অপার বিস্ময়ে ভরা সুন্দরবন। এ বন ২৪ ঘণ্টায় রূপ বদলায় ছয়বার। মৌয়াল, জেলে ও বাওয়ালি মিলে ২৫ থেকে ৩০ লাখ মানুষ সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল। জাতিসংঘের ইউনেস্কো কমিশন ১৯৯৭ সালের ৬ ডিসেম্বর সুন্দরবনের কটকা-কচিখালী, নীলকমল, দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ-মান্দারবাড়িয়া সমুদ্রসৈকত এ তিনটি জোনের ১ লাখ ৩৯ হাজার ৭০০ হেক্টর এলাকাকে পৃথিবীর ৫৫২তম বিশ্ব ঐতিহ্য (ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ) হিসেবে ঘোষণা করে।
সুন্দরবন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্যে ভরপুর। প্রায় ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই সুন্দরবন খুব ভোরে এক রূপ। দুপুরে অন্য রূপ। পড়ন্ত বিকালে আরেক রূপ। সন্ধ্যায় সাজে ভিন্ন রূপে। মধ্য ও গভীর রাতে সৌন্দর্য আরেক রকম। চাঁদনি রাতে এই বনের মোহনীয় রূপ পর্যটকদের মোহিত করে। কচিখালী সমুদ্রসৈকত থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার রয়েছে সুযোগ। সুন্দরবনে প্রতি বছর মধু আহরণ মৌসুমে অন্তত ১ হাজার মৌয়াল বনে প্রবেশ করেন। এ ছাড়া জেলে ও বাওয়ালি মিলে ২৫ থেকে ৩০ লাখ মানুষ এ বনের ওপর নির্ভরশীল।
সুন্দরবনের মোট আয়তনের মধ্যে বনের পরিমাণ ৪ হাজার ১৪৩ বর্গকিলোমিটার ও জল ১ হাজার ৮৭৪ বর্গকিলোমিটার। এ বনে রয়েছে প্রায় ৪৫০টি নদনদী ও খাল। সুন্দরী, গেওয়া, পশুর, গরান, গোলপাতাসহ ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালা, ১৬৫ প্রজাতির শৈবাল ও ১৩ প্রজাতির অর্কিট রয়েছে। বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রল-মায়া হরিণ, লোনা পানির কুমির, অজগর, কচ্ছপ, বিশ্বের বিলুপ্তপ্রায় ইরাবতী ডলফিনসহ ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী রয়েছে।
এর মধ্যে ৩২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ সরীসৃপ, আট উভচর ও ৩০০ প্রজাতির পাখি রয়েছে। ২০০৪ সালে ইউএনডিপির প্রাণী জরিপ অনুযায়ী, সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগার আছে ৪৪০টি, হরিণ দেড় লাখ, বানর ৫০ হাজার, বন্যশূকর ২৫ হাজার, কুমির ২০০, উদ্বিড়াল ২৫ হাজার। ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৬ প্রজাতির চিংড়ি, ১৩ প্রজাতির কাঁকড়া, ১ প্রজাতির লবস্টার ও ৪২ প্রজাতির মালাস্কা। এ বন থেকে প্রতি বছর মধু আহরণ করা হয় ১৫ থেকে ২০ হাজার মণ। খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পর্যটক সংখ্যা ছিল ২ লাখ ১১ হাজার ৫৭ জন।
এর মধ্যে বিদেশি পর্যটক ছিলেন ২ হাজার ৬২২ জন। রাজস্ব আয় হয়েছে ৩ কোটি ৬১ লাখ ৫ হাজার ৩৮৫ টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২ লাখ ১৬ হাজার ১৪৩ জন পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণ করেন। বিদেশি পর্যটক ছিলেন ২ হাজার ১৪৩ জন। রাজস্ব আয় হয় ৩ কোটি ৯৪ লাখ ৩২ হাজার ৪৮০ টাকা। বর্তমানে ছোটবড় ১২০টি ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠান সুন্দরবনে পর্যটকদের ভ্রমণ কাজে নিয়োজিত আছে। এদের রয়েছে আধুনিক উন্নত সুবিধাসংবলিত জলযান ও নিরাপত্তাব্যবস্থা। এর মধ্যে মানসম্মত ১৫-২০টি হবে।
সুন্দরবনের করমজল বন্য ও কুমির প্রজনন কেন্দ্র, হারবাড়িয়া ইকো সেন্টার, কটকা, কচিখালী ও নীলকমল অভয়ারণ্য, শেখেরহাট টেম্বপল, কলাগাছিয়া ইকো ট্যুরিজম সেন্টার, মান্দারবাড়িয়া অভয়ারণ্য নামের স্পটগুলো পর্যটকদের জন্য নির্ধারিত। এসব স্পটে কুমির প্রজনন, অসুস্থ হরিণের পরিচর্যা, হাজার বছরের পুরনো স্থাপনার ধ্বংসাবশেষসহ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে।
বিডি প্রতিদিন/নাজিম