২০১৫ সালে মতিঝিল ঘরোয়া হোটেল অ্যান্ড রেস্তোরাঁয় একটি মোবাইল চুরি হয়। এ ঘটনায় রুটি তৈরির হেলপার রিয়াদ হোসেনকে সন্দেহ করে মালিক আরিফ হোসেন সোহেলের নির্দেশে বেঁধে রাখা হয়। অন্য হোটেলে কর্মরত রিয়াদের ভাই রিপন হোসেন ভাইয়ের সন্ধানে এসে জানতে পারেন, মালিক এ ঘটনার বিচার করবেন৷ মালিকের জন্য তিনি হোটেলটির সামনে অপেক্ষা করতে থাকেন। রাত সাড়ে ১২টার দিকে হোটেলের মালিক গ্রিল কারিগর জসিমের সহায়তায় রিয়াদকে স্বামীবাগ এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনে নিয়ে যান। এরপর খবির মেছিয়ারসহ আরও অজ্ঞাতনামা ৩ থেকে ৪ জনের সহায়তায় রিয়াদকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে লাঠি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করা হয়। রাত ১টার দিকে মুখের ভিতর আরিফ হোসেন সোহেল গুলি করেন৷ এরপর আসামিরা গুরুতর আহত রিয়াদকে ঢাকা মেডিক্যালে নেওয়ার পর ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় পরের দিন ২৮ অক্টোবর ২০১৫ সালে রিয়াদের ভাই রিপন হোসেন রাজধানীর ওয়ারী থানায় মতিঝিল ঘরোয়া হোটেলের মালিক আরিফ হোসেন সোহেলসহ তিনকে আসামি করে একটা হত্যা মামলা দায়ের করেন। অন্য আসামিরা হলেন, গ্রিলের কারিগর মো. জসিম চৌকিদার ও খবির মেছিয়ার।
এরপর ২০১৬ সালের ২২ জুলাই মালিকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ওয়ারী থানা পুলিশের পরিদর্শক আলিম হোসেন শিকদার। সেখানে তিনজনকে আসামি করেন তিনি। ওই বছরের ডিসেম্বরের ১ তারিখে অভিযোগ গঠন করে আদালত। এরপর থেকে দীর্ঘ ৮ বছর পার হয়েছে। অথচ এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ একজন সাক্ষীও আদালতে উপস্থাপন করতে পারেনি। বর্তমানে মামলাটি ঢাকার অতিরিক্ত দায়রা জজ ইব্রাহিম মিয়ার আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। সবশেষ গত ২ অক্টোবর এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ছিল। কোনও সাক্ষী হাজির না হওয়ায় বিচারক ১৫ জানুয়ারি নতুন তারিখ ধার্য করেন।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, এ মামলার আসামি জসিম চৌকিদার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে এ ঘটনার সঙ্গে মালিক আরিফ হোসেনসহ মেছিয়ার খবিরের জড়িত থাকার কথাও জানিয়েছেন। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে ডাক্তার গুলির আঘাতে মৃত্যুর কথা উল্লেখ করেছেন।
জবানবন্দিতে জসিম বলেন, ২০১৫ সালের ২৭ অক্টোবর রাত ৮টার দিকে ম্যানেজার সুরুজ মিয়া জানান, শফিকুলের ১৫শ টাকা ও একটি মোবাইল চুরির জন্য রিয়াদকে বেঁধে রাখা হয়েছে। মালিক এসে বিচার করবেন। ঘটনার দিন দুপুর ১২টা থেকে রিয়াদের ডিউটি ছিল। রাত ১২টার সময় মালিক আরিফ হোসেন সোহেল গাড়ি নিয়ে এসে রিয়াদকে আমাদের স্বামীবাগের স্টাফ রুমে নিয়ে যায়। মালিকের সাথে শফিকুল, সালাম, ইলিয়াস ও হোটেলের একজন নতুন গ্লাস-বয় ছিল। আমি, বিল্লাল ও রাজু এক রিকশায় মালিকের বিচার করা দেখতে যাই। সেখানে গিয়ে রিয়াদকে খুঁটির সঙ্গে বাঁধা দেখতে পাই। জিজ্ঞাসাবাদে মালিক তাকে লাঠি দিয়ে ৪ থেকে ৫টা বাড়ি মারে। রিয়াদ মোবাইল ও টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে। এরপর আরিফ হোসেন পকেট থেকে পিস্তল বের করে গলার ডান পাশে গুলি করেন। রক্ত বের হতে দেখে তিনি হাত দিয়ে চেপে ধরেন। আমাদেরকে চেপে ধরতে বলেন। রাজু ও খবির রিয়াদকে ধরে। আমি গলা চেপে ধরেছি।
জসিম আরও বলেন, এরপর রিয়াদকে আমরা ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে নেওয়ার পথে মালিক আমাদেরকে পিস্তল দেখিয়ে হুমকি দিয়ে বলেন, মানুষের কাছে বলবি, ছিনতাইকারীরা রিয়াদকে গুলি করছে। তখন হঠাৎ আমি জ্ঞান হারাই। আমার মোবাইল নিয়ে আমাকে ফেলে রেখে বাকিরা পালিয়ে যায়। মালিকের কাছে সব সময় ২ বা ৩টা পিস্তল থাকে। ঘটনার সময় ৩০ থেকে ৩৫ জন সেখানে উপস্থিত থাকার কথা উল্লেখ করেন এ আসামি।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ তথ্য বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মাইনুদ্দিন আহমেদ সাক্ষী হাজিরের দায়িত্বে থাকা মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের কথা বলেন। সাক্ষী সমনের দায়িত্বে থাকা পুলিশের উপপরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পরবর্তী তারিখে সাক্ষীদের হাজির করা হবে। এত দিন হয়নি কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাক্ষী হাজিরের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কোর্টের। এত দিন তারা কেন করেনি। বিষয়টি আমার জানা নেই।
সাক্ষী আদালতে হাজির না হওয়ার বিষয়ে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এ মামলার কোনও তারিখ আমরা পাইনি। সামনে জানুয়ারিতে তারিখ আছে। সাক্ষী হাজিরের জন্য আমরা কাজ করবো।