আজ মহাশূন্যে যাত্রার দিন

মানব মহাকাশ যাত্রা বলতে মহাকাশযানে করে মানুষের মহাকাশের ভেতর দিয়ে ভ্রমণ করাকে বোঝানো হয়। ইতিহাসের প্রথম মানব মহাকাশ যাত্রা তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের ভস্তক কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১৯৬১ সালের আজকের দিনে সংঘটিত হয়। প্রথম মহাকাশচারী হিসেবে ইউরি গ্যাগারিন ছিলেন এর যাত্রী; যিনি দেখেছিলেন শূন্য থেকে পৃথিবীকে দেখতে কেমন লাগে, কতটা  সুন্দর এই নীল গ্রহটি।

১৯৬১ সালের ১২ এপ্রিল মস্কো সময় সকাল ৯টা ৬ মিনিটে রকেট উড্ডয়ন করা হয়। শুরু হলো ১০৮ মিনিটের বিস্ময়কর যাত্রার। ঘণ্টায় ২৮ হাজার কিলোমিটার বেগে ছুটে চলা মহাকাশযান থেকে গ্যাগারিন জানান, সব ঠিক আছে, জানালা দিয়ে মেঘ দেখা যাচ্ছে, সবকিছুই দেখা যাচ্ছে এবং সবকিছু খুবই মনোমুগ্ধকর। ইউরি ভাবছিলেন, পৃথিবীর মানুষ এই যাত্রার কথা জানতে পারলে কী রকম প্রতিক্রিয়া দেখাবে। যাত্রার আগে তিনি মাকে বলে এসেছিলেন, ব্যবসাজনিত কাজে দূরে যেতে হবে। কারণ, মহাকাশের কথা বললে মা দুশ্চিন্তা করবেন। উৎকণ্ঠিত মা তবু প্রশ্ন করেছিলেন, কত দূরে যাবে, ইউরি? তিনি বলেছিলেন, অনেক দূরে মা!

যে নভোযানে চড়ে গ্যাগারিন সেদিন মহাশূন্যে যাত্রা করেছিলেন, সেটি ছিল খুবই ছোট। সেটির ব্যাসার্ধ ছিল মাত্র দুই মিটার। সবচেয়ে বড় কথা ক্ষুদ্র ওই নভোযানে তাঁর ভূমিকা ছিল নেহাতই একজন যাত্রীর, নভোচারীর নয়। কারণ, সে সময় নভোযানের ভেতর কোনো যন্ত্রপাতি ছোঁয়ার অধিকার পাইলটের ছিল না। নভোযানের জানালা দিয়ে মহাকাশ থেকে পৃথিবীর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছিলেন তিনি। ভূপৃষ্ঠের ওপর মেঘের ছায়া দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন।

মহাশূন্য থেকে ছোট গ্রাম স্মেলকোভকাতে অবতরণ করেন গ্যাগারিন। তখন গ্রামবাসীকে দেখে বললেন, ‘আমি ইউরি অ্যালিক্সিয়েভিচ গ্যাগারিন, মহাকাশের প্রথম মানুষ। এখনই অনেক মানুষ, গাড়ি, ক্যামেরা আসবে এইখানে, তোমরা কোথাও যেও না, এই স্মৃতি আমরা বাঁধিয়ে রাখব।’

আমেরিকার বিরুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের অনস্বীকার্য টেক্কা ছিল এ মহাকাশ যাত্রা। তবে ঐতিহাসিক সেই সাফল্য পেতে গ্যাগারিনকে বিপজ্জনক এক ঝুঁকি নিতে হয়েছিল।

সেই ঐতিহাসিক অভিযানের অর্ধশতাব্দী পর রুশ প্রকৌশলী বরিস চেরটক ‘রকেট অ্যান্ড পিপল’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘এখনকার বিজ্ঞানীদের সামনে যদি ভস্তক নামের ওই নভোযানটিকে রাখা হতো, কেউই সেটিকে মহাশূন্যে পাঠানোর পক্ষে মত দিতেন না।’ তিনি আরও বলেন, ‘তখন আমি এমন এক নথিতে সই করেছিলাম, যেখানে আমি লিখেছিলাম সবকিছু ঠিকঠাক আছে এবং আমি এই অভিযানের নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিচ্ছি। কিন্তু সে রকম কোনো লিখিত গ্যারান্টি আমি আজ কোনোভাবেই দিতাম না। অনেক অভিজ্ঞতার পর আমি এখন বুঝি, সেদিন আমরা কতটা ঝুঁকি নিয়েছিলাম।’

যে প্রক্ষেপণ যানটির ওপর ভস্তক নামের নভোযানটি বসানো হয়েছিল, সেটির নামও ছিল ভস্তক। প্রক্ষেপণ যানটির ভিত্তি ছিল আর-সেভেন ধরনের একটি রকেট, যেটি ছিল আসলে দুই ধাপভিত্তিক একটি আন্তঃমহাদেশীয় দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র।

এখনও রাশিয়ায় প্রধানত ওই প্রযুক্তিনির্ভর ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে মহাকাশে নভোযান পাঠানো হয়। ১৯৬০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে পাঁচটি কৃত্রিম উপগ্রহ (স্যাটেলাইট) উৎক্ষেপণের চেষ্টা হয়, যার মধ্যে তিনটি কক্ষপথে ঢুকতে পারলেও দুটি ভূপৃষ্ঠে ফিরে আসে। সেই দুটোর একটি বিধ্বস্ত হয়েছিল। কয়েক মাস পর ১৯ আগস্ট দুটো কুকুর– বেলকা এবং স্ট্রেলকা মহাশূন্যে গিয়ে প্রাণ নিয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসে। ১৯৬০ সালে সেটিই ছিল প্রথম মহাকাশে পুরোপুরি সফল একটি যাত্রা। তার পরের আরও কিছু চেষ্টায় সমস্যা দেখা দিয়েছিল। চেরটক তাঁর বইতে লিখেছেন, ‘আমরা যদি আধুনিককালের রকেটের নিরাপত্তা বিবেচনা করি, তাহলে ১৯৬১ সালের আগে ওই অভিযান নিয়ে আমাদের আশাবাদী হওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ ছিল না।’

১৯৬১ সালের ১২ এপ্রিল গ্যাগারিনের ফ্লাইটের দিন রকেট একদম প্রায় নিখুঁতভাবে কাজ করেছিল। তবে মহাকাশ প্রযুক্তিতে ‘প্রায়’ শব্দটির তেমন কোনো জায়গা নেই; কারণ অল্প গোলমালেও সেদিন গ্যাগারিনের জীবন চলে যেতে পারত। ছোটখাট কিছু যান্ত্রিক ঝামেলা নিয়ন্ত্রণ-কক্ষের বিজ্ঞানীদের কপালে ভাঁজ ফেলেছিল। তারা আগে যা ভেবেছিলেন গ্যাগারিনের নভোযানটি কক্ষপথে ঢোকার পর তার চেয়ে আরও উঁচুতে উঠে গিয়েছিল। যদিও ভস্তকে এক সপ্তাহ চলার মতো অক্সিজেন, খাবার এবং পানি ছিল, কিন্তু উঁচুতে চলে যাওয়ায় পৃথিবীতে ফিরতে সময় বেশি লেগে যেতে পারত। ফলে, অক্সিজেন বা খাবারের অভাবে গ্যাগারিনের মৃত্যুও হতে পারতো। সে যাত্রায় যে নভোযানের ভেতর পাইলটের জন্য ফিট করা ব্রেকটি কাজ করেছিল এবং ব্রেক চেপে গ্যাগারিন নভোযানটির উঁচুতে ওঠা থামাতে পেরেছিলেন। ১০৮ মিনিটের মহাকাশ ভ্রমণ শেষে পৃথিবীতে ফিরতে সক্ষম হন। v



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews