনা দ্বারা এটাই বোঝা যায় যে, বাংলাদেশে মাদরাসা শিক্ষার ইতিহাস অতি প্রাচীন। এ শিক্ষার ইতিহাস একটি সোনালি আবরণে রচিত। এটি জাতির অস্তিত্ব রক্ষা ও আত্মিক উন্নয়নের শিক্ষা। এ শিক্ষার রয়েছে গৌরবগাঁথা তেজোদীপ্ত একটি অধ্যায়। মুসলিমদের জাতীয় চেতনা এবং স্বাধীন পরিচিতির অপরিহার্যতা বিবেচনায় মাদরাসা শিক্ষা তাই হাজার বছরব্যাপী তার গৌরব ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিল সমগ্র বাংলায়। স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বতন্ত্র জায়গা করে নিয়েছিল এ শিক্ষা। প্রচ- ইসলামবিরোধী হওয়া সত্ত্বেও ব্রিটিশরা এ শিক্ষা ধ্বংস করতে পারেনি। তখন স্কুল-কলেজে এ শিক্ষা ছিল বাধ্যতামূলক। পাকিস্তান আমলেও ইসলামী শিক্ষা ছিল ধারাবাহিকভাবে বাধ্যতামূলক বিষয়ের একটি।

কিন্তু বর্তমানে আলিয়া মাদরাসার সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবেশ খুবই হতাশাজনক। দেশে সরকারি আলিয়া মাদরাসা নেই বললেই চলে। যে তিনটি আছে সেটি ব্রিটিশ আমলের অনুমোদিত। স্বাধীন বাংলাদেশে কোনো আলিয়া মাদরাসা সরকারি হয়নি। মাদরাসা জাতীয়করণের জন্য শিক্ষকদের একটি অংশ দীর্ঘদিন যাবত আন্দোলন করে যাচ্ছেন। আবার তাদেরই অন্য একটি অংশ এর বিরোধিতা করে আসছেন।

মাদরাসায় আধুনিক শিক্ষা চালুর বিষয়ে শিক্ষকদের ভিতরে নানান গ্রুপ রয়েছে। একটি গ্রুপ চায়, মাদরাসায় শুধু কোরআন, হাদিস এবং ফিকহভিত্তিক আলেম তৈরি হোক। এ গ্রুপটি এক সময় বিজ্ঞান শাখা খোলারও বিরোধিতা করেছিল। আইসিটি খোলার সময়ও তারা বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু আইসিটি এখন তাদের কাছেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সম্প্রতি মাদরাসায় কমার্স শাখা চালু হওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিক্ষকদের একটি অংশ এটার বিরোধিতা করে চলেছেন।

আলিয়া মাদরাসার কয়েকজন অধ্যক্ষ আমার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করেন। মাদরাসার সামগ্রিক সমস্যা নিয়ে তাদের একজনের একটি বক্তব্য আমি নি¤œ তুলে ধরলাম: ‘মাদরাসার সবচেয়ে বড়ো সমস্যা হলো, মাদরাসাগুলোতে এখন পরীক্ষার্থী আছে কিন্তু শিক্ষার্থী নেই। এখানে ক্লাস হয় না বললেই চলে। অধিকাংশ শিক্ষক মাদরাসায় আসেন না। তিনি বলেন, মাদরাসা শিক্ষা পুনরুদ্ধার ভাবনায় সর্বাগ্রে প্রয়োজন মাদরাসা ক্যাম্পাসগুলোতে খেয়ানতমুক্ত পরিবেশে আমানতদারি ফিরিয়ে আনা। এর ব্যতিক্রম যে কোনো পরিকল্পনাই তলাহীন বালতিতে সারাদিন পানি ঢালার মতো ষোলোআনাই ব্যর্থ হবে। এখানে উচ্চ শিক্ষায় পরীক্ষার্থী সবাই, শিক্ষার্থী নাই বললেই চলে। ক্লাস বাইপাস করে ফাযিল-কামিলে শিক্ষার কোনো অপশন নাই, এটাই বাস্তবতা। যেকোনো কঠোর উদ্যোগ এবং উদযাপন দিয়ে ক্লাস বাস্তবায়ন করা জরুরি। এটা করার আগে অন্য সকল আলাপ-প্রস্তাবনা বন্ধ রাখা দরকার। এর সাথে এলেমের মহিমাকে সমুন্নত করতে আল্লাহর ওয়াস্তে মাদরাসা ক্যাম্পাসগুলোকে শুধুমাত্র, কেবলমাত্র এবং একমাত্র এলেমের জন্য একমুখী করা প্রয়োজন। দেশের মাদরাসা সংশ্লিষ্ট সকল জনশক্তিকে কঠোর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে খেয়ানত বিচ্ছিন্ন করা হোক। মাদরাসাগুলো এখন খেয়ানতের মহোৎসব কেন্দ্র। অনেক মোটা গলার বক্তা এবং দা’ঈ এখন নিয়মিত মাদরাসা ক্যাম্পাস ফাঁকি দিয়ে ওয়াজ বাণিজ্যে ব্যস্ত। হাল জামানায় এরা নতুন ধর্মের আবিষ্কারক। অথচ এই মাদরাসা শিক্ষার সাথে এদেশের মুসলমানের অঢেল অর্থ বিত্ত এবং ঘাম-রক্ত বিনিয়োগের ইতিহাস যুক্ত হয়ে আছে।

আরেকজন বলেছেন, মাদরাসা শিক্ষার প্রকৃত সমস্যার কথা কেউ বলছে না আর। গত কয় বছরে মাদরাসা শিক্ষা সম্পর্কিত যতগুলো মতবিনিময় সভা হয়েছে একটিতেও এই শিক্ষায় খেয়ানতের মহোৎসব এবং হুজুরদের দায়িত্বহীনতার কথা বলা হয়নি। দায়িত্বহীনতা এবং খেয়ানতের সাথে শুধু আপস নয় তুষ্টি যুক্ত হয়েছে এখানে। আমাদের ছাত্র জীবনে আমরা নকলকে শূকর-কুকুরের মাংসের মতই হারাম মনে করতাম। তাই আত্মমর্যাদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীরা একটি হরফও নকল করেনি তখন। এখন তথাকথিত দা’ঈরা মাদরাসার বাইরে ধর্মের ওয়াজ করছেন কিন্তু ভিতরে তারা একেবারেই ধর্মহীন। তথাকথিত দেশখ্যাত বক্তাদের নামের তালিকা আমার কাছে আছে যারা মাদরাসার ক্যাম্পাসে আসেই না, আর আসলেও অনিয়মিত। তারা হলেন মাদরাসার হেড মুহাদ্দিস, হেড মুফাসসির ইত্যাদি। ফাযিল-কামিলে টোটালি ক্লাস বিচ্ছিন্ন এখন। মাদরাসা এখন কেবলি রেজিস্ট্রেশন, ফরম পূরণ আর পরীক্ষাকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান। যে মুহাদ্দিস মুফাসসিরেরা বসে থেকে মাসের শেষে বেতন গুনছেন, তারা কিন্তু ভালো শিক্ষকের ছায়াতে ভালো মাদরাসায় পড়াশোনা করেছিলেন একদিন। এখানে একটি আরবি কবিতার অংশবিশেষ উল্লেখ করেছেন তিনি। কবিতার অর্থ হলো, ‘আমি আমার শায়খের অবস্থা দেখে বিস্মিত হলাম। বিস্মিত হলাম তার ধার্মিকতা, জাহান্নামের আলোচনা আর তার ভয়াবহ চিত্র বর্ণনায়। তিনি সোনা রূপার পাত্রে পান করাকে মাকরূহ মনে করেন, কিন্তু সুযোগ হলেই তিনি ঐ পাত্রটিই চুরি করে বসেন!’

এই কবিতা যেন এখনকার অনেক হুজুরের জন্যই রচিত! এসব হুজুর নেতৃস্থানীয় এবং মোটা গলার বক্তা। এদের কর্মক্ষেত্রের পারফরম্যান্স একেবারেই ইসলাম বিরোধিতায় পরিপূর্ণ। বিকারের আধারে নিমজ্জিত এখন গোটা আলিয়া শিক্ষা ব্যবস্থা। চাইলেই এদের নামের তালিকা দিতে পারি আমি। তিনি আরো বলেন, এলেমহীনতায় স্মরণকালের মধ্যে দৃশ্যমান সময় এটা। প্রায় সব বক্তাই এলেম ছাড়া পুঁজিতে মাঠ ময়দান চষে বেড়াচ্ছেন। কোনো দলের পক্ষে ভর করা তাদের ব্যবসার প্রধান অবলম্বন। বেসিক এলেমের অ, আ-ও জানে না, অথচ এই এরাই এখন আল্লামা এবং আন্তর্জাতিক খ্যাত! পচন ধরেছে আমাদের মাথায় একেবারে। অথচ আমাদের ইসলামী সমাজ নির্মাণের রাহবারগণ ছিলেন দেশের শীর্ষ এমনকি বিশ্ব বরেণ্য সব আলেম।

মাদরাসার উন্নয়ন সম্পর্কিত যেকোনো সুপারিশ বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারি বিভিন্ন দফতরের উপর ন্যাস্ত। কোনো সরকারি দফতরেই মাদরাসা দরদী কোনো মুসলিম নেই বললেই চলে। মাদরাসা বোর্ডের গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুমোদন কিংবা বাতিল নির্ভর করে দফতরে বসা কর্তা ব্যক্তিদের মর্জির উপর। সব দফতরের সংশ্লিষ্টরা পজিটিভ হলে সেটার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অর্থ বরাদ্দের জন্য সেটা প্রেরিত হয় অর্থ মন্ত্রণালয়ে। এরপরও অনেক ব্যাপার থাকে যার খবর কেউ রাখেন না।

লেখক: অধ্যাপক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews