আপডেট হয়েছে ৪৯ মিনিট আগে
বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই তালিকায় বাংলাদেশও আছে, বাংলাদেশি পণ্যের ওপরে ৩৭ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আগে যুক্তরাষ্ট্রে গড়ে শুল্ক ছিল ১৫ শতাংশ।
বুধবার স্থানীয় সময় বিকেল চারটায় হোয়াইট হাউজে এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন এ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন তিনি।
কোন দেশের ওপর কত হারে পারস্পরিক শুল্ক আরোপ হবে, সংবাদ সম্মেলনে তার একটি তালিকা তুলে ধরেন তিনি।
মি. ট্রাম্পের যুক্তি, নতুন এই 'রিসিপ্রোকাল ট্যারিফ' বা পাল্টা শুল্ক ব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্রকে 'আবার সম্পদশালী' করবে।
ধারণা করা হচ্ছে, নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে প্রায় ১০০টি দেশের ওপর আরোপ করা এই শুল্ক বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
অনেক দেশ ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তকে 'বাণিজ্য যুদ্ধ' হিসেবে আখ্যায়িত করছে।
অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করেছেন, এই বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হলে তাতে কেউ-ই জয়ী হবে না।
কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প শুল্ক আরোপের ঘোষণার এই দিনটিকে যুক্তরাষ্ট্রের 'অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দিবস' হিসাবে অভিহিত করে বলেন, "আমরা একটি স্বাধীন ও সুন্দর জাতি হতে যাচ্ছি।"
"এবং, এই দিনটিকে আপনারা ভবিষ্যতে স্মরণ করবেন। আপনারাই তখন বলবেন, 'তিনি (মি. ট্রাম্প) সঠিক ছিলেন'। এই দিনটি আমাদের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিন।"
ছবির উৎস, Reuters
মার্কিন অর্থনীতিকে পুনর্গঠনের জন্য অন্যান্য দেশের উপর 'ন্যূনতম ১০ শতাংশ বেসলাইন শুল্ক' ঘোষণা করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, যা আগামী পাঁচই এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে।
যেসব দেশ শুধুমাত্র এই বেসলাইন শুল্ক'র মুখোমুখি হবে, সেগুলো হলো:
এছাড়া, আগামী নয়ই এপ্রিল থেকে আরো প্রায় ৬০টি ওপর উচ্চতর শুল্ক আরোপ শুরু হবে। এই দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করেছিলো।
এদিকে, আজ থেকেই বিদেশে প্রস্তুতকৃত অটোমোবাইলের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ শুরু হচ্ছে।
আর, যুক্তরাজ্যর ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হলেও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত সকল দেশের পণ্য আমদানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
বাংলাদেশের পণ্যের ওপর নতুন করে ৩৭ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অফিস অব দ্য ইউনাইটেড স্টেট ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ, যা ইউএসটিআর নামে পরিচিত, তাতে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে বাংলাদেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যের পরিমান ছিল আনুমানিক ১০ দশমিক ছয় বিলিয়ন ডলার।
গত বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে দুই দশমিক দুই বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে বাংলাদেশে।
আর ২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি হয়েছে প্রায় সাড়ে আট বিলিয়ন ডলারের মত।
ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসের তথ্য বলছে, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব পণ্য রপ্তানি হয় তার মধ্যে রয়েছে কৃষিপণ্য (খাদ্যশস্য, বীজ, সয়াবিন, তুলা, গম এবং ভুট্টা), যন্ত্রপাতি এবং লোহা ও ইস্পাত পণ্য।
আর বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি পণ্যের মধ্যে আছে তৈরি পোশাক, জুতা, টেক্সটাইল সামগ্রী ও কৃষিপণ্য।
মি. ট্রাম্পের নতুন শুল্ক পরিকল্পনায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর পণ্য আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্র সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৪৮ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে।
এশিয়ার দেশগুলোর ওপর আরোপিত শুল্ক এক নজরে দেখে নেওয়া যাক:
ছবির উৎস, Bernd Debusmann Jr/BBC
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, অন্যান্য দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে 'বাজেভাবে' ব্যবহার করেছে এবং আমেরিকান পণ্যের ওপর অসম শুল্ক আরোপ করেছে।
এটিকে তিনি 'প্রতারণার' সঙ্গে তুলনা করেছেন।
অন্যান্য দেশ অসম শুল্ক আরোপ করার কারণে যুক্তরাষ্ট্রও তাদের ওপর এই পাল্টা শুল্ক আরোপ করছে।
তবে, মি. ট্রাম্প বলছেন যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্ক অন্যদের আরোপিত শুল্কের 'প্রায় অর্ধেক'।
"সুতরাং, সেই হিসাবে পুরোপুরি পাল্টা শুল্ক হচ্ছে না। তবে হ্যাঁ, আমি তা করতে পারতাম। কিন্তু এটি করলে অনেক দেশের জন্য কঠিন হয়ে যেত। আমি তা করতে চাইনি," বলেন মি. ট্রাম্প।
তিনি তার বক্তব্যে বারবার উল্লেখ করেন যে এটি যুক্তরাষ্ট্রের "মুক্তির দিন"।
এই টিনটির জন্য যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করছিলো বলেও জানান।
তিনি যোগ করেন যে, আজকের দিনটি আমেরিকান শিল্পের "পুনর্জন্মের" দিন এবং আজ আমেরিকা "পুনরায় সম্পদশালী" হলো।