কুমিল্লার বরুড়ায় চা বিক্রির টাকায় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত করা আব্দুল খালেক (৯৮) মারা গেছেন। শুক্রবার দুপুরে বার্ধক্যজনিত কারণে উপজেলার নলুয়া চাঁদপুর  গ্রামের নিজ বাড়িতে তিনি মারা যান। নলুয়া চাঁদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, আব্দুল খালেক বরুড়া উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের নলুয়া চাঁদপুর গ্রামের মাক্কু মিয়ার ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

আব্দুল খালেক একজন চা বিক্রেতা ছিলেন। বিয়ের কয়েক বছর পর সড়ক দুর্ঘটনায় তার স্ত্রী মারা যান। আব্দুল খালেকের কোনও সন্তানও ছিল না। ১৯৬৭ সালে চা বিক্রির টাকায় নিজ নামে সাফকবলা জমি ক্রয় করেন। এই জনপদে কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় ১৯৯৭ সালের ১ জানুয়ারি ৫২ শতক জমি দান করে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে প্রতিষ্ঠা করেন "নলুয়া চাঁদপুর উচ্চ বিদ্যালয়" নামে একটি স্কুল। ২০১৯ সালে স্কুলটি এমপিওভুক্ত হয়। 

এনিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সে সময় তিনি বলেছিলেন, বাজে ব্যবহার করা লোকদের তার চা দোকানে বসতে দিতেন না। দোকানে বসে কিংবা গ্রামের পথে ঘাটে একজন অন্যজনকে নাম বিকৃত করে ডাকে। রহিমকে রউম্যা। খালেককে খালিক্কা ইত্যাদি নামে ডাকে। তার নিজের নাম কেউ বিকৃত করে ডাকলে তিনি মনে কষ্ট পেতেন। পরে ভাবলেন শিক্ষার অভাবে তারা মানুষের নাম বিকৃত করে। এই গ্রামের ৮০ ভাগ লোক ছিলো নিরক্ষর। কিছু ছেলে-মেয়ে প্রাইমারিতে পড়লেও দূরে হওয়ায় হাইস্কুলে যাচ্ছিলেন না। তিনি দোকানে একদিন বললেন, গ্রামে একটি স্কুল করা দরকার। তা শুনে অন্যরা বললো-জমি কে দিবে? তিনি বললেন- তিনিই জমি দিবেন। পরের দিন তিনি ঘুমে থাকতেই অনেকে এসে তার দরজা ধাক্কাতে লাগলেন। তারা জানতে চাইলো স্কুলের জমি দিবেন শুনলাম। আমরা ঝুড়ি কোদাল নিয়ে এসেছি মাটি কাটতে। এভাবে গ্রামের মানুষ থেকে বাঁশ-কাঠ আর নগদ টাকা চেয়ে এনে গড়ে তুললেন নলুয়া চাঁদপুর উচ্চ বিদ্যালয়। শিক্ষক হিসেবে এগিয়ে এলেন গ্রামের কিছু স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষক ও তরুণ। প্রথম দিকে এগিয়ে এসে স্কুল প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করেছিলেন গ্রামের আবদুর রহিম, সিরাজুল হক, সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম মজুমদার, প্রথম প্রধান শিক্ষক সফিউল্লাহসহ এলাকার দানশীল ব্যক্তিরা। 

কুঁজো হয়ে গেলেও তিনি ছিলেন একজন দৃঢ়চেতা এবং রসিক মানুষ। এই প্রতিবেদককে বলেন, আমার শরীরের বয়স ৯৩ বছর, তবে মনের বয়স ২৭! তিনি এখনও স্কুলকে ঘিরে নানা স্বপ্ন দেখতেন। তিনি চাইতেন স্কুলটি সরকারি হোক। তার এলাকার শিক্ষার্থীরা আরো এগিয়ে যাক।

মোহাম্মদ আবদুল খালেক বলেছিলেন, আমি ক্লাস সেভেন পর্যন্ত পড়েছি। অভাবের পরিবারে বেশি দূর পড়তে পারিনি। স্কুলের জন্য জমি দেওয়ায় প্রথম দিকে গ্রামের ও পরিবারের লোকজন আমাকে পাগল বলতো। যেদিন আমার স্ত্রী স্কুল দেখে বললেন-একটি ভালো কাজ করেছেন সেদিন অনেক আনন্দ পেয়েছি।



বিডি প্রতিদিন/নাজমুল



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews