ভিটামিন ডি এর কাজ কী?
১) এটি ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস শোষণে সহায়তা করে রক্ত প্রবাহের মাধ্যমে সঞ্চালিত হয়, যা শরীরে ক্যালসিয়াম ও ফসফেটের ব্যালেন্স ঠিক রাখে এবং হাড়কে শক্তিশালী রাখতে সাহায্য করে। ২) ভিটামিন ডি আমাদের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে এবং আমাদের সংক্রমণ ও রোগ থেকে রক্ষা করে। ৩) এটা আমাদের মাংসপেশিগুলোকে শক্তিশালী করে । ৪) সংক্রমণের বিরুদ্ধে সুরক্ষা : গবেষণায় দেখা গেছে যে ভিটামিন ডি তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে যেমন নিউমোনিয়া। COVID-19 মহামারি চলাকালীন দেখা গেছে যাদের শরীরে ভিটামিন ডি-এর অভাব ছিল তাদের সংক্রমণ হার বেশি ছিল এবং গুরুতর রোগের আশঙ্কা বেশি ছিল।
কোটি কোটি মানুষ ভিটামিন ডি-এর অভাবে ভুগছেন। ভিটামিন ডি কেন জরুরি-
১)। ভিটামিন ডি : এর ঘাটতি হলে ছোটদের রিকেটস রোগের কারণ, যেখানে হাড়ের টিস্যু সঠিকভাবে খনিজকরণ হয় না ফলে হাড় নরম, বাঁকা হওয়ার জন্য দায়ী।
২) ওস্টিওম্যালাসিয়া : বয়স্কদের হাড়ে ক্যালসিয়াম ও ফসফেটের অভাব হলে হাড় দুর্বল হয়ে যায় এবং হাড়ের ব্যথা বা কোমরের ব্যথা হতে পারে।
৩) অস্টিওপোরোসিস : ভিটামিন ডি-এর অভাব ক্যালসিয়ামের ঘাটতির কারণ হতে পারে, যা হাড়ের ঘনত্ব কমিয়ে দেয় এবং হাড়কে ভঙ্গুর করে তোলে, বিশেষ করে বয়স্কদের মধ্যে।
৪.) ইমিউন সিস্টেম দুর্বলতা : ভিটামিন ডি-এর অভাবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, ফলে সংক্রমণ এবং ঠান্ডা-জ্বরের মতো অসুখে সহজে আক্রান্ত হয়।
৫) অতিরিক্ত ক্লান্তি ও দুর্বলতা ৬) চুল পড়া
৭) ত্বকের সমস্য- শুষ্ক বা রুক্ষ হতে পারে।
৮) মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা : উদ্বেগ, বিষণ্নতা, ডিপ্রেশন, মুড সুইংয়ের কারণ হতে পারে।
৯) কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা : ভিটামিন ডি এর অভাব হৃদযন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়, যেমন উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ইত্যাদি।
কাদের শরীরে ভিটামিন ডি কম হয়
১) যাদের শরীরের রং বেশি ময়লা। ২) বয়স্ক মানুষের। ৩) যারা অতিরিক্ত ওজনে ভুগছেন। ৪) পর্যাপ্ত মাছ বা দুধ খান না। ৫) যারা বোরকা বা নেকাব পরে শরীর ঢেকে রাখেন। ৬) দীর্ঘক্ষণ অফিস করা। ৭) সবসময় ঘরে বসে থাকা। ৮) যাদের হজমে অসুবিধা। ৯) অস্ত্রোপচার করে অন্ত্রের কিছু অংশ কেটে ফেলা হয়েছে। খাদ্যনালির সমস্যার কারণে হজম ও বিপাকীয় কার্যক্রম হ্রাস পেলে। ১০) যারা অনেক উঁচুতে বসবাস করেন।
ভিটামিন ডি ঘাটতি হলে কী করবেন
ভিটামিন ডির ঘাটতি পূরণে সবচেয়ে সহজ সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টার মধ্যে সপ্তাহে তিন দিন ১০ থেকে ৩০ মিনিট সারা গায়ে রোদ লাগিয়ে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি পাওয়া সম্ভব। তবে শরীরে ভিটামিন ডির ঘাটতি পূরণে খাবারের প্রয়োজনীয়তাও কম নয়।
১) ডিম-কুসুমসহ। ২) দুধে প্রচুর ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। ৩) ফ্যাটি ফিশ যেমন : টুনা, ম্যাকরেল, স্যালমন সামুদ্রিক জাতীয় মাছ। ৪) পনির। ৫) কড লিভার অয়েল বা মাছের তেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি, ওমেগা থ্রি এবং ফ্যাটি অ্যাসিড।
কাদের ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট জরুরি?
১) যাদের ভিটামিন ডি কম এবং পিটিএইচ লেভেল বেশি। ২) ছোট শিশু যারা শুধু মায়ের দুধ পান করে। ৩) ১৮ বছর পর্যন্ত মানুষ প্রয়োজনে। ৪) ৫০-এর বেশি বয়স্ক মানুষ যারা ঘরের ভিতরে বেশি থাকেন। ৫) গর্ভাবস্থায়। ৬) যাদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি আছে। সূর্যের আলো ও সাপ্লিমেন্ট দুটোই ভিটামিন ডি এর প্রয়োজন মেটাতে পারে কিন্তু ব্যক্তিগত অবস্থা ভেদে এদের কার্যকারিতা নির্ভর করে।
লেখক : মেডিসিন বিভাগ, আলোক হেলথকেয়ার, মিরপুর-১০, ঢাকা।
বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ