বাউফলে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি)অধিকাংশ  প্রকল্পের কাজ না করেই টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। আবার কিছু প্রকল্পের কাজ হলেও নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার হয়েছে।  সিডিউল অনুযায়ী কাজ না করে এসব প্রকল্পের বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাত করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

এডিপির প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এমন সীমাহীন অনিয়মের বিষয় নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২৪-২০২৫ ইং অর্থ বছরে পটুয়াখালীর বাউফলে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্য মোট ৮২ লক্ষ ৮২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। উক্ত বরাদ্দকৃত অর্থের বিনিময়ে ১৫টি ইউনিয়নে মোট ৬৪টি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় উপজেলা প্রশাসন। 

উপজেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রকল্প নির্বাচনের ক্ষেত্রে খামখেয়ালীপনা করেছেন। প্রতিটি প্রকল্প থেকে নির্ধারিত অংকের কমিশন নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। অধিকাংশ কাজই পেয়েছেন আওয়ামীলীগের ঠিকাদাররা। আওয়ামীলীগের পদধারী নেতারা তাদের লাইসেন্সে কাজ পেতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অনৈতিক সুবিধা দিয়েছেন। 

নিয়ম অনুযায়ী ৩০ জুনের মধ্যে কাজ সম্পূর্ণ করে ঠিকাদার বিল উত্তোলন করবেন। কাগজে কলমে কাজ সম্পন্ন দেখিয়ে বিল উত্তোলন করা হলেও বাস্তবে একাধিক প্রকল্পের কাজ হয়নি। সেক্ষেত্রে ঠিকাদার ও সিপিসি কাজ না করেই বিল তুলেছেন।

মদনপুর ইউনিয়নের রামলক্ষ্মন গ্রামে হাবিবুর রহমান মৃধা বাড়ির পুকুরে এলজিইডির খালবিল প্রকল্পের আওতায়( আইপিসিপি) প্রায় সাড়ে ৮ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি আরসিসি ঘাটলা নির্মাণ করা হচ্ছে।

সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা যায়, ওই বাড়ির পুকুরে একটি পাকা ঘাটলা থাকা সত্বেও তার পাশে নতুন আরেকটি ঘাটলা নির্মাণ করা হচ্ছে।

স্থানীয়রা বলেন, একটি ঘাটলা থাকার পরেও সেখানে আরেকটি ঘাটলা নির্মাণ  প্রকল্পটি অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়। 

কাছিপাড়া আবদুর রশিদ মিয়া ডিগ্রী কলেজের পূর্ব পাশে পাকা রাস্তা থেকে রফিক আকনের বাড়ি পর্যন্ত হেরিংবন্ড সড়ক নির্মাণের জন্য ৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। দরপত্র প্রক্রিয়ায় কাজটি পায় নুর হোসেন এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। নুর হোসেন এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার নুর হোসেন মদনপুরা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সহসভাপতি। তার ছেলে ডা. জুবায়ের পটুয়াখালী জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।  

সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা যায়,  ওই প্রকল্পের কোনো চিহ্ন নেই। অথচ ৩০ জুন প্রকল্পের বরাদ্দকৃত সব অর্থই উত্তোলন করেছেন ঠিকাদার নুর হোসেন। 

আদাবাড়িয়া ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ লক্ষ্মীপাশা ফোরকানিয়া মাদ্রাসার পূর্ব পাশে ঘাটলা সংলগ্ন পুকুর পাড়ে লেট্রিণ নির্মাণের জন্য ১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। বাস্তবে ওই গ্রামে এই নামে কোনো মাদ্রাসার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।

ওই নামে কোনো প্রতিষ্ঠান নেই স্বীকার করে প্রকল্প কমিটির সভাপতি আদাবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার আনিচুর রহমান বলেন, আমার বাড়ির প্রতিষ্ঠান মোহাম্মদিয়া নুরানী মাদ্রাসাই ফোরকানিয়া মাদ্রাসা নামে চলছে এবং সেখানেই ঘাটলার পাশে লেট্রিণ নির্মাণ করা হয়েছে। 

সরেজমিন পরিদর্শনকালে, মোহাম্মাদিয়া নুরানী মাদ্রাসার পাশে একটি পুরাতন লেট্রিন দেখা গেছে। সেখানে নতুনভাবে নির্মিত কোনো লেট্রিন পাওয়া যায়নি। 

১ জুলাই প্রকল্পটি পরিদর্শণকালে দেখা যায় এখন পর্যন্ত ঘাটলার  ঢালাই দেওয়া হয়নি। অথচ সম্পূর্ণ বিল তুলে নেওয়া হয়েছে।  

একই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মধ্যমদনপুরা বাজার পাকা সড়ক থেকে নজরুল সিকদার বাড়ির তালিমুল ইসলাম মসজিদ পর্যন্ত একটি সিসি সড়ক নির্মাণের জন্য দেড় লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। সিডিউল না মেনেই সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছে। কোথাও দেড় ইঞ্চি আবার কোথাও ১ ইঞ্চি উচ্চতায় ঢালাই দেওয়া হয়েছে।

মসজিদের একাধিক মুসুল্লি বলেন, এভাবে কাজ করার চেয়ে না করাই ভালো ছিল। নিম্নমানের খোয়া দিয়ে ঢালাই দেওয়া হয়েছে। সড়কটি নির্মাণের জন্য দেড় লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও ৩০ হাজার টাকার কাজও হয়নি। এভাবে অধিকাংশ প্রকল্পের কাজই সিডিউল অনুযায়ী করা হয়নি। 



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews