বিয়ের আগে পুরুষের সিমেন টেস্ট (শুক্রাণুর সংখ্যা) ও নারীর ওভুলেশন টেস্ট (ডিম্বাশয়ের অবস্থা যাচাই) করালে সন্তান জন্মদানের সক্ষমতা কিংবা অক্ষমতা সম্পর্কে জানা যায়। স্বামী-স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ জটিলতায় স্ত্রীর শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, যা পরে গর্ভপাত ও শিশুমৃত্যুর প্রধান কারণ হতে পারে। এছাড়া যৌন মিলনের মাধ্যমে ছড়াতে পারে সিফিলিস, গনোরিয়া ও এইডসের মতো যৌনবাহিত নানা রোগ।

* স্বাস্থ্য পরীক্ষা না করালে কী ঝুঁকি থাকে

মা-বাবা দুজনই থ্যালাসেমিয়ার বাহক হলে সন্তান থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। বাবা-মায়ের রক্তের গ্রুপ জটিলতায় সন্তান ইরাইথ্রোব্লাস্টোসিস ফিটালিসের মতো প্রাণঘাতী জন্ডিস নিয়ে জন্ম নিতে পারে। পুরুষের শুক্রাণুর সংখ্যা স্বাভাবিকের চেয়ে কম হলে কিংবা নারীর ওভারিতে কোনো জটিলতা দেখা দিলে সন্তান জন্মদানে অক্ষমতা দেখা দিতে পারে। নারী হেপাটাইটিস বি, সি ভাইরাসের বাহক হলে পুরুষ সঙ্গী ও গর্ভের সন্তান সংক্রমিত হতে পারে। নারী-পুরুষ যে কোনো একজন সিফিলিস, গনোরিয়া, এইডসের মতো যৌনবাহিত রোগের বাহক হলে যৌনমিলনের মাধ্যমে সঙ্গী সংক্রমিত হতে পারে। মা গনোরিয়ায় আক্রান্ত হলে শিশু অন্ধ হয়ে জন্মাতে পারে। তাছাড়া গনোরিয়া নারীর বন্ধ্যত্বের অন্যতম কারণ। বংশ পরম্পরায় ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন ও এপিলেপ্সি থাকলে পরবর্তী প্রজন্মেও এসব রোগের ঝুঁকি থাকে।

* কোন কোন স্বাস্থ্য পরীক্ষা অতি জরুরি

▶ থ্যালাসেমিয়া : থ্যালাসেমিয়া হলো একটি জিনবাহিত রক্তরোগ। স্বামী-স্ত্রী দুজনই এ রোগের বাহক হলে সন্তান সংক্রমিত হয়। থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যায়। তখন বোনম্যারো প্রতিস্থাপন অত্যাবশ্যক হয়ে পড়ে। বিয়ের আগে সিবিসি টেস্ট করে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ জেনে নিন।

▶ হেপাটাইটিস : বিয়ের আগে কনে হেপাটাইটিসের বাহক হলে শারীরিক মিলনের মাধ্যমে পুরুষ সঙ্গী সংক্রমিত হতে পারে। তাছাড়া গর্ভের সন্তান এই ভাইরাসের বাহক হয়ে জন্ম নিতে পারে। তাই বিয়ের আগে হেপাটাইটিস ‘এ’, ‘বি’ ভ্যাকসিন নিয়ে রাখা ভালো।

▶ ফার্টিলিটি টেস্ট : বন্ধ্যত্ব নারী-পুরুষ যে কারও ক্ষেত্রে ঘটতে পারে। বিয়ের আগে পুরুষের সিমেন টেস্ট করে শুক্রাণুর সংখ্যা জেনে নেওয়া উচিত। ওভুলেশন টেস্ট করে নারীদের জেনে নিতে হবে ডিম্বাশয়ের পরিস্থিতি। দেখতে হবে ইউরেটাসে কোনো সমস্যা আছে কিনা।

▶ এসটিডি টেস্ট : এসটিডি হলো যৌনবাহিত সংক্রমণ রোগ। যৌন মিলনের মাধ্যেম সঙ্গী বা সঙ্গিনীর দেহে ছড়াতে পারে সিফিলিস-গনোরিয়া, এইচআইভি এইডসসহ নানা রোগ। ব্লাড টেস্ট ও প্রস্রাব টেস্টের মাধ্যেমে এ রোগ শনাক্ত করা যায়।

▶ রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা : স্ত্রীর রক্ত নেগেটিভ গ্রুপ এবং স্বামীর রক্ত পজিটিভ গ্রুপের হলে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে প্রথম সন্তান যদি নেগেটিভ গ্রুপের হয় তাহলে ভয়ের কিছু নেই। বিপত্তি বাধে প্রথম সন্তানের রক্ত পজিটিভ গ্রুপের হলে। নেগেটিভ-পজিটিভ মিথস্ক্রিয়ায় মায়ের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। এতে দ্বিতীয় সন্তান জন্মগ্রহণ করতে পারে মারাত্মক জন্ডিস ও মস্তিষ্কের সমস্যা নিয়ে। তাই প্রথম সন্তান জন্মের পরপরই মায়ের শরীরে অ্যান্টি-ডি ইনজেকশন দিয়ে নিতে হবে।

▶ মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা : অল্পতেই রেগে যাওয়া, অতিরিক্ত সন্দেহ করা কিংবা সারাক্ষণ বিষণ্ন থাকার ফলে তৈরি হতে পারে তীব্র পারিবারিক কলহ। তাছাড়া মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হলে শারীরিক সম্পর্কেও অনীহা দেখা দিতে পারে। এসব অপ্রত্যাশিত দাম্পত্য কলহ এড়াতে বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রী উভয়ের মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা জরুরি।

▶ দীর্ঘমেয়াদি ও জিনগত রোগ : ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, এপিলেপ্সি, ম্যালিগনেন্সির মতো নানা রকম রোগ-ব্যাধি বংশ পরম্পরায় বাসা বাঁধতে পারে শরীরে। তাই সম্ভাব্য স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে বাঁচতে হলে সতর্ক থাকা জরুরি। বিয়ের আগেই পাত্র-পাত্রীকে নিজেদের ও পারিবারিক রোগের ইতিহাস জেনে নিতে হবে।

লেখক : অনারারি প্রফেসর, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, সিনিয়র কনসালট্যান্ট, ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল, ঢাকা।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews