বিশ্বের বায়ুদূষণে সবচেয়ে বিপজ্জনক হওয়ার পরও ঢাকায় বায়ুদূষণে আমরা তেমন কোনও পদক্ষেপ নিতে দেখি না। বিগত সরকারকেও এ বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ নিতে দেখিনি, এই সরকারের বেলাতেও দেখছি না। আমরা ঢাকাবাসী নির্মল বায়ু চায়, আমরা একটু শ্বাস নিয়ে বাঁচতে পারি। আমাদের নির্মল বায়ু দেন, আমরা বাঁচতে চায়। ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে অনতিবিলম্বে জরুরি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচিতে এসব কথা বলেন বক্তারা।
শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে ই-আরকি ও জনভাষ্য নামের সংগঠন এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে নাট্য পরিচালক সুমন আনোয়ার বলেন, আমরা জানি রাজধানী যেভাবে দিনদিন বড় হচ্ছে তাতে সরকারের কোনও পরিকল্পনা নেই। আমরা বুকভরে বাতাস নিতে পারছি না। রাজধানীকে বাসযোগ্য করে গড়ে তোলার দায়িত্ব সরকারের— সেখানে আমাদেরও ভূমিকা রাখতে হবে। নদীদূষণ, বায়ুদূষণ বন্ধ করতে হবে।
নারী উদ্যোক্তা তাসলিমা মিজি বলেন, রাজধানীর বায়ুদূষণ এমনি এমনিতে হয় না। রাষ্ট্রযন্ত্রের দায় আছে, আমলাদের দায় আছে, প্রয়োজন ছাড়া উন্নয়ন দরকার আছে কিনা ভাবতে হবে। আগের সরকার শহরবাসীর জন্য ক্ষতিকর কাজ ছাড়া তেমন কিছুই করেনি। এখন অন্তর্বর্তী সরকার এদেশের জনগণের জন্য কাজ করবে আমরা সেই আশা করি।
ছাত্র, পরিবেশ ও জলবায়ু কর্মী নয়ন সরকার বলেন, ঢাকার বাতাস এখন বিষাক্ত। প্রতিদিন আমরা শ্বাস নিচ্ছি এমন এক পরিবেশে, যা আমাদের জীবনকে ধীরে ধীরে ধ্বংস করে দিচ্ছে। দূষণ আমাদের স্বাস্থ্য, আয়ু এবং মানসিক শান্তি কেড়ে নিচ্ছে। আমরা কী এভাবে বাঁচতে চাই? নাকি সময় এসেছে এই নীরব ঘাতকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর? ঢাকা শহর বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম দূষিত শহর। দূষিত বায়ু আমাদের অজান্তেই কতটা ক্ষতি করছে, তা স্পষ্ট হয়ে উঠে এসেছে বিভিন্ন গবেষণা ও প্রতিদিনকার বাস্তবতার মাধ্যমে। এই নীরব ঘাতকের প্রভাব আর কতদিন আমাদের সহ্য করতে হবে?
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের বায়ু মান সূচক (একিউআই) বস্তুকণা পিএম-১০ ও পিএম-৫, নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনো-অক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড এবং ওজনস্তরের এ পাঁচ প্রকার দূষণের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে নির্ণয় করা হয়। বায়ুর মান সূচকের ০-৫০ (ভালো), ৫১-১০০ (মাঝারি ভালো), ১০১-১৫০ (সাবধানতা), ১৫১-২০০ (অস্বাস্থ্যকর), ২০১-৩০০ (খুব অস্বাস্থ্যকর) এবং ৩০১- পরবর্তী স্কোর হলো (বিপজ্জনক)। খুব অস্বাস্থ্যকর থেকে বিপজ্জনক হলেই এসময় অন্য দেশের শহরগুলো স্কুল বন্ধ করে দেয়। শহরের মধ্যে নির্মাণ কাজ সীমিত করে। নিয়মিত পানি ছিটায়। আর আমাদের শহরে শুনছেন কোনও সংবাদ? সরকার থেকে কিছু শুনছেন? অথচ আমাদের পরিবেশ অধিদফতর জানে— আসলে ইমিডিয়েট কী পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। গতকাল রাতে বায়ু মান ৫৮১ পর্যন্ত স্কোর উঠেছিল। অর্থাৎ প্রায় সবসময় আমরা দূষিত বায়ু সেবন করছি। দূষিত বায়ু সেবন করার কারণে আমাদের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি বাড়ছে।
কর্মসূচি থেকে ১২ দফা দাবিও পেশ করা হয়। সেগুলো হলো—
১. প্রতিদিন ২ বেলা করে সড়কে পানি ছিটাতে হবে। (এজন্য হাইকোর্টের সাবেক নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করতে হবে)।
২. সড়কে যেসব খোঁড়াখুঁড়ি/ ফুটপাত/ অন্যান্য কাজ বর্তমানে চলছে তা নির্মাণ বিধি মেনে ৭ দিনের মধ্যে শেষ করতে হবে— নয়তো এই দু-মাসের জন্য বন্ধ ঘোষণা করতে হবে।
৩. নির্মাণবিধি মেনে নির্মাণ কাজ করার কড়াকড়ি নির্দেশনা দিতে হবে; বায়ু মানে অবনতি হলে নির্মাণ কাজও বন্ধ করার নির্দেশনা দিতে হবে। (এজন্য কড়াকড়িভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে)।
৪. গাবতলী, যাত্রাবাড়ী ও ডেমরা দিয়ে যেসব পণ্যবাহী ট্রাক ও ফিটনেসহীন হাজারও যেসব ট্রাক— বালি, ইট নিয়ে শহরে প্রবেশ করে সেসব মালামাল ঢেকে নেওয়ার নিয়ম কার্যকর করতে নজরদারি বাড়াতে হবে। পরিস্থিতির অবনতি হলে এসব মালবাহী ট্রাক শহরে প্রবেশ সীমিত থেকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
৫. ফিটনেসহীন যানবাহন সড়ক থেকে সরাতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। ( ইতোমধ্যে ৬ মাসের সময় দেওয়া হয়েছে; যা অত্যন্ত অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত ছিল; এই সময়ে বাসগুলোর রং পরিবর্তন করা হচ্ছে। ১-২ মাস সময় দেওয়া যেত; সময় বেঁধে দেওয়া অবস্থাতেও বিআরটিএ'কে ফিটনেসহীন বাসের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে)।
৭. অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করতে হবে।
৮. শিল্প কলকারখানার দূষণ বন্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে।
৯. দেশব্যাপী বর্জ্য না পোড়ানো ও পরিষ্কারের সময় ধুলোবালি যাতে না উড়ে এজন্য এলজিআরডি থেকে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোতে কড়াকড়ি নিদর্শেনা দিতে হবে। ( ধুলোবালি পরিষ্কারের জন্য ভ্যাকুয়াম টাইপ ‘সুইপিং গাড়ি’গুলো ব্যবহার করতে হবে; ইতোমধ্যে একাধিক সিটি করপোরেশনে এটি আছে)।
১০। জনগণকে সচেতন করতে হবে। মাস্ক পরিধান করতে উৎসাহিত করতে হবে৷ (এজন্য আমরা তরুণরা ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো কাজ করতে মুখিয়ে আছি)।
১১। শহরের ডিসপ্লে গুলোতে অথবা ডিওই কর্তৃক ডিসপ্লে বসায়ে লাইভ বায়ু মান দেখানো ও সতর্কতা প্রচার করতে হবে।
১২। বায়ু মান বিপজ্জনক অবস্থায় চলে গেলে স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা জারি করতে হবে এবং স্কুল-কলেজসহ সরকারি বেসরকারি অফিস ঘোষণা বন্ধ করতে হবে।