আজকের আধুনিক জীবনে আমরা অনেকেই হঠাৎ করেই অনুভব করি—ভয় করছে, বুক ধড়ফড় করছে, হাত-পা কাঁপছে, ঘুম আসছে না, কিংবা কোনো কিছু নিয়ে অকারণে চিন্তা বেড়ে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে এই উপসর্গগুলো পরিণত হচ্ছে নার্ভের সমস্যা বা স্নায়বিক দুর্বলতায়। কিন্তু প্রশ্ন হলো—কীভাবে আমাদের চিন্তা থেকেই এমন হয়?
চিন্তার গভীরতা: যেখানে শুরু, সেখানেই শেষ নয়
আপনার মস্তিষ্কে যখন কোনো চিন্তা আসে, আপনি যদি সেটার গভীরে চলে যান, তখন সেই চিন্তা আর আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকে না। আপনি একবার যখন চিন্তায় ডুবে যান, তখন সেটা ক্রমাগত বাড়তেই থাকে—একটা চিন্তা থেকে আরেকটা, তারপর আরেকটা... শেষ কোথায়, আপনি জানেন না।
এই কারণেই বিশেষজ্ঞরা বলেন, "চিন্তা আসা স্বাভাবিক, কিন্তু চিন্তার গভীরে যেও না।"
মস্তিষ্কের স্বভাব: নেতিবাচকতাই বেশি আকর্ষণ করে
আমাদের ব্রেন ও মন নেতিবাচক বা খারাপ চিন্তা-কে বেশি আকর্ষণ করে এবং দীর্ঘক্ষণ ধরে মনে রাখতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ—
শিশুদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, বইয়ে যদি খারাপ ছবি থাকে, তারা সেটাই বারবার দেখতে চায়।
কাউকে যদি বলা হয় “এই কাজটা করো না”, তাহলে সে প্রথমেই সেটাই করে।
এ কারণেই যখন আপনি নিজেকে বলেন—"আমি আর চিন্তা করবো না"
তখনই কিন্তু ব্রেন সেটাকে উল্টোভাবে ব্যাখ্যা করে এবং আপনি আরও বেশি করে সেই চিন্তার মধ্যে জড়িয়ে পড়েন।
এই চক্রে আপনি যখন আটকে যান...
এই বাড়তে থাকা চিন্তা থেকেই শুরু হয়:
দুশ্চিন্তা ও আতঙ্ক
ঘুমের সমস্যা
বুক ধড়ফড় করা
হাত-পা কাঁপা
মনঃসংযোগে ব্যাঘাত
আর যখন এই উপসর্গগুলো দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে, তখন তা স্নায়বিক দুর্বলতা, নার্ভের ভারসাম্যহীনতা কিংবা মানসিক সমস্যায় রূপ নিতে পারে।
যেমন:
প্যানিক অ্যাটাক
জেনারালাইজড অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার (GAD)
সাইকোসোম্যাটিক ডিসঅর্ডার (যেখানে মানসিক চাপ শারীরিক উপসর্গ তৈরি করে)
করণীয় কী?
চিন্তা বন্ধ করতে বলবেন না নিজেকে, বরং চিন্তা আসলে সেটা স্বাভাবিক বলে মেনে নিন এবং আস্তে আস্তে অন্যদিকে মনোযোগ দিন।
নিয়মিত মেডিটেশন, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম, ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটি ও পর্যাপ্ত ঘুম—এইগুলো মস্তিষ্ককে শান্ত রাখতে সাহায্য করে।
নিজেকে ব্যস্ত রাখুন—সৃজনশীল কাজ, বই পড়া, গান শোনা কিংবা মানুষের সঙ্গে সময় কাটানো চিন্তা থেকে মুক্তি দেয়।
প্রয়োজনে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
শেষ কথা
আমাদের ব্রেন যেভাবে চিন্তা করে, সেটাকে এক মুহূর্তে পরিবর্তন করা সম্ভব না। কিন্তু সচেতনভাবে ধীরে ধীরে নিজেদের অভ্যাস বদলানো গেলে চিন্তা থেকে সৃষ্ট ভয় ও নার্ভের সমস্যাকে রোধ করা সম্ভব। নিজেকে দোষ না দিয়ে, ভালোবাসা ও যত্ন দিন—সেটাই সুস্থতার প্রথম ধাপ।