মো:নজরুল ইসলাম,ঝালকাঠি: মায়ের অক্সিজেন সাপ্লাই ঠিক রাখতে শরীরের সঙ্গে গামছা দিয়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার বেঁধে রেখেছেন। মোটরসাইকেলের পেছনে করোনায় আক্রান্ত মা বসে আছেন। সেই স্কুল শিক্ষিকা মাকে লকডাউনের সময় মোটরসাইকেলে করে শনিবার (১৭ এপ্রিল) বিকেলে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন তার ছেলে। আর এ দৃশ্য দেখতে পেয়ে মহাসড়কে থাকা চেকপোস্ট থেকে সেই করোনা রোগী বহন করা মোটরসাইকেলটিকে দ্রুত ও অবাধে যেতে দিয়েছে পুলিশ।
ঝালকাঠির নলছিটি পৌরসভার সূর্যপাশা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা হাকিম মোল্লার স্ত্রী রেহেনা বেগম (৫৮) জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। গত বুধবার টেস্টে তিনি করোনা শনাক্ত হয়ে বাড়ীতেই চিকিৎসা নিচ্ছেলেন। শনিবার বিকালে তার অবস্থার কিছুটা অবনতি হলে দ্রুত তাকে হাসপাতালে নেওয়া দরকার। কিন্তু লকডাউনে যানবাহন বন্ধ। আবার জরুরি ভিত্তিতে অ্যাম্বুলেন্সও পাওয়া যাচ্ছিলো না। তাই একটা উপায় বের করলেন তার ছেলে জিয়াউল হাসান টিটু। মোটরসাইকেল বসে নিজের পিঠের সঙ্গে বাঁধলেন অক্সিজেন সিলিন্ডার। এরপর মাকে বসালেন মটরসাইকেলের পিছনে। সিলিন্ডার থেকে মায়ের মুখে অক্সিজেন নেওয়ার ব্যবস্থা করলেন। এরপর মোটরসাইকেল চালিয়ে শনিবার (১৭ এপ্রিল) বিকেলে বরিশালের শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এলেন। রেহেনা বেগমকে হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।
মোটরসাইকেলে হাসপাতালে নিয়ে আসার একটি ছবি কেউ ধারণ করে এবং তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছেড়ে দিলে তা মুহুর্তেই ভাইরাল হয়। এমন ছবিটিকে অনেকে হৃদয়বিদারক বলে অভিহিত করেছেন।
আর পেছনে তাকে ধরে যে নারী বসে আছেন তার মুখে অক্সিজেন মাস্ক। সিলিন্ডার থেকে অক্সিজেন মাস্ক দিয়ে ওই নারী যথারীতি অক্সিজেন গ্রহণ করছেন। এভাবেই তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ অবস্থা দেখে ওই মোটরসাইকেল চালককে কিছু আর বলার ছিল না ট্রফিক পুলিশেরও।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. এস এম মনিরুজ্জামান জানান, বর্তমানে রেহেনা বেগমের অবস্থা ভালো। তাকে চিকিৎসা দিচ্ছেন। তার শ^াসকষ্ট এখনো আছে। তাকে সেন্ট্রাল অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে হাইফ্লোর মেশিনের সাহায্য নেওয়া হবে।
বৃদ্ধার ছেলে জিয়াউল হাসান টিটু বলেন, মা রেহেনা জ্বর ও শ্বাসকষ্টে কষ্ট পাচ্ছিল। লকডাউনে যানবাহনও চলছে না। আর জরুরি ভিত্তিতে অ্যাম্বুলেন্সও না পাওয়া এই উপায় বের করেন।