রাজধানী ঢাকার নিউমার্কেট থেকে সায়েন্স ল্যাব মোড়ের কাছাকাছি হাফ কিলোমিটারের কম দূরত্বে দেশের তিনটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ, ঢাকা আইডিয়াল কলেজ। প্রায়ই দেশবাসী ভিজুয়াল মিডিয়ার কল্যাণে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর ছাত্রদের যুদ্ধকৌশল দেখে থাকে। কখনো ঢাকা কলেজ বনাম সিটি কলেজ, আবার কখনো সিটি কলেজ বনাম আইডিয়াল কলেজ। দীর্ঘকাল ধরে আমাদের সন্তানদের পড়াশোনা বাদ দিয়ে রাজপথের রণকৌশল দেখতে দেখতে ক্লান্ত হচ্ছি। যারা লেখাপড়া করে সুন্দর সুনির্মল ভবিষ্যৎ  গড়বে, প্রতিযোগিতাপূর্ণ পৃথিবীতে নিজের শক্ত অবস্থানের জানান দেবে। সেখানে তারা লড়াই করছে সমবয়সী বন্ধু, সুহৃদদের সঙ্গে এ কেমন কথা! কারা তাদের পেছনে ইন্ধন জোগাচ্ছে। কাদের ইশারায় হরহামেশাই কোমলমতি শিক্ষার্থীরা মারমুখো হচ্ছে একে অপরের প্রতি। এ দায় শুধু সরকারের একার নয়। দায় এড়াতে পারেন না স্থানীয় রাজনীতিবিদরা, ঠিক তেমনি এড়াতে পারেন না কলেজগুলোর অধ্যক্ষ এবং শিক্ষককুল। তিনটি কলেজেই উচ্চমাধ্যমিকের সঙ্গে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর স্তর রয়েছে। সাধারণত সংঘর্ষগুলোতে উচ্চমাধ্যমিক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদেরই বেশি সম্পৃক্তি পাওয়া যায়। ওরা কোমলমতি, ওদের বয়স কম, একটু-আধটু ভুলভ্রান্তি ওদের দ্বারা হওয়াটাই স্বাভাবিক। বয়সটাই এ রকম- তেজদ্বীপ্ততা নিয়ে জ্বলে ওঠার, কিন্তু কোথায় জ্বলে উঠতে হবে তারা তা জানে না। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ভুল করবে। তাদের শুধরে দেওয়ার দায়িত্ব সম্মানিত অধ্যক্ষগণ এবং শিক্ষকবৃন্দের। কিন্তু তারা কী তা করেছেন কখনো? অতীতের অধিকাংশ ঘটনায় দেখা গেছে, তাদের নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতে। সম্মানিত শিক্ষদের আপন গৃহেও তো এ বয়সী ছেলেমেয়ে রয়েছে। তবে কেন তারা শিক্ষার্থীদের নিজ সন্তানের স্নেহ-মমতায় আঁকড়ে ধরলেন না।
ঐতিহ্যবাহী কলেজগুলো পাশাপাশি হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মাঝে চলার পথে তারুণ্যের স্নায়ুবিক উত্তেজনা সংক্রমিত হতেই পারে,  তবে তা যেন কোনোক্রমেই সীমা লঙ্ঘন না করে, সেদিকে নিয়মিত নজরদারি রাখতে হবে প্রতিটি কলেজ কর্তৃপক্ষকে। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ সুরক্ষায় তিনটি কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সমন্বয়ে ২০ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা যেতে পারে। এ কমিটিতে প্রতিটি কলেজের একজন করে ছাত্রপ্রতিনিধি থাকবেন। থাকবেন কলেজসংলগ্ন এলাকার নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও বুদ্ধিজীবীরা। তারাই আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার আশু সমাধান করবেন। সংঘর্ষে জড়ালে কঠোর শাস্তির বিধান থাকতে হবে। সংঘর্ষের সূত্র অন্য জায়গায়- নিউমার্কেট, সায়েন্স ল্যাব এলাকার ফুটপাতের দোকান হলো সোনার হরিণ।
হকারদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ফুটপাতের ১ হাজার ৫০০ দোকানের প্রতিটি থেকে দিন গড়ে ২৫০ টাকা চাঁদা তোলা হয়। মাসে ১ কোটি ২৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা ওঠে। ওঠে বছরে ১৫-২০ কোটি টাকা চাঁদা। বিগত সময়ে দেশের শাসন ক্ষমতায় থাকা প্রতিটি দলের যুব ও ছাত্রসংগঠনের নেতারা রাজনৈতিক আশীর্বাদে এই গণচাঁদাবাজির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত ছিল। প্রত্যন্ত গ্রাম কিংবা মফস্বল শহর থেকে আসা সাদামাটা জীবন যাপনে অভ্যস্ত শিক্ষার্থীর শহুরে হাওয়ায় জীবনযাপন পদ্ধতির আমূল পরিবর্তন ঘটে যায়। এক সময়ে যার হল কিংবা হোস্টেলে তিন বেলা খাবারের পয়সা পকেটে থাকত না, সে এখন কোটি টাকার পাজেরো নিয়ে ঘোরে। ঢাকার অভিজাত এলাকায় একাধিক বিলাসবহুল ফ্ল্যাটও আছে। এমনও দেখা গেছে, বিগত সময়ে ছাত্রনেতারা বিদেশে বাড়ি-গাড়ি করেছেন চাঁদাবাজির টাকায়। অবিলম্বে এসব বন্ধ করতে হবে কঠোর হস্তে।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews