মাগুরার শিশুটির মৃত্যুর পর এখন সেখানে কী অবস্থা?

ছবির উৎস, Shamim Khan

ছবির ক্যাপশান,

শিশুটির মৃত্যুতে মাগুরায় মোমবাতি প্রজ্জ্বলন

৩০ মিনিট আগে

প্রায় আট দিন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে হেরে যাওয়া মাগুরার আট বছর বয়সী শিশুটির বাড়িতে এখনও শোকের ছায়া। স্থানীয় মানুষজন একদিকে যেমন শোকার্ত, অন্যদিকে বিক্ষুব্ধ হয়ে রয়েছেন। দ্রুত বিচারের মাধ্যমে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি কার্যকর করার জন্যও তারা দাবি জানিয়েছেন।

প্রতিদিন নানা মতের-দলের মানুষ এই বাড়িতে এসে শিশুটির বাবা-মাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন, তাদের কেউ কেউ সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।

আজ শনিবার সকালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ড. শফিকুর রহমান জেলার শ্রীপুর উপজেলায় শিশুটির বাড়িতে গিয়েছেন।

তিনি ওই বাড়িতে গিয়ে শিশুটির মৃত্যুর ঘটনার দ্রুত বিচার চান। তিনি বলেন, "এই মেয়ের হত্যাকারীদের বিচার আমরা দ্রুত দেখতে চাই। বিচার কার্যকর হয়েছে এটাও দেখতে চাই।

তাহলে হয়তো এই পরিবারটি মানসিক সান্ত্বনা পাবে। দেশবাসী সান্ত্বনা পাবে।"

বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল এসেও পরিবারটিকে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে।

শিশুটির ধর্ষকদের বিচার ৯০ দিনে নয়, বরং সাত দিনের মধ্যে করার দাবি জানান তিনি।

উল্লেখ্য, মাগুরার নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে গিয়ে সে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের শিকার হয় বলে পরিবারের তরফ থেকে অভিযোগ ওঠে।

এরপর তাকে গত ছয়ই মার্চ অচেতন অবস্থায় মাগুরা আড়াইশ শয্যা হাসপাতালে নেওয়া হয়।

অবস্থা ভালো না দেখে তখনি মাগুরা হাসপাতালের চিকিৎসকদের পরামর্শে শিশুটিকে নেয়া হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

সেখানে থেকে সেদিনই সন্ধ্যায় উন্নত চিকিৎসার জন্য শিশুটিকে ঢাকায় আনা হয় এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করা হয়।

দুই দিন পর গত আট মার্চ তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে সিএমএইচ-এ নেওয়া হয়। এরপর ১৩ই মার্চ বৃহস্পতিবার শেষপর্যন্ত মৃত্যু হয় শিশুটির।

বৃহস্পতিবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দুপুর একটার দিকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

দাফনের জন্য শিশুটির মরদেহ সামরিক হেলিকপ্টারে মাগুরায় নেওয়া হয়

ছবির উৎস, Shamim Khan

ছবির ক্যাপশান,

দাফনের জন্য শিশুটির মরদেহ সামরিক হেলিকপ্টারে মাগুরায় নেওয়া হয়

'ধর্ষকের' সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি চাচ্ছে এলাকাবাসী

শিশুটির মৃত্যুর পর গত ১৩ই মার্চ রাতেই ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলার আসামিদের বাড়িতে, যা তার বোনেরও শ্বশুর বাড়ি, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালায় এলাকাবাসী।

স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাড়িতে এখন ভাঙা দেয়াল ছাড়া অবশিষ্ট আর কিছু নাই এবং ওই এলাকায় এখনও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

"বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ। খবর পেয়ে মাগুরা সদর পুলিশ ও দমকল বাহিনীর লোকজন সেখানে যাবার চেষ্টা করলে তাদেরকে শহরের নতুন বাজার ব্রিজের মুখে আটকে দেয় জনতা," বলছিলেন স্থানীয় সাংবাদিক শামীম খান।

এ সময় তারা "আমাদের এলাকায়, ধর্ষকের ঠাঁই নাই" শ্লোগান দিয়ে ধর্ষকদের ফাঁসি দাবি করে।

নিজনান্দুয়ালীর বাসিন্দা আলেক শেখ বলেন, "আমাদের এলাকায় অতীতে এমন ঘটনা ঘটেনি। এটি আমাদের অসম্মানিত করেছে। এখানে ধর্ষকের কোন ঠাঁই হবে না।''

"ঘটনার পরপরই আমরা এই বাড়িটি ধর্ষকের বাড়ি হিসাবে চিহ্নিত করেছি। এই ভিটায় প্রয়োজনে মসজিদ মাদ্রাসা বানানো হবে এমন প্রস্তাব ইতিমধ্যে এলাকার অনেকের কাছ থেকে এসেছে। সবাই এটিকে একটি পাপযুক্ত ঘৃণিত বাড়ি হিসাবে চিহ্নিত করছে," বলেন তিনি।

মাগুরা সদর উপজেলায় গতকাল ১৪ই মার্চ সন্ধ্যায় এলাকায় মোমবাতি প্রজ্বলন করা হয়েছে এবং বিক্ষোভকারীরা দোষীদের দ্রুত ফাঁসি কার্যকর চেয়েছে বলে জানা গেছে।

"বোনের শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে এলাকার মানুষ এক ঘরে করে দিয়েছে। গতকাল পরিস্থিতি এত দ্রুত ও নৃশংসভাবে হয়েছে, যে কাউকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি," বলেন শামীম খান।

এই ঘটনায় গত আটই মার্চ আট বছরের শিশুটির মা মাগুরা সদর থানায় চার জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার মামলা করেন।

মামলায় শিশুটির বোনের স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুরকে আসামি করা হয়েছে। তবে তারা আগে থেকেই পুলিশের হেফাজতে ছিলেন। কিন্তু মামলার পর তাদেরকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে তুলে ভিন্ন ভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

মামলার অগ্রগতি বিষয়ে জানতে চাইলে মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আইয়ুব আলী শনিবার বিবিসিকে বলেন, "গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।"

এ বিষয়ে মাগুরা সদর থানার ইন্সপেক্টর ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বিবিসি বাংলাকে গত ১৩ই বলেন, "কেউ যদি ধর্ষণের পর হত্যার চেষ্টা করে বা এখন যেহেতু মারা গেছে, তাই নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে হত্যা সংক্রান্ত যে বিধান আছে, সে অনুযায়ী বিচার চলবে। সেভাবেই চার্জশিট দেওয়া হবে। যত দ্রুত সম্ভব প্রতিবেদন দেওয়া হবে।"

শিশুটির কবর জিয়ারত করেন জামায়াতের আমীর ড. শফিকুর রহমান

ছবির উৎস, Shamim Khan

ছবির ক্যাপশান,

শিশুটির কবর জিয়ারত করেন জামায়াতের আমির ড. শফিকুর রহমান

শিশুটির পরিবারের কী অবস্থা

নিহত শিশুটির মামা ইউসুফ বিশ্বাস বিবিসিকে বলেন, শিশুটির বাবা মস্তিষ্কের এক সমস্যায় ভুগছেন। নিহত শিশুটি ছাড়া তার আরো দুইটি মেয়ে আর এক ছেলে রয়েছে। বড় বোনকেই শুধু বিয়ে দেওয়া হয়েছিলো, বাকিরা ছোট। পরিবারে উপার্জনক্ষম ব্যক্তি না থাকায় এখন তাদের মা-ই কোনোভাবে সংসারের খরচ চালাতেন।

তবে এখন অনেকেই পরিবারকে আর্থিক সাহায্য করছে।

"সবাই বিচার চায়, সাহায্য করছে। কিন্তু মেয়েকে তো আর পাবো না আমরা," বলেন তিনি।

শিশুটির ছোট চাচী আখি খাতুনের বাড়ি শিশুটির বাড়ি থেকে দুই মিনিট হাঁটা দূরত্বে।

তিনিও বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, "সবাই যতটুকু পারে, সাহায্য চাচ্ছে। বিচার চাচ্ছে।"

তার মা কান্নাকাটি করছে, মানুষ বাড়িতে আসছে-যাচ্ছে, স্বান্ত্বনা দিচ্ছে। কিন্তু মেয়েটির বাবা যেহেতু কিছু মনে রাখতে পারে না, তাই "তিনি জানেনই না যে সে কোথায় গেছে।"

কথা কথায় আখি খাতুন আরও বলেন, "উনি (শিশুটির বাবা) মানুষ দেখে ভয় পাচ্ছে। সকালবেলা দেখলাম মাঠ দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ডেকে খেতে দিলাম...অবুঝ শিশুর মতো পালতে হচ্ছে তাকে। ঢাকায় আনা নেওয়া, এত মানুষ, এই সমস্ত দেখে সে আরও বেশি ভয় পাচ্ছে।"

গত কয়েকদিন ধরে তারা মোবাইল কিংবা টিভি দেখার সময়ও পাননি জানিয়ে তিনি আরও জানান, শিশুটির বোনকে আর শ্বশুর বাড়িতে পাঠানো হবে না।

জারিয়া গ্রামের ইউপি সদস্য রূপ কুমার মণ্ডলও বিবিসিকে বলেন, "বড় বোন হয়তো আর শ্বশুর বাড়িতে যাবে না। এই পরিবেশে কেউ যেতে পারে না। আর বিয়ে হয়েছেও তিন-চার মাস হল।"

মেয়েটিকে নির্যাতন ও মৃত্যুর ঘটনায় পুরো এলাকাজুড়ে শোক আর একটা থমথমে পরিবেশ রয়েছে বলে তিনি জানান।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews