বলুন তো অভিনেতা ফারহান আহমেদ জোভান মানুষটা কেমন? জানি, অদ্ভুত এই প্রশ্নে অনেকে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যাবেন। অভিনীত চরিত্রগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে তাঁর একটা অবয়ব তুলে ধরার চেষ্টা করবেন। শেষমেশ বাধ্য হবেন পরাজয় স্বীকার করে নিতে। কারণ একটাই, এক দশকের অভিনয় ক্যারিয়ারে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে বহুবার নিজেকে ভেঙেছেন এই অভিনেতা।
যেজন্য পর্দায় উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান থেকে শুরু করে নিম্নআয়ের শ্রমজীবী মানুষসহ নানা ধরনের চরিত্রে তাঁকে দেখা গেছে। শুধু তাই নয়, গল্প হাস্যরসাত্মক, ট্র্যাজিক, নিখাঁদ প্রেমের যেমনই হোক না কেন, অভিনয় দিয়ে তা দর্শকের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার চেষ্টা করেছেন সবসময়। একইভাবে স্বপ্ন পূরণের দৌড়ে ছুটে চলা কোনো তরুণ কিংবা জীবনসংগ্রামী লড়াকু হিসেবে পর্দায় তাঁর আবির্ভাব ঘটেছে, তখনও তা অতিরঞ্জিত হয়ে উঠেনি।
‘ইউনিভার্সিটি’ থেকে শুরু করে ‘নাইন এন এ হাফ’, ‘ব্রাদার্স’, ‘জোনাকীর আলো’, ‘ব্যাকবেঞ্চার’, ‘গুডবয়’, ‘তিথির অতিথি’, ‘বেস্ট ফ্রেন্ড’, ‘এখন যখন’, ‘মনে রাখব’, ‘লাভ সেমিস্টার’, ‘মায়ের ডাক’, ‘লাভ ভার্সেস ক্রাশ’, ‘লাভ নট রিভেঞ্জ’, ‘সুঁই’, ‘আফ্রিকান বউ’, ‘পাওয়ারফুল জামাই’, ‘বলতে চাই’, ‘কিছু কথা বাকি’, ‘লাভ লাইন’, ‘বৃষ্টিতে দেখা’, ‘শেষ ভালোবাসা’, ‘ভিতরে বাহিরে’, ‘হঠাৎ ভালোবাসা’, ‘কাপল অব ক্যাম্পাস’সহ আরও অসংখ্য নাটক, টেলিছবিতে তাঁর অভিনয় যেমন সাবলীল মনে হয়েছে, ঠিক তেমনি তা সহজেই ছাপ ফেলেছে অনুরাগীদের মনে। তাই বিস্মিত হতে হয় এটা দেখে, মাত্র এক দশকের অভিনয় ক্যারিয়ারে কীভাবে জোভান ভার্সেটাইল অভিনেতা নিজেকে প্রমাণ করেছেন।
এ কারণেই নির্দিষ্ট কোনো চরিত্রের সঙ্গে মিলিয়ে প্রকৃত জোভানকে আবিষ্কার করা এখন খুবই কঠিন। যা-ই হোক, ব্যক্তি জোভান নিয়ে সত্যিকার অর্থে জল্পনা-কল্পনায় মেতে ওঠার কিছু নেই। যদিও শুরুতে একটি প্রশ্ন সবার সামনে রেখেছি; সেটা কেবল এ কারণে যে, একজন অভিনয়শিল্পী কীভাবে অভিনীত চরিত্রের মধ্য দিয়ে দর্শক হৃদয়ে স্থায়ী আসন করে নেন, তা বোঝানোর জন্য। পৃথিবীর বহু শিল্পীর প্রকৃত নাম পরিচয় হারিয়ে গেছে শুধু মঞ্চ বা পর্দার পরিচয়ের কারণে। আর এটাই তাদের শিল্পীজীবনের বড় অর্জন। জোভান যে সেই দলেরই একজন হতে চলেছে, তার আভাস অনেক দিন ধরেই পাওয়া যাচ্ছে। কেননা, অভিনয়ের বাইরে আর এই অভিনেতার কোনো বিষয় নিয়ে গুজব-গুঞ্জন শোনা যায়। দর্শক প্রতিনিয়ত তাঁর অভিনীত গল্পেই পরিভ্রমণ করে যান।
এক দশকের পথ-পরিক্রমায় আজকের যে জোভান, তাঁকে নিয়ে দর্শক প্রত্যাশা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। জোভানও তাই চেষ্টা করে যাচ্ছেন একের পর এক নতুন গল্প ও চরিত্রের মধ্য দিয়ে সেই প্রত্যাশা পূরণের। তবে জনপ্রিয়তার ইঁদুরদৌড়ে অংশ নিয়ে নয়; বরং অভিনয়ে নিজেকে ভেঙেচুরে চরিত্রকে পর্দায় বাস্তব করে তুলে ধরার মধ্য দিয়ে। সে কারণেই অহমকে দূরে ঠেলে নির্দ্বিধায় বলতে পারেন, ‘শীর্ষ অভিনেতাদের তালিকায় আমার নাম আছে কী নেই, তা নিয়ে কখনও মাথা ঘামাই না। দর্শকের কাছে আমার কাজ কতটা ভালো বা মন্দ লেখেছে, সেই বিষয়টা বড় করে দেখি। কারণ, আমি জানি অভিনয় জীবনের সমস্ত শক্তি ও সাহস জোগান দেয় দর্শকরা। তাদের ভালোবাসা পেয়েছি বলেই এখনও নিরলস কাজ করে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছি।’
জোভানের কথায় বোঝা গেল, দর্শকের ভালোবাসা কুড়াতেই রাতদিন একাকার করে অভিনয় করে যাচ্ছেন। এখন প্রশ্ন হলো, তাহলে অভিনয়ের জন্য একটি মাধ্যমকেই তিনি কেন প্রাধান্য দিচ্ছেন?
এ প্রশ্নে জোভান জানান, সিনেমা ও ওটিটিতে কাজের অভিজ্ঞতা তার হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট একটি মাধ্যমেই শুধু কাজ করে যাবেন– এমন পরিকল্পনা আদৌ ছিল না। অভিনেতা হিসেবে চাওয়া থাকে, ভিন্ন ধাঁচের গল্প ও চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে নিজেকে পর্দায় তুলে ধরার; সেটা যে মাধ্যমেই হোক। নাটকেও বাছ-বিচার করেই অভিনয় করেন। প্রতি মাসেই দেখা যায়, অসংখ্য স্ক্রিপ্ট হাতে এসেছে, কিন্তু সবই মনের মতো এমন নয়। এজন্যই মাসে পাঁচ-সাতটির বেশি নাটকে অভিনয় করা হয়ে উঠে না। আর এটা করেন শুধু সেই কাজগুলো তুলে ধরার জন্য যা, তাকে দর্শকের মাঝে বাঁচিয়ে রাখবে দীর্ঘদিন।